সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
৪২ কেজিতে মণ হওয়ায় হতাশ কৃষক

পুঠিয়ায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা, ভালো দামে খুশি চাষিরা

পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি
  ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
রাজশাহীর পুঠিয়ায় আবাদ করা পেঁয়াজ ক্ষেত -যাযাদি

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার চাষিরা পেঁয়াজ চাষে মহাব্যস্ত। গত মৌসুমের শেষ দিকে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা এবার চারা থেকে লাগানো পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন। যদিও সার, কীটনাশক ও মজুরির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তারপরও লাগানো পেঁয়াজের পরিচর্যা করে ভালো ফলন পাওয়ার আশায় কৃষকের মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রতিযোগিতা। পেঁয়াজ গাছ কালো সুন্দর ও মোটা করার জন্য অতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রে করে পালস্না দিয়ে পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। 

গতবারের তুলনায় এবার উপজেলায় ১১৯ হেক্টর জমিতে চারা থেকে লাগানো পেঁয়াজের চাষ কম হয়েছে। চাষিরা বলছেন, পেঁয়াজ আমদানি না হলে তারা এবারও লাভের মুখ দেখবেন। তবে এই উপজেলায় আবাদ কম হলেও অন্য জেলায় চাষ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন বেশি হবে। এতে ইন্ডিয়া থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলে দাম কমে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। এতে করে কৃষকের ১ বিঘা পেঁয়াজ উৎপাদন করতে যে টাকা খরচ হয়েছে আর এই সময় যদি পেঁয়াজ আমদানি করা হয় তাহলে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বেন। 

গত মৌসুমের শেষ দিকে লাগল পেঁয়াজে এবং এবার কন্দ, মূলকাটা বা ঢ্যামনা পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হওয়ায় চাষিরা চারা থেকে লাগানো পেঁয়াজ বেশি করেছেন। যারা গতবার পেঁয়াজ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন; তারাও এবার লাভের আশায় পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। কৃষি শ্রমিকরা সূর্যোদয়ের আগেই মাঠে হাজির হচ্ছেন। সাত-সকালেই শ্রমিকদের পদচারণায় মুখর গ্রামের সড়ক কিংবা মেঠোপথ। সারাদিন কাজ শেষে বাড়ি ফেরেন সন্ধ্যার আগে। কৃষি শ্রমিকরা ভালো মজুরিও পাচ্ছেন।

পুঠিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, উপজেলায় এ বছর ৪ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৭ হাজার ০৯৫ মেট্রিক টন। গত বছর ৪ হাজার ৬৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৪ হাজার ৪৬৪ মেট্রিক টন।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুলস্নাহ, সোহেল রানা এবং শাহেদা খাতুন জানান, চাষিরা দুই পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ করেন। একটি কন্দ (মূলকাটা বা ঢ্যামনা) ও অন্যটি বীজ বপন করে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে চারা লাগানো পদ্ধতি। মূলকাটা বা ঢ্যামনা পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ও চারা লাগানো পদ্ধতিতে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। ঢ্যামনা পদ্ধতিতে আবাদ করা নতুন পেঁয়াজ ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে হাটে উঠতে শুরু করে। আর আলের লাগানো পদ্ধতিতে চাষ করা পেঁয়াজ হাটে ওঠে মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে এপ্রিল মাস পর্যন্ত।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বিলের মাঠে গিয়ে দেখা যায় এলাহি কান্ড। এলাকার শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সি মানুষ পেঁয়াজের মাঠে। বাড়ির নারীরাও কাজে সহায়তা করছেন। পেঁয়াজ চাষিরা জানান, এ সময় কৃষি শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে। সূর্য ওঠার আগেই মাঠে হাজির হওয়া শ্রমিকরা জানান, তারা প্রতিদিন পেঁয়াজ লাগানোর সময় ৭০০ টাকা মজুরি পেয়েছেন এবং অন্য সময় ৫০০ টাকা মজুরি পান। 

দেশের এবং জেলার অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে শনিবার ও ঝলমলিয়া সোমবার হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি মণ ঢ্যামনা ও একটু দাম ভালো পাওয়ার আশায় বোনা কম পুক্ত পেঁয়াজ তুলা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার পাচঁশ' টাকা দরে। চাষিরা জানান, আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে নতুন আলের বা হালি পেঁয়াজ হাটে উঠতে শুরু করবে। বর্তমানে বোনা পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় বেশি লাভের আশায় অপরিপক্ব  পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রি করছেন।

উপজেলার ছান্দাবাড়ী গ্রামের চাষি আব্দুল মতিন, চামটা এসকে বাদল গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মানিক জানান, চারার দাম, জমি চাষ, সেচ, সার, নিড়ানি, শ্রমিক ও উত্তোলনসহ সব খরচ মিলিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। পাশাপাশি যারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে আবাদ করেন; তাদের বিঘাপ্রতি আরও ৯-১১ হাজার টাকা লিজমানি জমি মালিককে দিতে হয়। এজন্য তাদের খরচ হয় আরও বেশি। এছাড়া অনেক ছোট-বড় চাষি চড়া সুদে বিভিন্ন এনজিও থেকে কিস্তিতে ঋণ নিয়েও পেঁয়াজ চাষ করেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার স্মৃতি রানী সরকার জানান, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে উৎপাদনও বাড়ছে। উন্নত জাতও উদ্ভাবিত হয়েছে। গত মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা এবার উজ্জীবিত। রবি মৌসুমের পেঁয়াজের পরিচর্যা প্রায় শেষের দিকেই। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে আছে এবং শেষ পর্যন্ত যদি ভালো থাকে তাহলে কৃষকরা ভালো ফলন পেতে পারে।

উপজেলায় পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ফসল ৪২ কেজিতে মণ বিক্রি হচ্ছে এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম নুর হোসেন নির্ঝরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এই প্রথম জানলাম ৪২ কেজিতে মণ। যারা ভুক্তভোগী তাদের দিয়ে আমার কাছে একটা লিখিত অভিযোগ পাঠান। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি এক সপ্তাহ তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে