সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভাঙন ঝুঁকিতে রূপসার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা, কাটছে নির্ঘুম রাত

রূপসা (খুলনা) প্রতিনিধি
  ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ভাঙন ঝুঁকিতে রূপসার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা, কাটছে নির্ঘুম রাত
খুলনার রূপসায় আঠারোবেকী নদীর পানি বাড়ায় ভাঙন ঝুঁকিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প -যাযাদি

খুলনা জেলার রূপসা উপজেলায় আঠারোবেকী নদীর পানি বাড়ায় হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার দিকনগর খেয়াঘাটের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অস্থায়ী রক্ষা বাঁধের সাড়ে ৭০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে আলফাডাঙ্গার আশ্রয়ণ প্রকল্প 'স্বপ্ননগর'। এ ছাড়াও কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা নদী ভাঙনের আতংকে রাত কাটাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের সামন্তসেনা গ্রামে আঠারোবেকী নদীর তীরসংলগ্ন সরকারী জমির ওপর আশ্রয়ণ আবাসন এলাকা নির্মাণ করা হয়। যাদের জমি নেই, ঘর নেই এমন ২৮৬ পরিবারের ঠাঁই হয়েছে স্বপ্ননগরে। ঘর নির্মাণের পাশাপাশি তৈরি করা হয় ইকোপার্ক ও সামাজিক বনায়ন। এ ছাড়া উপকারভোগীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর।

1

এদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৯০০ মিটার অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু হঠাৎ করে মধুমতী নদীতে পানি বাড়ায় বাঁধের প্রায় সাড়ে ৭০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ৩০টি ঘর ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, 'অস্থায়ী নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।'

দিকনগর বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, 'মধুমতীতে পানি বেড়েছে। কয়েক দিনে অস্থায়ী বাঁধের প্রায় মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দুই বছর যেতে না যেতেই রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের বাসিন্দারা এখন ঘর হারানো আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন।'

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম ও হুরি বেগম বলেন, 'আমরা মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে স্বপ্ননগরে একটু আশ্রয় পেয়েছিলাম। এখন এ আশ্রয় হারালে আমাদের আবার পথেই থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঘর দিয়েছে, সেই ঘরে শান্তিতে বসবাস করছি। নদীতে বিলীন হয়ে গেলে আমরা কোথায় যাব তাই দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।'

৩নং নৈহাটি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড নেহালপুর ও দেবীপুর ও সামন্তসেনার ভাঙ্গনঘাট এলাকায় আঠারোবেঁকী নদীর পাশে গড়ে ওঠা আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিবাসিরা নদী ভাঙনের ফলে চরম আতংকে দিনযাপন করছে। এ সব ঘর পেয়ে খুশিতে আত্মহারা সহায়-সম্বলহীন মানুষ। তারা উপহারের ঘরে বসবাসের পাশাপাশি নদীর পাশ দিয়ে গড়ে তুলছেন কৃষি খামার। এখান থেকে নানা রকম সবজি চাষের মাধ্যমে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সে সব সবজি বাজারে বিক্রি করেও অর্জন করেছেন মুনাফা। এখানে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রয়েছে দুইটি সুবর্ণ নাগরিক (প্রতিবন্ধী) পরিবার। ঘর পেয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করলেও তাদের আতংক শুধু নদী ভাঙন। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা যেন দিনদিন বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকা মানুষের কৃষি জমি, চলাচলের রাস্তা আর জমিসহ ঘর।

রূপসায় নেহালপুর আশ্রয় প্রকল্পে থাকা সুবর্ণ নাগরিকের পরিবারসহ সাধারণ মানুষের কাছে তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, 'আমাদের বসবাসের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ছিলো না। সরকারিভাবে আমাদের বিনামূল্যে প্রদান করা হয় এই স্থায়ী বসবাসস্থল। তবে নদী ভাঙনের ফলে আবারও হারানোর পথে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসের জন্য জমিসহ ঘর। ঘর তৈরির সময় আঠারোবেঁকী নদী ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ফেলে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করে, যা আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকা ৬২ ঘরের তিন ভাগের একভাগ। এ দিকে বাকি দুই ভাগ ভাঙন রোধে রূপসার ৩নং নৈহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে গাবগাছ ও টিন দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। নদী ভানের ফলে অনেক আগেই বিলীন হয়েছে সে বাঁধ। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বালুর বস্তুা দিয়ে যে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল তা অধিকাংশ বিলীন হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই আঠারোবেঁকী নদীর পাশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কৃষি জমি বড় বড় আকারে ভাঙনের ফলে বিলীন হতে শুরু করেছে। যে কোন সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো বিলীন হতে পারে।

তারা আরও বলেন, 'আমরা রূপসা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বিনীত আবেদন করে আসছি, আমাদের জোরদাবী নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ আমাদের স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধে বাঁধসহ উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হোক। আমরা যেন পরিবার নিয়ে এখানে সুখে শান্তিতে দিন রজনী কাটাতে পারি।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী সেলিম রেজা বলেন, বিগত এক বছর আগে আপৎকালীন (ইমারজেন্সি) প্রকল্পের আওতায় আঠারোবেকী নদীর তীরে আশ্রয়ণ প্রকল্প ভাঙ্গনের নির্মাণকাজ করা হয়। নদীতে ফের পানি বাড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে ভাঙন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ভাঙন রোধ করার জন্য দ্রম্নত কাজ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে