পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পে ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর বা খুলনা রুটে ট্রেন চলাচলের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ রুটে কীভাবে এবং কয়টি ট্রেন চালানো হবে তা এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। যশোরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন দাবির বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ট্রেন সিডিউল নির্ধারণের চেষ্টা চলছে। তবে কোচ সংকটের কারণে পদ্মা সেতুর যশোর বা খুলনাবাসীকে চূড়ান্ত সুবিধা পেতে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এ কারণে এখানকার মানুষের ট্রেনে মাত্র তিন ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়ার স্বপ্ন এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই স্বপ্ন দেখে আসছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হওয়ায় পদ্মা সেতু দিয়ে নড়াইল হয়ে রেলপথে রাজধানীতে পৌঁছানোর যশোরবাসীর সেই স্বপ্ন এখন হাতছোঁয়া দূরত্বে। নতুন এ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলে রেলপথে যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ১৯৩ কিলোমিটার। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ব্রডগেজ রেললাইন দিয়ে ছুটবে ট্রেন। ঢাকা-ভাঙ্গা হয়ে (রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া হয়ে) খুলনা, যশোর ও বেনাপোল রুটে বর্তমানে ট্রেন চলাচল চালু আছে। এতে দূরত্ব কমেছে তিন ঘণ্টার মতো। আর নড়াইল হয়ে সরাসরি রেল সংযোগ চালু হলে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যাবে ট্রেন। সড়কপথে যশোর থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা, যা আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেক সময়। রেলপথটি ঢাকার কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ এবং নড়াইলের ওপর দিয়ে যশোর গিয়ে শেষ হয়েছে। এই রেললিংক প্রকল্পে যশোর থেকে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু যশোর থেকে তিন ঘণ্টায় ঢাকা যাওয়ার সেই স্বপ্নে ধাক্কা দিচ্ছে রেলের কোচ সংকট। এই সংকটের কারণে নতুন ট্রেন চালু করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রেলকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, যশোর থেকে বর্তমানে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকায় যাতায়াত করছে। এর মধ্যে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস যশোর থেকে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী-ভাঙ্গা হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করছে। আর খুলনা থেকে ছেড়ে আসা চিত্রা এক্সপ্রেস ঈশ্বরদী হয়ে যমুনা সেতু দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করছে। এই ট্রেনগুলোর রুট পরিবর্তনের (যশোর-নড়াইল-ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা) খবরে ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ীতে রেল অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে। এ কারণে এই তিনটি ট্রেনের পুরানো রুট পরিবর্তনের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে রেল বিভাগ। ফলে আপাতত ওই ট্রেনগুলোর বর্তমান রুটেই চলাচল করবে। সে ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াত করলেও বেনাপোল বা সুন্দরবন এক্সপ্রেসে যশোর থেকে ঢাকায় যেতে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা সময় লাগবে। ফলে বর্তমান রুটের ট্রেনে যশোর বা খুলনাবাসীর জন্য নতুন কোনো সুখবর নেই।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বুধবার রেলভবনে বিদায়ী রেল সচিব আবদুল বাকী ও রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলীর সঙ্গে মতবিনিময় করে বৃহত্তর যশোর রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির এক প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জি. রুহুল আমিন জানান, বৃহত্তর যশোরাঞ্চলের মানুষ ট্রেনে চড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় যেতে বেনাপোল-যশোর-ঢাকা রুটে ২টি ও দর্শনা-যশোর-ঢাকা রুটে ২টি ট্রেন দেওয়ার দাবিসহ ৬ দফা দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। সভায় সেই দাবিগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তবে দাবির যৌক্তিকতার সঙ্গে একমত হলেও রেলের এ দুই শীর্ষ কর্মকর্তা রেলের সীমাবদ্ধতার কথাও জানিয়েছেন। তারা বর্তমান ট্রেনগুলো একইরুটে বহাল রেখে নতুন ট্রেন চালুর চেষ্টা করছেন।
বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান বলেন, বেনাপোল থেকে এখন চলাচলকারী ট্রেনটি বর্তমান রুটেই চলাচল করবে বলে জানা গেছে। আর নতুন ট্রেন বা যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচলের এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। যশোর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান জানান, যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচলের ব্যাপারে এখনো কোনো দিক-নির্দেশনা বা তথ্য পাননি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-মতবিনিময় চলছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে।