বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে স্যালাইন দেওয়ার পর দুই প্রসূতির মৃতু্যর ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা

রাজশাহী অফিস
  ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
রাজশাহীতে স্যালাইন দেওয়ার পর দুই প্রসূতির মৃতু্যর ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা

রাজশাহীতে স্যালাইন দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে দুই নারীর মৃতু্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের আগে সম্প্র্রতি রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের এই স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। এরপর দ্রম্নত সময়ের মধ্যে তাদের মৃতু্য হয়। স্যালাইন দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়া দুই নারী এখনো ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রয়েছেন।

একইভাবে চারজন নারীর মৃতু্যর কথা শোনা গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দু'জনের কথা স্বীকার করেছে। তবে ঘটনা ধামাচাপা দিতে মারা যাওয়া নারীদের স্বজনদের 'ম্যানেজ' করার চেষ্টা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে ওই স্যালাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে বিষয়টি জেলার সিভিল সার্জন কিংবা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ে জানায়নি বেসরকারি এই হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ।

দুই সপ্তাহ আগে এ ঘটনা ঘটলে শুক্রবার তা প্রকাশ পায়। এরপর বিষয়টি নিয়ে তোড়পাড় সৃষ্টি হয় স্বাস্থ্য বিভাগে। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবির বলেন, 'স্বাস্থ্য বিভাগকে না জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্যায় করেছে। এটা খুবই স্পর্শকাতর ব্যাপার। আমরা জানতে পারলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারতাম। তারা কেন আমাদের কাছে এটা লুকিয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিষয়টি শোনার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারা দু'জন মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। সেই সঙ্গে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। শনিবার তারা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে চেয়েছে। সেটি পাওয়ার পর আমরা বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।'

হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্র্রতি সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার আগে আইভি স্যালাইন দেওয়ার পর চারজন নারীর একই রকম শারীরিক সমস্যা শুরু হয়। অস্ত্রোপচারের পর ধীরে ধীরে তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তাদের কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। হার্টে বস্নক দেখা দেয়। এতে দুই নারীর মৃতু্য হয়। বর্তমানে দু'জন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তাদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা হাসপাতালটির পরিচালক ডা. সানাউল হক মিয়াকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে হাসপাতালের ইনচার্জ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ঘটনা তদন্তে কমিটি হয়েছে। তারা কাজ করছেন।

মারা যাওয়া নারীদের মধ্যে একজন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আনুলিয়া গ্রামের আফজাল হোসেনের স্ত্রী আসমা খাতুন (৩৮)। অপর নারীর বাড়ি নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলায়। তবে ওই নারীর স্বামী তার এবং স্ত্রীর নাম-পরিচয় জানাতে চাননি।

মৃত আসমার স্বামী আফজাল হোসেন জানান, আসমা প্রথমবার গর্ভধারণ করেছিলেন। একবছর ধরে প্রতিমাসেই তিনি ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. সুলতানা নাজনীন রিতার কাছে চেকআপ করাতেন। সন্তান প্রসবের সময় হলে গত ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় স্ত্রীকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করেন। ভর্তির পর তার স্ত্রীকে একটি স্যালাইন দেওয়া হয়। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার স্ত্রী পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ধীরে ধীরে তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ভোর রাত ৪টার দিকে চিকিৎসকরা জানায় আসমার দু'টি কিডনিই অকেজো হয়ে পড়েছে। হার্টের কার্যক্ষমতাও কমে গেছে। আফজাল হোসেন তখন বলেন, গর্ভধারণের পুরোটা সময়ই তিনি মাসে মাসে স্ত্রীকে চেকআপ করিয়েছেন। তখন কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। হঠাৎ করে এখন এত সমস্যা কেন? চিকিৎসকরা তখন জানান, এটা স্যালাইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

আফজাল হোসেন বলেন, রাত সোয়া ৪টার দিকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব লোক ও অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে আসমাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ১৫ মিনিট পর আসমা মারা যান।

আফজাল জানান, আসমার মৃতু্যর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মোটা টাকার বিনিময়ে আপস করার প্রস্তাব দেয়। তবে তিনি আপস করতে চান না। তিনি স্ত্রীর অপমৃতু্যর বিচার চান। এ নিয়ে তিনি মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।

ঘটনা তদন্তে গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান হাসপাতালটির সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, 'স্যালাইন দেওয়ার পর কয়েকজন রোগীর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করছি। ওই স্যালাইন আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।'

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মো. ফারুক বলেন, 'হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছু জানায়নি। ইতোমধ্যে আমরা সব তথ্য চেয়েছি হাসপাতাল থেকে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। হাসপাতালের গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে