সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

পলাশে কৃষিজমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি
  ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
নরসিংদীর পলাশে ইটভাটার জন্য নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি -যাযাদি

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নে নির্বিচারে কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, স্থানীয় নেতাকর্মীরা জোরপূর্বক মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন।

ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের নামমাত্র মূল্য দিয়ে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। আবার অনেককে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে জমির মাটি কেটে নেওয়া হয়। এসব মাটি সরাসরি চলে যাচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন ইটভাটায়। প্রশাসনের চোখের সামনে মাটি সন্ত্রাস হলেও ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জড়িত বলে ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। কৃষকদের দাবি এসব মাটি সন্ত্রাস বন্ধে উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না স্থানীয় প্রশাসন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলার মাসিক মিটিংয়ে বলেও লাভ হচ্ছে না। ফলে ফসলি জমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া তিন ফসলি জমিকেও পুকুরে পরিণত করছে মাটি সন্ত্রাসীরা। অন্যদিকে অব্যাহত মাটিকাটা ও মাটি অন্যত্র নেওয়ার কারণে ব্যবহৃত ট্রলির বেপরোয়া চলাচলে গ্রামীণ সড়কগুলো ধুলাবালি ও কাঁদামাটিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকার মানুষ। তাছাড়া মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। অব্যাহত ধূলাবালির কারণে এলাকার মানুষ শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

সরেজমিন ডাঙ্গা ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষি জমির মাটি এক্সেভেটর (ভেকুমেশিন) বসিয়ে ২৫ থেকে ৩০ ফুট গর্ত করে কেটে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। কৃষকদের অভিযোগ রয়েছে এসব মাটি জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি খেকোরা।

বোরহান মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, জয়নগর গ্রামে আমার প্রায় ৪ বিঘা তিন ফসলি কৃষিজমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি। তারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় একাধিকবার বাধা দিলেও কোনো লাভ হয়নি। এমনকি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। উপজেলা প্রশাসন থেকে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি তাই গত মঙ্গলবার নতুন নির্বাহী অফিসার বরাবর এর প্রতিকার চেয়ে আবারও লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেলাম।'

একই অভিযোগ করেন শরিফ মিয়া নামে অপর এক কৃষক। তিনি বলেন, 'তারা শুধু কৃষিজমির মাটিই কেটে নিয়ে যাচ্ছে এমন নয়। তারা আমার দাদি মসজিদের জন্য যে জমি দান করে গেছে, ওই জমির মাটিও কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

অভিযুক্তরা বলেন, এখান থেকে কোনো কৃষকের জমির মাটি কাটা হচ্ছে না। এখান থেকে যেসব মাটি কাটা হচ্ছে ওইসব জমি তাদের নিজেদের বলে দাবি করেন তারা।

জানতে চাইলে ডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান সাবের উল হাই বলেন, ডাঙ্গা ইউনিয়নে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটার কারণেই ফসলি জমির পাশাপাশি রাস্তাঘাটগুলোও ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। আর কৃষকরাও তাদের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে। সরকারের অবকাঠামো ও ডাঙ্গা ইউনিয়নের পরিবেশ রক্ষার্থে এসব বিষয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বলেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া কৃষকদের জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নেওয়ার বিষয়টি অবগত নন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে ইউএনও মোহাম্মদ শহীদুলস্নাহ বলেন, কৃষকের জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নেওয়া দন্ডনীয় অপরাধ। কৃষকরা মামলা করলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে