সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শ্রীপুরে বাঁধ রক্ষার নামে গড়াই নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন

বিলীন ১৫ পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই ঝুঁকিতে আরও অর্ধশত পরিবার
শ্রীপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি
  ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মাগুরার শ্রীপুরে গড়াই নদীর বেড়িবাঁধের কোল ঘেষে বালু উত্তোলন করায় ভূমি ধসের আশঙ্কায় বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা -যাযাদি

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার গঙ্গারামখালী গ্রামের গড়াই নদী পাড়ের মালোপাড়া ও বিশ্বাসপাড়া নামক এলাকায় গড়াই নদীর ভাঙনরোধে বাঁধরক্ষার নামে বেরিবাঁধের কোল ঘেঁষে ড্রেজার দিয়ে গভীর করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে কয়েকদিনের ব্যবধানে ওই এলাকার ১৫টি পরিবারের বেশকিছু ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা, ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও ভূমি ধসের আশঙ্কায় অর্ধশত পরিবার চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

গৃহহারা পরিবারগুলোর মধ্যে সর্বস্ব হারিয়ে কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ বা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে অধিকাংশ বাড়ি-ঘর এবং আঙিনা মাঝামাঝি দেখা দিয়েছে ভূমি ধসের বড় ধরনের ফাটল। যে কারণে ওইসব পরিবারের কেউ কেউ তাদের আসবাবপত্র এবং ঘরের চালা ও বেড়া খুলে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে। সৃষ্ট ঘটনায় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন প্রতিকারের জন্য আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে কুমারেশ চক্রবর্তীসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ভাঙন রোধে বাঁধরক্ষা ও সংস্কারের জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মাগুরার তত্ত্বাবধানে 'আলিয়ার রহমান' ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২৩-২৪ অর্থ-বছরের নদী প্রশাসন প্রকল্পের আওতায় গঙ্গারামখালী এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করে। জিও ব্যাগে বালু সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ নদীর দূরবর্তী এলাকার চর থেকে বালু সংগ্রহের নির্দেশনা দিলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভাঙন কবলিত এলাকার কাছ থেকে বেশি গভীর করে বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করে। এর ফলে নদীর তলদেশে গভীরতা সৃষ্টি হওয়ায় নদী পাড়ের বেড়িবাঁধসহ ওই এলাকার বেশকিছু বাড়ি-ঘর ও গাছ-পালা চোখের পলকে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে বিদু্যৎ চক্রবর্তী, দিলীপ, শুকুমার, সুবোধ, মধুসূদন, নারায়ন, সঞ্জিত, বৈকুণ্ঠ, নিখিল, সরজিৎ ও নীরোদ উলেস্নখযোগ্য।

অন্যদিকে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অমরেশ, বিনয়, উজ্জ্বল, কালাচাঁদ, অমল, রবি, শ্যামল, সুবোল, তপন, গোপাল, কৃষ্ণ, অসিত, মনজিৎ, বিশ্বজিৎ, শৈলেন, সাধন, অচিন্ত্য, সুভাষ, রমেশ, শ্রীকান্ত, আনন্দ, হারাণসহ ৫০টি পরিবার।

এত কাছ থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে এলাকাবাসী একাধিকবার নিষেধ করলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। পরে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নির্দেশে শ্রীপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন এবং বালু উত্তোলনে নিষেজ্ঞা জারি করেন। এরপরেও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পুনরায় বালু উত্তোলন শুরু করে।

অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলন করায় একপর্যায়ে ব্যাপকহারে ভূমি ধস দেখা দিলে গত শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সংস্কার ও পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এরশাদ বলেন, তারা বাঁধের কাজের জন্য বালু উত্তোলন করেছেন। তবে দূরের চর থেকে বালু তুলতে তাদের ড্রেজারের সক্ষমতা ছিল না। তাই কিছুটা কাছ থেকে বালু তোলা হয়েছে। তবে এমন দৃশ্য ঘটবে সেটা তারা আগে অনুভব করতে পারেননি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, মাগুরার নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, 'সংবাদ পেয়ে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। যত দ্রম্নত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেলে সংস্কার করা হবে। এছাড়াও মন্ত্রণালয়ে লিখিত চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন দিলে স্থায়ীভাবে এর একটি সমাধান করা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে