মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

বীরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কালিমেলা শুরু

বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বীরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কালিমেলা শুরু
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী ঢেমঢেমিয়া কালীমেলায় বিক্রির জন্য আনা বিভিন্ন জাতের ঘোড়া -যাযাদি

পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মালম্বীদের শ্রীশ্রী শ্যামাপূজা। পূজা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ১২ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ঢেমঢেমিয়া কালিমেলা। জেলা বিএনপির সহসভাপতি খালেকুজ্জামান বাবুকে সভাপতি এবং জগদীশ চন্দ্র সরকারকে সেবায়েত ও পূজারী করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মেলা ও পূজা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে এলাহী।

বাংলা ১২৮০ সন থেকে প্রতিবছর কার্তিক মাসের শ্যামাপূজার আমাবশ্যায় এ মেলার আয়োজন করা হয়। উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বৈরবাড়ী, চাপাপাড়া ও হিরামণি মৌজায় মেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে সাত দিন ধরে পূজা চলা এ মেলা। উত্তরবঙ্গের সনাতন ধর্মালম্বীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিনোদনসহ মিলনমেলা হিসেবে বীরগঞ্জ উপজেলার ঢেমঢেমিয়া কালির মেলা ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে, যা উত্তরবঙ্গের অন্যতম আকর্ষণীয় ঘোড়া ও মহিষের মেলা হিসেবে পরিচিত।

জানা গেছে, স্বর্গীয় সংশয় সরকার বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বৈরবাড়ী, চাপাপাড়া ও হিরামনি মৌজায় বাংলা ১২৮০ সনে কার্তিক মাসের আমাবশ্যায় দিবাগত রাতে তাদের ধর্মীয় রীতিতে লগ্ন মোতাবেক একটি পাঁঠা বলির মাধ্যমে ঢেমঢেমিয়া কালিমেলার শুভ সূচনা করা হয়। কালি মন্দিরটির পাশেই মাত্র কয়েক গজ পশ্চিমে দরবেশ মিরাজুন মিয়ার মাজার শরিফ রয়েছে। এককথায় মেলার সময় ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব গোত্রের মানুষ এখানে এসে এ মেলা উৎসবে মেতে উঠে। পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও, উত্তরে পঞ্চগড়, পূর্বে নীলফামারী ও দক্ষিণে দিনাজপুর। কয়েকটি জেলার মধ্যস্থল হওয়ায় কালিমেলা উদ্বোধনের আগে থেকেই মানুষের মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে। মেলার শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ শ্যামাপূজার প্রথম রাতে লগ্নমতে কালি পাটে চড়া। কালি পাটে চড়া অর্থাৎ পাঁঠা বলি দান। হিন্দু ধর্মীয় রীতিতে উদ্বোধনী রাতে পূজারীরা আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়।

মেলা ঘিরে নানা ধরনের দোকান বসলেও প্রধান আকর্ষণ ঘোড়া ও মহিষের কেনাবেচা। ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিক্রেতারা নানা জাতের ঘোড়া ও মহিষ নিয়ে অংশ নেন।

ঘোড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় তার জাত ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে। এ বছর যশোর থেকে আসা ঘোড়া বিক্রেতা সিরাজুল হোসেন জানান, ৭টি ঘোড়া নিয়ে এসেছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় 'বেঙ্গল ২ ক্রস' জাতের ঘোড়া। বিক্রেতা ভালোবেসে এই ঘোড়ার নাম রেখেছেন পঙিরাজ। দাম হাঁকিয়েছেন ৬ লাখ টাকা। যদিও ক্রেতারা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা বলেছে। এছাড়াও মেলায় বিভিন্ন জাতের ঘোড়া উঠেছে।

মেলার অপর প্রান্তে সারি সারি মহিষ বাঁধা রয়েছে। মহিষের দাম নির্ধারিত হয় আকার, আকৃতি এবং ওজনের ওপর ভিত্তি করে। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর থেকে আসা মহিষ বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন মেলায় এনেছেন ১০ জোড়া বিশাল আকারের পাড়া জাতের মহিষ। যার মধ্যে অন্যতম কালামানিক, যার জোড়ার মূল্য হাঁকিয়েছেন ৬ লাখ টাকা। এছাড়া মেলায় আকার-আকৃতি ভেদে প্রতিজোড়া মহিষ এক লাখ ৩০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

শ্যামাপূজার সেবায়েত ও পূজারী জগদীশ চন্দ্র সরকার জানান, প্রতিবছর কার্তিক মাসের আমাবশ্যায় সনাতন ধর্মালম্বীদের শ্যামাপূজায় এ মেলার আয়োজন করা হয়। শ্যামাপূজার প্রথম রাতে লগ্নমতে কালি পাটে চড়া। কালি পাটে চড়া অর্থাৎ পাঁঠা বলি দান। কালি পাটে উঠবে এ মর্মে অনেক আগে থেকেই শোরগোল চলতে থাকে। সে আলোকে আশাবাদী দর্শকরা মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় প্রহর গোনেন। কালি মাতার সম্মানে ভক্তরা শত শত আবার কেউ কেউ হাজার হাজার নগদ অর্থ, সোনা, রুপাসহ মূল্যবান অনুদান সেবায়েতকে মায়ের তথা কালিমন্দির অনুদান এবং উন্নয়নে দান, গুরু দক্ষিণা, প্রকাশ্য প্রণামী দিয়ে থাকেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে