শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ধানের নয়, বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদন

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ধানের নয়, বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদন

ধানের নয়, বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদন করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষক সাঞ্জু রায়।

এ চাল উৎপাদন ও মানুষের খাদ্য হিসেবে বৈজ্ঞানিক কোনো স্বীকৃতি বা গবেষণায় কোনো তথ্য না থাকলেও, বাঁশের ফুল থেকে উৎপাদিত চালের ভাত খিচুড়ি তৈরি করে খাওয়া শুরু করেছেন, চাল উৎপাদনকারী কৃষক সাঞ্জু রায়সহ ওই এলাকার অনেক পরিবার। সেই চাল খাওয়ার জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। অনেক পরিবার কৌতূহল বশত কিনছেন সেই চাল।

সাঞ্জু রায়সহ ওই গ্রামের অনেকে বলছেন, বাঁশের ফুল থেকে উৎপাদিত চালের ভাত, খিচুড়ি, আটা খেয়ে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না, বরং বেশ সুস্বাদুও বটে।

বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদনকারী সাঞ্জু রায় উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামে মিলন রায়ের ছেলে।

সাঞ্জু রায় বলেন, বাঁশ ফুলের মাধ্যমে উৎপাদিত এই চাল দিয়ে ভাত, খিচুড়ি, পায়েশসহ আটা তৈরি করে তা দিয়ে পিঠা এবং রুটি বানিয়ে খাওয়া হচ্ছে। যা অত্যন্ত সুস্বাদু। উৎপাদিত এই চাল ৪০ টাকা কেজি দরে অনেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এই বাঁশের চাল থেকে আয় রোজগারেও উৎস সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাঞ্জু রায় তার বাড়ির পাশে বাঁশের ঝাড়ে বাঁশ ফুল থেকে ধান আকৃতির বীজ সংগ্রহ করছেন। সেই বীজ পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছেন। সেগুলো রোদে শুকিয়ে চালের মিলে ভাঙাবেন। বাড়ির উঠানে প্রস্তুতকৃত এমন কয়েকটি বীজের বস্তা রেখেছেন। কিছু চাল ভাঙিয়ে রেখেছেন। গ্রামের অনেকেই তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদন করার বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। যা দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়িতে।

প্রতিবেশী মিনতি রানী, সুনিল রায় ও লিপি রানী বলেন, বাঁশের ফুল থেকে চাল সংগ্রহ করার বিষয়টি তারা প্রথমে ছেলে মানুষি মনে করেছিলেন। পরে তার এই চাল তৈরি এবং খেয়ে তারা বুঝতে পেরেছেন, সে একটি ভালো কিছু করেছে। বর্তমানে তার এই উৎপাদিত চাল অনেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এটি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

সাঞ্জু রায় জানান, তিনি একজন দিন মজুর। এক মাস আগে পাশের গ্রামে কাজ করতে গেলে সেখানে কাজের ফাঁকে কালি চন্দ্র রায় (৭০) নামে একজন পরিচিত ব্যক্তি তাকে বাঁশের ফুল থেকে চাল সংগ্রহ করে খাওয়া যায় বিষয়টি জানান। তার কথামত তিনি সেগুলো সংগ্রহ করে প্রথমে নিজে খেয়ে ভালো লাগে। এরপর থেকে তা সংগ্রহ করা শুরু করেন। এতে নিজেদের খাবারের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে, পাশাপাশি এই চাল ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছেন। তবে সাঞ্জু জানান, এটি কষ্টসাধ্য কাজ। প্রতিদিন ২০ কেজি বীজ সংগ্রহ করা যায়। এসব পরিষ্কার করে ভাঙিয়ে চাল করলে প্রচলিত ধানের সমপরিমাণ চাল হয়।

জানা গেছে, দেশে ২৩ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। এর মধ্যে গ্রাম্য ভাষায় (বেইড়া বাঁশ) বলে পরিচিত এই বাঁশের ফুল থেকে এখন উৎপাদন করা হচ্ছে চাল। অন্যান্য চালের মতোই বাঁশের ফুল সংগ্রহকৃত বীজ ধানের মিলে ভাঙিয়ে তা থেকে চাল তৈরি করা হচ্ছে।

উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সাত ধরনের বাঁশ বেশি দেখা যায়। এর মধ্যে বরাক, করজবা, বাইজ্জা, তলস্না, মাকলা, ভুদুম অন্যতম। তবে করজবা ও বাইজা বাশের ফুল হয়, এসব প্রজাতির বাঁশের কান্ড পুরু ও কাষ্ঠল বলে ঘরের বেড়া ও খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া পাকা বাড়ি তৈরির সময় ছাদ ঢালাই দিতেও এসব বাঁশের প্রয়োজন হয়।

প্রচলিতভাবে ধান থেকে চাল উৎপাদন হয়; কিন্তু বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদনের ঘটনাটি একেবারে বিরল। এর পূর্বে বাংলাদেশে আর কোথাও এরকম চাল উৎপাদন হওয়ার কোনো তথ্য নেই। এমন কি চাল গবেষণা ইনস্টিটিউট বা কৃষি অধিদপ্তরেও এর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ কারণে এ চাল মানুষের দেহের জন্য উপযোগী কি না সে বিষয়েও কোনো মতামত দিতে পারেননি ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার ও রংপুর ধান গবেষণাগার, রংপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) আঞ্চলিক কার্যালয় প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রকিবুল হাসান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, ৫০ থেকে ১০০ বছর পরপর বাঁশের ফুল আসে। আর সেই ফুলে বীজ তৈরি হয়। কিন্তু সেই বীজের চাল মানব দেহের জন্য উপযোগী কি না সেটি গবেষণার কাজ। গবেষণা ছাড়া এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।

একই কথা বলেন রংপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) আঞ্চলিক কার্যালয় প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রকিবুল হাসান। এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে