বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

ফরিদগঞ্জ পৌর ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
  ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ফরিদগঞ্জ পৌর ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ

চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত ক্যাশিয়ার গিয়াস উদ্দিন নৌকা সমর্থিত পৌর মেয়রের ছত্রছায়ায় থেকে অঢেল সম্পত্তি গড়েছেন। গত সোমবার শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ওই ক্যাশিয়ার আত্মগোপনে থাকলেও দৃশ্যমান হয়ে উঠছে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ। গত ১৩ আগস্ট পর্যন্ত পৌরসভা কার্যালয়ে আসেননি তিনি।

ফরিদগঞ্জ পৌরসভার স্থানীয় নাগরিকদের দেওয়া তথ্যসূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে তিনি ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় যোগদান করেন। এরপরই তিনি ফরিদগঞ্জ পৌরসভার নিয়োগকৃত ক্যাশিয়ারের বদলি করান এবং তৎকালীন মেয়রের মাধ্যমে তিনি ক্যাশিয়ারের (অঃদাঃ/ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পান। তিনি নিজেকে সব ক্ষেত্রে ক্যাশিয়ার পরিচয় দিয়ে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার জনসাধারণ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ছায়া মেয়রের মতো আচরণ করেন। ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে থেকে মৃত কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা, মাস্টাররোলের কর্মচারীদের ছাঁটাই, পৌরসভার দুই উদ্যোক্তাকে ষড়যন্ত্র করে ছাঁটাই করে তাদের বেতনসহ পাওনা টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

1

গিয়াস উদ্দিনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, বাড়ির সামনে সড়কের পাশে ৪ তলাবিশিষ্ট বিলাসবহুল বাড়ি, বেশ কয়েকটি দোকানসহ একটি মার্কেট গড়েছেন তিনি। এলাকায় নামে-বেনামে কিনেছেন আরও সম্পত্তি।

অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভা, উপজেলা প্রশাসনসহ সব প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় এবং কার্যক্রম অনলাইন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হলেও ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় তা হয় না। সেখানে সব ব্যয়ের চেক বাহক চেকের মাধ্যমে ভাঙানো হয়, সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কোনো চেক অ্যাকাউন্ট পে হয় না। এসব কিছুর পেছনে আছে কারসাজি, পৌরসভার ফান্ডে টাকা নেই এমন টালবাহানা করে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখেন তিনি।

২০২১ সাল থেকে বর্তমান পরিষদ গঠন হওয়ার পর সরকারি নির্দেশ মোতাবেক মাস্টাররোল কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়। বেশিরভাগের ১০-২০ মাসের বেতন বকেয়া ছিল, যা দেওয়া হয়নি।

২০২১-২২ইং অর্থবছরের শেষ সময়ে সরকারি অনুদানকৃত ২৮ লাখ টাকা তুলে কর্মচারীদের আনুতোষিক ও ভবিষ্যৎ তহবিলে জমা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও তিনি তা করেননি। সরকারি বিধির তোয়াক্কা না করে ছোট ছোট ভুয়া বিল ভাউচার (পঁচিশ হাজার টাকার প্রজেক্ট) করে তিনি পৌরসভার অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে জানা যায়। নগর উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৫ লাখ টাকা গরমিলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আবুল কাশেম, লুৎপুর রহমান, ইসমাইল হোসেন, আব্দুল খালেক, আব্দুল মান্নান, হাবিব উলস্না, আফসার উদ্দিন মোলস্না এই কর্মকর্তাদের নামে রাজস্ব তহবিল থেকে ২ লাখ টাকা করে গোপনে লোন নেন ক্যাশিয়ার। এই কর্মকর্তারা লোনের ব্যাপারে জানতেন না। পরবর্তী সময়ে এই কর্মকর্তারা যখন নিজেদের প্রয়োজনে রাজস্ব থেকে লোন চাইতে যান তখন এগুলো প্রকাশ পায়।

মাস্টাররোলের চাকরি ছেড়ে দেওয়া রোজিনা আক্তার জানান, 'গত বছর জুলাই মাসের ২৪ তারিখে চাকরি ছেড়ে দিছি, ৬ মাসের বেতন পাব ক্যাশিয়ার বেতন দেয় না। দেব বলে আর খবর থাকে না।' পিংকি নামে আরেক মাস্টাররোলের কর্মচারী ২ মাস ও আছমা আক্তার ৮ মাসের বেতন পাবেন। আবু তাহের নামে আরেকজন মাস্টাররোলের কর্মচারী (ড্রাইভার পদে) বলেন, 'আমি ১১ মাসের বেতন পাব ক্যাশিয়ার বেতন দিচ্ছে না।'

ক্যাশিয়ার গিয়াস উদ্দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে পলাতক রয়েছেন। তার মোবাইলে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে