সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভেড়ামারা তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্র বন্ধের নির্দেশ

রক্ষণাবেক্ষণে গত দুই বছরে সরকারের গচ্চা প্রায় ১৫ কোটি টাকা
ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
  ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ভেড়ামারা তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্র বন্ধের নির্দেশ

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্র বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড। মেশিন মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় দ্রম্নত স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য কেন্দ্রটিতে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এখানে কর্মরত জনবল অন্য কেন্দ্রে বদলি করতে বলা হয়।

ভেড়ামারা বিদু্যৎ কেন্দ্রের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান রোববার বেলা ১১টার সময় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ডিজেলে চলা ৬০ মেগাওয়াট তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দু'টি ইউনিট বন্ধ করা হয় প্রায় দুই বছর আগে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করা হয়েছে অন্য বিদু্যৎ কেন্দ্রে। বাকি একটি ইউনিট সচল ছিল। অথচ কেন্দ্রটি রক্ষণাবেক্ষণে গত দুই বছরে সরকারের খরচ হয়ে গেছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বছরে গড়ে ব্যয় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। গত বুধবার বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ভেড়ামারা বিদু্যৎ কেন্দ্রের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, 'তিন নম্বর ইউনিটটি দ্রম্নত বন্ধের জন্য বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড আমাদের নির্দেশ দিয়েছে। আমি নিজেও ওই সভায় উপস্থিত ছিলাম। বর্তমানে ৭৫ জন কর্মরত রয়েছেন। তাদের বদলি করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যত দ্রম্নত সম্ভব বন্ধ করতে হবে। কেন্দ্রের জনবল অন্যত্র বদলি ও মেশিনটি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ, জরাজীর্ণ, অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এক নম্বর ইউনিট ও দুই নম্বর ইউনিট বন্ধ করা হয়। তিন নম্বর ইউনিট থেকে ২০২২ সালে বিদু্যৎ উৎপাদন বন্ধ করা হলেও মেশিনটি সচল রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে যে কোনো মুহূর্তে বিদু্যৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তবে এটি বন্ধ করে অকশন দিয়ে জায়গাটি ক্লিয়ার করতে হবে। এখানে ৮ মেগাওয়াটের সোলার প্যানেল (সোলার বিদু্যৎকেন্দ্র) বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিদু্যৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদু্যৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকলেও এর রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা এবং অন্যান্য ব্যয় হিসাবে প্রতি বছরই কয়েক কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে সরকারের। হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে ১৩ কোটি, ২০২১ সালে ১২ কোটি, ২০২২ সালে সাড়ে ৮ কোটি, ২০২৩ সালে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ১৯৭৬ সালের ২৭ এপ্রিল জার্মানির এজি কার্নিস কোম্পানির প্রযুক্তিতে একটি জিট ইউনিট নিয়ে প্রথম উৎপাদনে আসে ভেড়ামারার ঐতিহ্যবাহী তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রটি। একই বছর ২৮ জুলাই দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয়। সে সময় ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দু'টি ইউনিট থেকে মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন হতো। চাহিদার কারণে ১৯৮০ সালের ১৯ জানুয়ারি জাপানের হিটাসি কোম্পানির প্রযুক্তিতে ২০ মেগাওয়াটের আরেকটি ইউনিট চালু হয়। তখন মোট সক্ষমতা দাঁড়ায় ৬০ মেগাওয়াট। ইউনিটগুলোর মেয়াদকাল ধরা হয় ১৫ বছর। অথচ ১ ও ২ নম্বর ইউনিট ৪৬ বছর ধরে চলার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় ২০২২ সালে। আর ৩ নম্বর ইউনিটটি সচল আছে ৪৪ বছর ধরে।

২০১৯ সালে ঝুঁকিপূর্ণ বিদু্যৎকেন্দ্রগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সক্ষমতা কমে যাওয়া ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলোর তালিকায় পড়ে ভেড়ামারা ৬০ মেগাওয়াট তাপবিদু্যৎ কেন্দ্র। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ, জরাজীর্ণ ও ব্যয়বহুল দু'টি ইউনিট বন্ধ করে দেয় সরকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে