সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভূঞাপুরে নদীতে বাঁধ দিয়ে চর কাটার মহোৎসব

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু -যাযাদি

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে জেগে ওঠা চর কাটার মহোৎসব শুরু হয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙনের আশঙ্কা করছেন নদী পাড়ের মানুষজন। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীরা জেগে ওঠা চর কেটে বিক্রি করলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।

সরেজমিনে উপজেলার অর্জূনা ইউনিয়নের জগৎপুরা, কুঠিবয়ড়া, দক্ষিণ জগৎপুরা ও নলীন এলাকায় যমুনা নদী থেকে মাটি কাটার যন্ত্র (ভেকু) বসিয়ে দিন-রাত আবাদি জমিসহ চরের বালু কাটা হচ্ছে। তবে এই চর কাটার মহোৎসব বেশি চলে রাতে। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ১০ পয়েন্ট থেকে চর কাটা হচ্ছে। শুধু তাই নয় নলীন হতে কুঠিবয়ড়া পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ঘেঁষে কাটা হচ্ছে বালু। এই বালু পরবর্তীতে বাঁধ কেটে রাস্তা বানিয়ে সেখান দিয়ে বালুবাহী ট্রাক চলাচল করছে।

জানা গেছে, উপজেলার কুঠিবয়ড়া, জগৎপুরা হতে গোপালপুরের নলীন পর্যন্ত যমুনা নদীর ১০টি পয়েন্ট থেকে প্রভাবশালীরা কনসোডিয়াম (পালাভিত্তিক) করে বাঁধের কাছ থেকে বালু মাটি কেটে বিক্রি করছে। জমির মালিকদের নামমাত্র টাকা দিয়ে ফসলি জমিও কাটা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এসব বালুর ঘাট তৈরি করে বিক্রি করছে। প্রতিদিন শত শত ট্রাকযোগে বালু মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।

জগৎপুরা গ্রামের মঞ্জুর আশরাফ জমাদ্দার বলেন, জোরপূর্বক যমুনার চর কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। কেউ যদি জমি দিতে না চায় তাহলে তার জমি জোর করে কাটা হয়। প্রতি বছরই নদীতে চর জাগলেও বালু খেকোদের কারণে সেটা থাকেই না উল্টো বর্ষায় আরও ভাঙনের সৃষ্টি হয়। প্রশাসনও জড়িত বালু উত্তোলন কাজে।

অর্জুনার এলাকার মোফাজ্জল হোসেন সরকার বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনে ভূঞাপুর-তারাকান্দি বাঁধ হুমকিতে পড়েছে। এছাড়া ওই সড়কের পাড় কেটে ট্রাক চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।

দক্ষিণ জগৎপুরা গ্রামের ছানোয়ার বলেন, প্রশাসন যেখানে নীরব সেখানে অভিযোগ দিয়ে নিজের ক্ষতি ছাড়া কিছুই হবে না। এখানকার কাঁচা টাকা সবাইকে ভাগ দিয়ে প্রভাবশালীরা নদীর চর কাটছে।

বালু উত্তোলনকারী শহীদ খান বলেন, 'উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তোতার নেতৃত্বে সবগুলো ঘাট। তিনিই সব দেখভাল করেন। আমরা শুধু দেখাশোনার দায়িত্বে আছি।'

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তোতা বলেন, 'এখন আর বালুর ঘাটের দায়িত্বে আমি নেই। যারা নাম বলছে তারাই বালু উত্তোলন করছে।'

অর্জুনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব বলেন, 'যারা নদীর চর কেটে বিক্রি করছেন তারা প্রভাবশালী। বিষয়টি বন্ধে বার বার উপজেলা মিটিংয়ে কথা বলেছি, কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না।'

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়। একবার অভিযান হওয়ার পর কয়েকদিন বন্ধ থাকে বালু উত্তোলন। কিন্তু পরে আবার চালু করা হয়। উপজেলা প্রশাসনকে এই বিষয়টি বারবার জানানো হয়েছে যাতে বারবার অভিযান পরিচালনা করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযানে গিয়ে কিছু পাওয়া যায় না। তারা প্রশাসনের অগোচরে এসব করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে