সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

চিতলমারীতে বিরোধপূর্ণ খাস জমিতে অবৈধভাবে করাত কল স্থাপন

বাগেরহাট প্রতিনিধি
  ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় বিরোধপূর্ণ সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে করাত কল স্থাপন করেছেন স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহন আলী বিশ্বাস। এতে চিতলমারী সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসসংলগ্ন সরকারি জমিতে স'মিল নির্মাণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

অভিযোগ উঠেছে, চিতলমারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বেদবতী মিস্ত্রি স'মিল নির্মাণের কাজ স্থগিত করে দেওয়ার পরেও, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সভাপতি। এদিকে করাত কল নির্মাণ কাজ বন্ধ করা ও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন রাজু আহম্মেদ নামের চিতলমারী উপজেলার এক বাসিন্দা।

ওই অভিযোগ থেকে জানা যায়, চিতলমারী উপজেলার ৮ নং কুরমনি মৌজায় হাট-বাজারের ফেরিপেরিভুক্ত খাস জমিতে মোহন আলী বিশ্বাস করাত কল (স'মিল)-সহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। খবর পেয়ে গত ৮ ডিসেম্বর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বেদবতী মিস্ত্রি সরেজমিনে গিয়ে কাজ স্থগিত করে দেন। কিন্তু এরপরেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় মোহন আলী বিশ্বাস স'মিল ও স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সীমানা প্রাচীরের সঙ্গেই টিনশেড স'মিলের স্থাপনা। স'মিলের জন্য কনক্রিটের ওপর লোহার অবকাঠামো রয়েছে। চারপাশে বেশকিছু কাঠ রয়েছে।

স'মিলের পাশের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল শেখ বলেন, এই জমিতে এক সময় বাঁশের হাট ছিল। কিন্তু মোহন আলী বিশ্বাস চেয়ারম্যান হওয়ার পর এই জায়গা দখল করে স'মিল নির্মাণ করেছেন। কয়েকদিন আগে কাজ বন্ধ ছিল, আবার দেখছি স'মিলের কাজ শুরু করেছে।

আবুল কালাম নামের অপর ব্যক্তি বলেন, তহসিল অফিস হওয়ার আগে থেকেই এখানে বাঁশের হাট ছিল। এখন তো দখল করে স'মিল বানানো হয়েছে। জায়গা খোলা থাকলে, সবার উপকার হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অভিযোগ প্রদানকারী রাজু আহমেদ বলেন, 'মোহন আলী বিশ্বাস জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে সরকারি জমিতে স'মিল নির্মাণ করছেন। বিভিন্ন সময় এই জমিসংক্রান্ত মামলায় তিনি হেরে গেছেন। তার সব ধরনের কাগজ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। বাজারের মূল্যবান সরকারি সম্পত্তি হওয়ায় জনস্বার্থে আমি এই অভিযোগ করেছি। আমি চাই, এই জায়গাটি সবার কল্যাণে ব্যবহৃত হোক।'

এ বিষয়ে মোহন আলী বিশ্বাস বলেন, 'আমার জমির সব কাগজপত্র ঠিক আছে। সরকার মামলা করে একাধিকবার হেরেছে। এখন সরকারি অফিসের সামনে মিল থাকায় ইউএনও স্থানান্তর করতে বলেছেন। আমি মিল বিক্রি করে দেব বলেছি। দুই মাস ধরে সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।'

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বেদবতী মিস্ত্রি জানান, 'আদালতে ও ভূমি আপিল বোর্ডে মামলা থাকার পরেও, মোহন আলী বিশ্বাস ওই জমিতে স'মিল নির্মাণের চেষ্টা করছিলেন। আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।'

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, 'মোহন আলী বিশ্বাসের অবকাঠামো কাজ আপাতত বন্ধ করে রাখতে বলা হয়েছে। যত দূর জানি তার করাত কলের লাইসেন্স নেই। সরকারি অফিসের কাছে কোনো অবস্থাতে করাত কল স্থাপন সম্ভব নয়। জায়গা জমিসংক্রান্ত বিষয়টি সহকারী কমিশনার ভূমি দেখছেন।'

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, 'কোনোভাবেই সরকারি জমি কেউ জবর দখল করতে পারবে না। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে