উত্তরের জেলা নওগাঁ ধান উৎপাদনে বরাবরই এগিয়ে। চলতি বছর বোরো মৌসুমে প্রায় ১৩ লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে এই জেলায়, যা কাটা-মাড়াই শেষ হয়ে পেরিয়েছে অন্তত ২ মাস। বর্তমানে চলছে বোরোর ভরা মৌসুম। স্বাভাবিকভাবে এ সময় চালের দাম কমে আসার কথা। তবে এর কোনো প্রভাব এখনো পড়েনি চালের বাজারে।
ভরা মৌসুমেও বাজারে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে জেলার পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৬ টাকা বাড়িয়েছে মিল মালিক ও আড়তদাররা। যদিওবা একই সময় খুচরা বাজারের চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। চালের বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রশাসনের মজুতবিরোধী অভিযান প্রয়োজন বলে মনে করছেন খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা।
শহরের পার নওগাঁ মহলস্নার আড়তদারপট্টিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫১-৫২ টাকা, ব্রি আর-২৮ ৫৬-৫৭ টাকা, সুভলতা ৫৭-৫৮ টাকা, জিরাশাইল ৬২-৬৩ টাকা এবং কাটারিভোগ ৬১-৬৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন মিল মালিক ও আড়তদাররা। দুই সপ্তাহ আগে এই মোকামে মানভেদে প্রতি কেজি স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৪৯-৫০ টাকা, ব্রি আর-২৮ ৫৪-৫৫ টাকা, সুভলতা ৫১-৫২ টাকা, জিরাশাইল ৫৯-৬০ টাকা এবং কাটারিভোগ ৫৯-৬২ টাকা করে বিক্রি হয়েছিল।
অপরদিকে পৌর চাল বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫০-৫২ টাকা, সুভলতা ৫৪-৫৫ টাকা, জিরাশাইল ৫৮-৬০ টাকা এবং কাটারিভোগ ৬০-৬২ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। গত এক মাস যাবত খুচরা পর্যায়ের এই বাজার দর স্থিতিশীল রয়েছে।
মালশন রাইস সেন্টারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী মানিক প্রামাণিক বলেন, গত এক মাস যাবত বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। তাই পূর্বের চালগুলোই এখনো শেষ করতে পারেননি। বাজার খুচরা পর্যায়ে এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। এই মুহূর্তে পাইকারিতে চালের দাম বেড়ে যাওয়া অযৌক্তিক। মজুতবিরোধী অভিযান চালালে পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
সততা রাইস এজেন্সির আড়তদার ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সুকুমার ব্রহ্ম বলেন, এই অঞ্চলের কেউই মোটা চালের ভাত খেয়ে অভ্যস্ত নয়। তাই সরকার সংগ্রহ অভিযানে বিভিন্ন সংস্থা থেকে শুরু করে যেসব উপকারভোগীদের সুবিধার্থে মোটা চাল সংগ্রহ করছে, সেই লক্ষ্য পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে। গুদাম থেকে বেরিয়ে কয়েক হাত বদলের পর চালগুলো আবারও সরকারি গুদামে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। চিকন ও মাঝারি আকারের চালের চাহিদা বিগত মৌসুমের তুলনায় কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ায় ঈদের আগে ও পরে কয়েক দফায় প্রতি কেজি চালের দাম নওগাঁ মোকামে ২-৬ টাকা বেড়েছে। সরকার মোটা চাল সংগ্রহের পাশাপাশি চিকন চাল কেনা শুরু করলেই বাজারের এই অস্থিরতা কমবে। সেই সঙ্গে সংগ্রহের উদ্দেশ্যও সফল হবে।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রম্নপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, বর্তমানে বোরোর ভরা মৌসুম চলছে। এই মুহূর্তে চালের দাম বেড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক। মোকামে চালের সরবরাহ সংকটের কারণে বর্তমানে বেশি দামে চাল কেনা-বেচা হচ্ছে। চালকলগুলো পুরোপুরি চালু হলে চালের বাজার ফের নিয়ন্ত্রণে আসবে।