সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দাকোপে তরমুজের বাম্পার ফলন

দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি
  ১০ মে ২০২৪, ০০:০০
খুলনার দাকোপে বিক্রির জন্য ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে স্তূপ করছেন চাষিরা -যাযাদি

খুলনার দাকোপে এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ভালো দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শত শত কৃষক। উপজেলা কৃষি বিভাগের গড় হিসাব মতে, দাকোপ থেকে প্রায় ২১৪ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় ২০ হাজার ৮৮৩ হেক্টর চাষাবাদযোগ্য জমি রয়েছে। এর মধ্যে চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর বা ৪২ হাজার ৭৫০ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া বোরো ধান ৩৫০ হেক্টর, সূর্যমুখী ১৮৮ হেক্টর, ভুট্টা ১৬ হেক্টর, বাঙ্গি ৩৫ হেক্টর, তিল ৩ হেক্টর, মুগডাল ৪ হেক্টর, গম ২ হেক্টর ও অন্যান্য শাকসবজি ১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। তা ছাড়া পতিত রয়েছে ১৪ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমি।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, শস্য ভান্ডারখ্যাত দাকোপে গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক কম জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তবে সেচের মিষ্টি পানির চরম সংকটের কারণে অন্য বছরের তুলনায় এবার তরমুজের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। যেসব কৃষকের তরমুজ আগে বড় হয়েছে তারা ভালো দামে বিক্রি করতে পেরেছেন এবং লাভবান হয়েছেন। বাকিদের বিক্রি করতে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ব্যাপারীরা তরমুজ দাকোপ থেকে কিনে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করছেন।

এদিকে ফেরি ও খেয়াঘাটে মাত্রারিক্ত টোল আদায় করার কারণে অনেক ব্যাপারী তরমুজ কিনতে অনীহা প্রকাশ করছেন। কৃষকদের অভিযোগ স্থানীয় দালাল, ফড়িয়া ও পরিবহণ সিলন্ডিকেট, ফেরিঘাটে যানজটে ট্রাকের দীর্ঘ লাইন এবং ঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায় না হলে তারা আরও দাম পেতেন। সাহেবের আবাদ এলাকার কৃষক সুকল্যাণ রায় জানান, 'আমি এ বছর ৬ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছিলাম। এক বিঘার ক্ষেত প্রচন্ড খরায় নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমার ৩৩ শতকের বিঘাপ্রতি নিম্নে ৩০ হাজার টাকা অর্থাৎ মোট খরচ হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রথমে দালালের কারণে ব্যাপারীরা ক্ষেতের দাম বলে মাত্র দেড় লাখ টাকা। এতে আমি তরমুজ বিক্রি করতে খুবই বিপাকে পড়ি। পরে দালাল প্রতিহত করে সেই ক্ষেতের মাল বাইরের মোকামে নিয়ে আমি ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি।'

তিনি আরও বলেন, এ বছর তরমুজ চাষে কৃষকদের প্রতি পদেই বিঘ্ন ঘটেছে। প্রথমত প্রকৃতি চাষিদের প্রতিকূলে ছিল মার্চ মাস অর্থাৎ চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তা ছাড়া বীজ ছিল খুবই নিম্নমানের এবং হরেক রকমের ভেজাল। অন্যদিকে অসাধু সার, বীজ, কীটনাশক বিক্রেতা ও মৌসুমি ক্রেতা এবং স্থানীয় দালাল ও ব্যাপারীদের সিন্ডিকেটে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন চাষিরা। যে কারণে কৃষকদের খরচও বেড়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজের ফলন অনেক কম হয়েছে। কিন্তু সেচের মিষ্টি পানির সংকট হলেও এলাকার কিছুসংখ্যক কৃষক দাম পেয়েছেন ভালো। তবে এ বছর তরমুজ আকারে ছোট হলেও গড় হিসাব অনুযায়ী এভারেজ প্রতি বিঘা ৫০ হাজার টাকা ধরলে ২১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১০৬টি খাল খননের প্রস্তাব মন্ত্রালয়ে পাঠানো হয়েছে। খালগুলো খনন হলেও কৃষকদের সেচ সংকট কিছুটা লাঘব হবে।

ইউএনও জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে গত কয়েক দিন আগে পোদ্দারগঞ্জ খেয়াঘাট থেকে এক আদায়কারীকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অতিরিক্ত টাকা নিলে আবারও তিনি আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে