মেহেরপুরের গাংনীর সবজির মারাত্মকভাবে দর পতন হওয়ায় চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ফুলকপি, বাধাকপি ও পেঁয়াজ চাষিদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। গেল এক সপ্তাহ ধরে সবজির দাম কমে যাওয়ায় তাদের মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক ও বর্গা চাষিরা।
গাংনীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি ৫০ টাকা আর ফুলকপি ও বাধাকপির প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ টাকায়। গেল ১০ দিন আগেও পেঁয়াজ ৮০ টাকা আর ফুলকপি ও বাধাকপির দাম ছিল ৪০-৫০ টাকা কেজি। সে সময় চাষিরা লাভের মুখ দেখলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে তাদের মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়। সবজির এই দর পতনে বর্গা চাষিরা অনেকেই বড় ধাক্কা খেয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের হিসেব মতে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে এক হাজার ৬৫৬ হেক্টর পেঁয়াজ, এক হাজার ১২০ হেক্টর ফুলকপি ও বাধাকপির আবাদ করেছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগ উপজেলায় উন্নত মানের ফসল আবাদের লক্ষ্যে ১২০ জন চাষিকে পেঁয়াজ চাষের জন্য প্রণোদনা দেয়। কৃষি অফিসের পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হয়ে চাষ করেন।
পেয়াজ চাষি সাহারবাটির তহশিন মেম্বর জানান, তিনি গেল মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। দাম ভালো পাওয়ায় এবার তিনি চার বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। এক বিঘা পেঁয়াজ চাষে খরচ হয় অন্তত ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৫৫ মণ। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের মারাত্মকভাবে দরপতন হওয়ায় চাষের অর্ধেক খরচ উঠছে না। মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হবে।
পেঁয়াজ চাষি বাওট গ্রামের মহিবুল জানান, এক কেজি পেঁয়াজ বীজ সাড়ে ৮ হাজার টাকায় কিনেছেন। জমি লিজ ও অন্যান্য খরচসহ মোট উৎপাদন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। এখন উৎপাদিত পেঁয়াজ আড়তে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকা মণ।
আবার চার কেজি অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে। এতে করে লিজ খরচই উঠছে না। মোটা অংকের টাকা লোকসান হবে তার। একই কথা জানালেন পেঁয়াজ চাষি ছাতিয়ানের জামান ও কামাল।
কপি চাষি সাহারবাটির বদরুল হায়দার জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে ফুলকপি ও বাধাকপির আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। গেল বছরও বেশ ভালো দাম পেয়েছিলেন। ১০ দিন আগেও বাজারে কপির কেজি বিক্রি হতো ৩০ টাকা।
বর্তমানে প্রতি পিস কপি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ টাকায়। কখনো কখনো এক জোড়া পাওয়া যাচ্ছে ১০ টাকায়। এতে উৎপাদন খরচ উঠছে না।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে চাষিরা ব্যাপকহারে সবজি চাষ করেছেন। তবে পেঁয়াজ ও কপির বাজারে দরপতনে অনেক চাষি লোকসানে পড়বেন।
স্থানীয় বাজার ছাড়াও বাইরের বাজার খোঁজ করা হচ্ছে। চাষিরা যাতে লোকসানে না পড়ে সে ব্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে।