বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

হারভেস্টার নিয়ে অস্বস্তি ও শ্রমিক সংকটে দিশেহারা হাওড়ের কৃষক

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
হারভেস্টার নিয়ে অস্বস্তি ও শ্রমিক সংকটে দিশেহারা হাওড়ের কৃষক

কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে স্বস্তিতে হাওড়ে বোরো ধান কাটলেও এবার হারভেস্টার নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন হাওড় পাড়ের কৃষকরা। বেশ কয়েক বছর শ্রমিকের চিন্তা না করলেও এবার শ্রমিক সংকট বেশ ভোগাচ্ছে তাদের। ফসলের জমিতে কাদা থাকার কারণে এ বছর কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে হাওড়ের পুরো ধান কাটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই ধান কাটা শ্রমিকের জন্য হন্য হয়ে ঘুরছেন। অনেকেই কিছু শ্রমিক পেয়েছেন, অনেকেই শ্রমিক না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন।

এ অবস্থায় কি করবেন তা নির্ধারণ করতে পারেছেন না। আবহাওয়া বর্তমানে অনুকূলে রয়েছে। এর মধ্যে যদি আবহাওয়া প্রতিকূলে যায়, বৃষ্টি বাদল হয় তাহলে জমিতে আরও বেশি পানি জমবে। সেই সঙ্গে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটায় সংশয় আরও বাড়বেই।

গোবিন্দ শ্রী গ্রামের শিক্ষক সঞ্জয় কুমার দে উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহেবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি শনির হাওড়ে কিছু বোরো জমি চাষাবাদ করেছেন। চলতি বছর তিনি ৪ একর জমিতে বোর ধান রোপণ করেন। তার জমিগুলো হাওড়ের একটু নিচের দিকে এবং জমির মাটি অপেক্ষাকৃত কাদামাটিযুক্ত। এ মাটিতে এ বছর হারভেস্টর চলবে না বুঝতে পেরে গত পনেরো দিনে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ-খবর নিয়ে কিছু ধান কাটা শ্রমিক পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি শ্রমিক দিয়ে জমির ধান কাটছেন। এ কারণে সময় একটু বেশি লাগছে। কিন্তু এ ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই বলে তিনি জানান।

হাওড়ে চলতি বছর ফেব্রম্নয়ারি ও মার্চ মাসে বেশ কয়েক দফা বৃষ্টি হয়। সে সময় থেকেই জমিগুলোতে পানি আটকে মাটি নরম হয়ে যায়। নরম মাটিতে হারভেস্টার চালালে মাটিতে দেবে যায় হারভেস্টার। ইতোমধ্যে শনির হাওড়ের বীর নগর গ্রামের সামনে হাওড়ে ধান কাটা অবস্থায় বেশ কয়েকটি হারভেস্টার মাটিতে দেবে যায়। দেবে যাওয়া মেশিনগুলোর একটির মালিক জয়নগর গ্রামের মোহাম্মদ আলী। তিনি জানান, বীরনগর হাওড় এলাকার জমিগুলোর মাটি অনেকটা নরম। ধান কাটতে গিয়ে তার হারভেস্টার জমিতে দেবে যায়। পরে তিনি অনেক কষ্টে তার হারভেস্টার সেখান থেকে তোলেন। বর্তমানে শনির হাওড়ের মধ্য তাহিরপুর এলাকার হাওড়ে ধান কাটছেন।

মধ্য তাহিরপুর গ্রামের হারভেস্টার মালিক আব্দুল মিয়া গত বছর সরকারি প্রণোদনায় একটি হারভেস্টার নিয়েছেন। তিনি জানান, গত বছর শনি হাওড়সহ কয়েকটি বড় হাওড়ের ফসলি জমির মাটি শক্ত থাকায় পুরো হাওড়ে ধান কাটতে কোনো সমস্যা হয়নি। এ বছর হাওড়ের উপরাংশের (শুরুর দিকে) কিছু জমি ছাড়া নিচের জমির ফসল কাটতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে হারভেস্টার মালিকদের।

তাহিরপুর সদর ইউনয়িন পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব আলী বলেন, কয়েকদিন হলো হাওড়ে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু অনেক জমিতে হারভেস্টার দিয়ে ধান না কাটতে পারায় শ্রমিক সংকট বাড়ছে। বৃষ্টি হলে সে সংকট আরও বাড়বে।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি অফিসার হাসান-উদ-দৌলা বলেন, হাওড়ের নিচু জমিগুলোর মাটি নরম থাকার কারণে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। চলতি বছর তাহিরপুর উপজেলার ২৩টি ছোট-বড় হাওড়ের ১৭ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে