সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে ফটিকছড়ির ৬৪ বিদ্যালয়

ব্যাহত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে ফটিকছড়ির ৬৪ বিদ্যালয়

বিদ্যালয়ের পাঠদানসহ শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার নেতৃত্ব দেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু বছরের পর বছর প্রধান শিক্ষকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটি শূন্য রেখেই চলছে ফটিকছড়ি উপজেলার ৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সহকারী শিক্ষক দিয়েই করানো হচ্ছে প্রধান শিক্ষকের যত কাজ। দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক শূন্যতায় বিদ্যালয়গুলো অনেকটাই অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদগুলো অতি দ্রম্নত পূরণ করা দরকার বলে মনে করছেন শিক্ষক, অভিভাবক এবং সচেতন মহল।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে, উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়ন ও দু'টি পৌরসভা মিলিয়ে মোট ২২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার মধ্যে ১৬৫টিতে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আছেন। তার মধ্যে পূর্ণ প্রধান শিক্ষক পদোন্নতিপ্রাপ্তসহ রয়েছেন ১০১ জন এবং চলমান প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন ৬৪ জন। এছাড়া ৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। অন্যদিকে জাতীয়করণের ১৩ জন প্রধান শিক্ষকের পদ মর্যাদার যোগ্যতা নিয়ে মামলা চলমান আছে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল হাসান চৌধুরী বলেন- ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয়গুলোতে যারা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের সহকারী শিক্ষকের গ্রেড দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় প্রধান শিক্ষকের মর্যাদা এবং গ্রেডের জন্য তারা মামলা করেন, যা এখনো চলছে। তবে ওই সময়ে অনেকের যোগ্যতা ছিল আবার অনেকের ঘাটতি ছিল।

অন্যদিকে ফটিকছড়িতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষকদের পদ আছে ১ হাজার ৩২৭টির। এখানেও শূন্য পদ আছে ১১০টি। প্রাথমিক শিক্ষায় প্রতিটি শিক্ষকদের জন্য গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজিসহ বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বেশ কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক শূন্যতার কারণে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান ধরে রাখা সম্ভব হয় না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ, শ্রেণিকক্ষ পর্যবেক্ষণ, সভা-সেমিনারে অংশ নেওয়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়।

এদিকে ফটিকছড়ি উপজেলায় ২০১৩ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার পর গত এক দশকে মাত্র ৪ জন প্রধান শিক্ষককে নন-ক্যাডার থেকে সরাসরি প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এদের মধ্যে দু'জন চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন এবং একজন ক্যাডার পদে জয়েন করবেন, বাকি প্রধান শিক্ষক থাকবে নন-ক্যাডার থেকে মাত্র একজন।

এ কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ প্রায় এক দশকেও আর পূরণ হয়নি। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগ ওইসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ চালানোর জন্য জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা করছে।

দক্ষিণ রাঙ্গামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি একরামুল হক বলেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব পালন করেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধানরা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান কিছু সময়ের জন্য হয়, কিন্তু এখন আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়েই স্কুল চলছে। প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা নিয়ম মেনে চলেন না। আরও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। প্রধান শিক্ষকের জন্য আমি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা হয়নি। উপজেলার যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে, সেগুলোতে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া জরুরি।

ফটিকছড়ি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাসানুল কবির বলেন, সহকারী শিক্ষকদের দ্বারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করাতে হলে কিছুটা সমস্যা তো থেকেই যায়। ফটিকছড়ি উপজেলায় মোট ২২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬৫টিতে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আছেন। তার মধ্যে ৬৪ জন চলমান দায়িত্বে। অন্য ৬৪টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য। ১৩ জন প্রধান শিক্ষকের পদমর্যাদা নিয়ে মামলা চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে