সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকারের প্রণোদনায় পাহাড়ে বাড়ছে আমদানিনির্ভর কাজুবাদাম চাষ

বান্দরবান প্রতিনিধি
  ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সরকারের প্রণোদনায় পাহাড়ে বাড়ছে আমদানিনির্ভর কাজুবাদাম চাষ
দেশে উৎপাদিত কাজুবাদাম বান্দরবানে প্রক্রিয়াজাত করছেন শ্রমিকরা -যাযাদি

এক সময় শতভাগ আমদানিনির্ভর কাজুবাদাম এখন প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে বান্দরবানে। প্রক্রিয়াজকৃত সে বাদাম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। 'কিষাণ ঘর এগ্রো' নামে একটি সংস্থা এ কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করছে। এতে চাষিরা স্থানীয়ভাবে কাজুবাদাম বিক্রি করে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে খুশি স্থানীয়রা।

বান্দরবান সদরের বালাঘাটা এলাকায় 'কিষাণ ঘর এগ্রো' কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকদের সবার গায়ে সাদা ও আকাশি রঙের ইউনিফর্ম, হাতে গস্নাভস ও মুখে মাস্ক। কেউ কাটিং করছেন, কেউ স্কুপিং করছেন আবার কেউ ফিলিং করছেন। দেখে যে কারোরই মনে হতে পারে ঢাকা কিংবা কোনো বড় শহরের বড় কোনো কারখানার চিত্র এটি। কিন্তু এটি পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত কারখানা 'কিষাণ ঘর এগ্রো' এর চিত্র। স্বাস্থ্য সচেতনা মেনে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে কাজুবাদাম।

1

জানা যায়, এক সময় শতভাগ আমদানিনির্ভর ছিল পুষ্টিগুণে ভরপুর এ কাজুবাদাম। এখন পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজুবাদাম সংগ্রহ করে স্থানীয় প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের দিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনা মেনে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এখানকার উৎপাদিত কাজুবাদাম আকারে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় এটি স্থানীয়দের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বান্দরবানের প্রক্রিয়াজাত কাজুবাদাম সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এদিকে এক সময় ব্যাবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে কাজুবাদামের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এ বাদাম চাষে আগ্রহ হারিয়েছিলেন পাহাড়ের চাষিরা। কিন্তু বর্তমানে সরকারের নানা প্রণোদনায় পাহাড়ে বাড়ছে দেশিসহ ভিয়েতনাম জাতের কাজুবাদাম চাষ। এছাড়াও জেলা শহরে প্রক্রিয়াজাত কারখানা স্থাপন হওয়ায় চাষিরা পাচ্ছে ন্যায্য মূল্য, পাশাপাশি কারখানায় কাজের সুযোগ হওয়ায় কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক বেকার যুবক যুবতীদের।

রুমা বটতলী পাড়ার কাজুবাদামচাষি উচিং থোয়াই মারমা জানান, দাম না থাকায় পাহাড়ের অনেক চাষি কাজুবাদামের গাছ কেটে অন্য ফলদ বাগান করেছে। কিন্তু কৃষি বিভাগের বিনামূল্যে চারা ও সারসহ নানা প্রণোদনার কারণে এর আবাদ বাড়ছে বান্দরবানে।

একই পাড়ার অরেকজন চাষি মংবুওয়ং মারমা জানান, আমার তিন একর দেশি জাতের কাজুবাদামের বাগান আছে। কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে ভিয়েতনামের উন্নত জাতের চারা এবং সার পেয়েছি। তিন একরের পাশাপাশি নতুন করে আমি আরও দুই একর আবাদ করেছি। এখন যেহেতু কাজুবাদামের দাম বেশি তাই বাগান সম্প্রসারণ করেছি।

এদিকে কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজকরণ কারখানা কিষাণ ঘর এগ্রোর নারী শ্রমিক তসলিমা জানান, ঘরের পাশে কারখানা হওয়ায় আমাদের জন্য খুব ভালো হয়েছে। এখানে কাজ করে যে বেতন পাই সেখান থেকে নিজেও খরচ করতে পারছি আবার মা বাবাকেও দিতে পারছি। এখানে আমার মতো আরও ২৫ থেকে ২৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।

কারখানার ব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম জানান, কারখানায় প্রতিমাসে ৪ মেট্রিকটন কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করা হয়। প্রক্রিয়াজাত করা কাজুবাদাম প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।

বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৫৫৬.৬৫ হেক্টর জমিতে আর উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৪৬০.৬ মেট্রিক টন। সম্প্রতি বান্দরবানে কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা চালু হওয়ায় নতুন আশা জাগিয়েছে চাষিদের।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এমএম শাহনেওয়াজ বলেন, পাহাড়ের মাটি কাজুবাদাম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সরকারের গৃহিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাহাড়ে কফি চাষের পাশাপাশি কাজুমবাদামের আবাদ বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। ভবিষ্যতে দেশের কাজুবাদামের চাহিদার ৫০ শতাংশ বান্দরবান থেকেই সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে