মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভাঙ্গায় বাঙ্গির বাম্পার ফলন

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
  ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ফরিদপুরের ভাঙ্গার একটি ক্ষেতের পাশে স্তূপ করে রাখা বাঙ্গি -যাযাদি

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাম্পার ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় বাঙ্গি চাষিদের মুখে আনন্দের হাসি দেখা গেছে। বাঙ্গি চাষ করে দারুন আনন্দিত কৃষকেরা। পবিত্র রমজান মাসের ইফতারিতে বাঙ্গির কদর বেড়ে যাওয়ায় দামও পাচ্ছেন ভালো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং মাঠে ব্যাপক পরিমাণ বাঙ্গির উৎপাদন হওয়ায় তারা এ বছর খুব খুশি।

গত বছর শিলাবৃষ্টির কারণে তাদের বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছিল। প্রতিদিন তারা প্রচুর পরিমাণ বাঙ্গি বিক্রি করেন। তাদের ক্ষেত থেকেই বাঙ্গি নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা।

ঢাকা, মাদারীপুর এবং ফরিদপুরের ব্যবসায়ীরা বেশি ভিড় জমান এসব খেতে। ভাঙ্গা উপজেলার চুমুরদি, আজিমনগর ও কাউলীবেড়া ইউনিয়নে এ বছর দেড়শো বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চুমুরদি ইউনিয়নের পূর্ব সদরদী গ্রামের দুই পার্শ্বে প্রায় ৩০ বিঘা জায়গায় বাঙ্গি চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। নিজেদের চেষ্টায় এবং কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তারা প্রতি বছর বাঙ্গি চাষের জমির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

স্থানীয় কৃষক জামাল ফকির (৪৫) বলেন, 'প্রতি বিঘা বাঙ্গি জমিতে পাঁচ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। আমি দেড় বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছি। বিক্রি শুরু করেছি। আশা করি দুই লাখ টাকার মতো আয় হবে।'

বাঙ্গি চাষি মাসুদ শেখ বলেন, 'এ বছর বাঙ্গি নষ্ট হয়নি। আবহাওয়া ভালো রয়েছে। একই এলাকার কৃষক বেলায়েত ফকির তিন বিঘা, মাসুদ সেখ সাড়ে তিন বিঘা, সামাদ সেখ দুই বিঘা, দেলোয়ার খালাসি দুই বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন।'

বাঙ্গি চাষি দেলোয়ার খালাসি বলেন, 'আমি দুই বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছি। এ পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করেছি।'

তিনি বলেন, 'ভাঙ্গার বাঙ্গি খেতে সুস্বাদু এবং দাম কম থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঙ্গি নিতে পাইকাররা এখানে ছুটে আসেন। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্ষেত থেকে বাঙ্গি নিয়ে যান পাইকাররা। তারা কেউ ট্রাক নিয়ে আসেন, কেউবা আনেন পিকআপ। কাছাকাছি যারা, তারা ভ্যান দিয়ে আসেন।' বাঙ্গি চাষ কার্তিক মাসের শেষের দিকে এবং অঘ্রাণ মাসের প্রথমদিকে শুরু হয়। বাঙ্গি পাকে চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে। এ বছর পবিত্র রমজান মাস থাকায় বাঙ্গির চাহিদা বেড়েছে এবং সঙ্গে বেড়েছে দাম।

ফরিদপুরের সালথা উপজেলা থেকে বাঙ্গি কিনতে এসেছেন নিটুল বিশ্বাস (৩৫)। তিনি বলেন, 'আমি কয়েক দিন ধরে ভাঙ্গা থেকে বাঙ্গি কিনি। ভাঙ্গার বাঙ্গির স্বাদ কাস্টমারের মুখে মুখে। তারা কেনার সময় ভাঙ্গার বাঙ্গি খোজেন।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা একশত পিস হিসাবে বাঙ্গি কিনে থাকি। ছয়-সাত কেজি ওজনের একশত বাঙ্গি আমরা ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায় কিনে থাকি। মাঝারি ধরনের একশত বাঙ্গি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা, তার চেয়ে ছোট বাঙ্গি ছয় থেকে সাত হাজার টাকা।'

মাদারীপুরের কবিরাজপুর থেকে বাঙ্গি কিনতে এসেছেন বাঙ্গি ব্যবসায়ী পলাশ হোসেন। তিনি বলেন,' আমি সপ্তাহে দুই দিন ভাঙ্গা থেকে বাঙ্গি কিনে থাকি। এখানকার বাঙ্গির স্বাদ ভালো। ক্ষেত থেকে কিনি বলে যাচাই-বাছাই করে ভালো বাঙ্গি কিনতে পারি। দাম ও অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কম।'

এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জীবাংশু দাস বলেন, ভাঙ্গা উপজেলায় এ বছর ১৫০ বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে। চুমুরদীর পাশাপাশি আজিমনগর ও কাউলীবেড়া ইউনিয়নে এ ফসলটির চাষ করা হয়েছে। অনুকুল পরিবেশ পাওয়ায় এ বছর উৎপাদন ভালো হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক পরামর্শ নিয়ে মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কমকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ বছর ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতেও আরও বেশি সংখ্যক কৃষকেরা বাঙ্গি চাষ করবে বলে প্রত্যাশা করি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে