শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মৌলভীবাজারে ২ লাখ ৪৪ হাজার টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা

শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে ২৮০ হেক্টর জমির ২৫ শতাংশ ধান
মো. আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার
  ০৫ মে ২০২৪, ০০:০০
মৌলভীবাজারের হাওড় এলাকায় বোরো ধান কেটে ঘরে তুলছেন কৃষক -যাযাদি

দেশের বৃহত্তম হাওড় হাকালুকি, হাইল ও কাউয়াদীঘি হাওড়বেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮০ মে.টন ধান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হাকালুকিতে শতভাগ ধান কাটা হলেও কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওড়ে এখনো ৩০ শতাংশ ধান কাটা বাকি। জেলাজুড়ে হাওড়ের ৬১ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। তবে, সম্প্রতি শিলাবৃষ্টিতে ২৮০ হেক্টর জমির ২৫ শতাংশ ধানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

আবহাওয়া অনুকূল, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর হাওড়ে অতীতের তুলনায় ধানের বেশি ফল হয়েছে। বেশিরভাগ কৃষক আগে-ভাগে ধান ঘরে তুলেছেন এবার। যারা তুলতে পারেননি, তারা নির্ঘুম রাত পার করে হাওড় গর্ভ থেকে কেটে আনছেন অর্জিত স্বপ্নের ধান। যারা তুলছেন তাদের চিন্তা সার, কীটনাশকসহ সংশ্লিষ্ট উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার বোরোর দাম ন্যাযমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন কি না?

এদিকে, কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওড়ের ভেতর অবশিষ্ট ধান কাটা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বহু কৃষক। বৈরী আবহাওয়া, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যদি জমি তলিয়ে যায়, তবে কাটা থেকে বাদ পড়ে যাবে এসব ধান।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বোরো মৌসুমে জেলার ৭ উপজেলায় ৬১ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এতে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮০ মে.টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গেল বছর ধান পাওয়া গেছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৬ মে.টন। শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দেশের বৃহত্তম হাওড় হাকালুকিতে ১৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে এবার। গেল বছর শুধু হাকালুকিতে ৫৩ হাজার ৮২৫ মে.টন বোর ধান উৎপাদন হয়। এ বছর উৎপাদন হয়েছে ৫৬ হাজার ৪৬০ মে.টন ধান। হাকালুকিতে শতভাগ ধান গোলায় উঠেছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের। জেলার রাজনগর ও সদর উপজেলায় অবস্থিত কাউয়াদীঘি হাওড়ে ৫ হাজার ৬৯৪ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে। এ বছর ২০ হাজার ৭৭৬ মে.টন ধান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গেল বছর এই হাওড় থেকে কৃষকের ঘরে ধান উঠেছে ২৮ হাজার ৭৫৩ মে.টন। তবে এই হাওড়ে এখনো ৩০ শতাংশ ধান কাটা বাকি।

কৃষি বিভাগ আরও জানিয়েছে, সম্প্রতি শিলাবৃষ্টিতে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় ২৮০ হেক্টর জমির ২৫ শতাংশ ধানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো কাউয়াদীঘিতে ৭০ শতাংশ ও হাইল হাওড়ে ৭০ শতাংশ ধান কর্তন হয়েছে। শিলাবৃষ্টি ছাড়া কোথাও কোনো রোগ-বালাইয়ে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন, সুয়েজ আহমদ ও আছকির মিয়া বলেন, তারা ৮০ কিয়ার জমি অন্যকে দিয়ে চাষাবাদ করেছেন। প্রতি কিয়ারে ১৫-১৬ মণ ধান ফলন হয়েছে। আর 'ইরা হাইব্রিট' জাতীয় ধান প্রতি কিয়ারে ২০ মণের মতো ফলন হয়েছে। তাদের অভিযোগ, কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। বর্তমানে প্রতি মণ ধান ৭শ' থেকে ৮শ' টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন প্রতি মণ ধান ১ হাজার থেকে ১২শ' টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা ছিল।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের চেয়ে বেশি বোরো ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ৯১ শতাংশ। শিলাবৃষ্টিতে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় ২৮০ হেক্টর জমিতে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে