সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সংগ্রহ অভিযানে চালে সাড়া মিললেও ধানে অনাগ্রহ

স্বদেশ ডেস্ক
  ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সংগ্রহ অভিযানে চালে সাড়া মিললেও ধানে অনাগ্রহ
সংগ্রহ অভিযানে চালে সাড়া মিললেও ধানে অনাগ্রহ

ঝিনাইদহ ও সিরাজগঞ্জে সরকারিভাবে সংগ্রহ অভিযানে চালে সাড়া মিললেও ধানে কৃষকদের মধ্যে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনিশ্চয়তা দেখা গেছে। গত দেড় মাসে এক কেজি ধানও দেননি কৃষকরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহে চলতি আমন মৌসুমে খাদ্য অধিদপ্তরের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত জেলার ৬ উপজেলার ৯ খাদ্যগুদামে এক কেজি ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি অধিদপ্তরটি। তবে জেলার কৃষকরা দুই মাস আগেই আমন ধান ঘরে তুলেছে। এখন ইরিধান রোপণের মৌসুম চলছে। ফলে জেলার ৯ গুদামে কোনো ধান সংগ্রহ না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা দেখছে জেলাবাসী।

1

ধান-চাল সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্ধারিত ৪ মাস সময়ের মাত্র দেড় মাস শেষ হয়েছে। সামনে এখনো আড়াই মাস বাকি। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্য থেকে খোলাবাজারে দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে কোনো আগ্রহ দেখাননি।

চলতি আমন মৌসুমে জেলার ৬ উপজেলায় ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৪ হাজার ৪৮৫ মেট্রিক টন, যা পূরণ হয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমন মৌসুমে এবার সরকারিভাবে জেলার ৯ খাদ্যগুদামে ধান ৭ হাজার ৯২৬ মেট্রিক টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। চলতি বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত ধানচাল সংগ্রহ অভিযান চলবে। এ কয়েকদিনের মধ্যে এক গ্রাম ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। তবে এ সময়ে সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৩ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন। লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন। এসব চালের মধ্যে মিলারদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে ৬ হাজার ৯৯৮ মেট্রিক টন, যার অর্ধেক সংগ্রহ হয়েছে। এছাড়া আতপ চালের লক্ষমাত্রা ধরা হয় ৬৫২ মেট্রিক টন, মিলারদের সঙ্গে চুক্তি ৪৯১ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে ৮৫ মেট্রিক টন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নতুন বাড়ি এলাকার কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের সময় আদ্রতা ১৪ শতাংশের নিচে থাকার বাধ্যবাধকতা থাকে। এ বাধ্যবাধকতা হাটবাজার বা আড়তে নেই। তাছাড়া গুদামে ধান দিতে পরিবহণ খরচ রয়েছে। কিন্তু খোলাবাজারের ব্যবসায়ীরা অনেক সময় বাড়ি থেকেই ধান নিয়ে যায়। হাটবাজার বা আড়তে ধান বিক্রি করলে নগদ টাকা পাওয়া যায়। সরকারি গুদামে বিক্রির পর টাকা পেতেও কয়েক ধাপের প্রক্রিয়া পার করতে হয়। এ ছাড়া সরকার ধানের মণপ্রতি দাম ধরেছে ১ হাজার ৩২০ টাকা। আর হাটবাজার বা আড়তে ধান বিক্রি করলে মণ প্রতি পাচ্ছি ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকা করে। এ সব কারণে অনেক কৃষক খাদ্যগুদামে ধান বিক্রির আগ্রহ হারিয়েছেন।

কৃষকরা বলছেন, এবার বৃষ্টিতে আমন ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়, যার ফলে ধান ফলাতে অধিক ব্যয় করতে হয়েছে। কিন্তু ধান ক্রয়ের জন্য সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে, খুচরা বাজারে এর চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) প্রিয় কলম চাকমা বলেন, 'এবার সরকার ধানের প্রতিমণ দাম নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ৩২০ টাকা। অন্যদিকে খোলাবাজারে মনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত মূল্য থেকে বেশিদামে। যার ফলে কৃষকেরা হাটবাজারে তাদের ধান বিক্রি করছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে গুদামে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের কোনো সম্ভাবনাই দেখছি না। মিলাদের কাছ থেকে চালের যে চুক্তি রয়েছে তারা আস্তে আস্তে দিচ্ছেন। আশা করি তারা সময়ের মধ্যে সব চাল দিয়ে দেবেন। আর যে সব মিলার সময়ের মধ্যে চাল দিতে পারবেন না তাদের বিরুদ্ধে মেয়াদ শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জে আমন মৌসুমে ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযানে ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। প্রায় দেড় মাসে গুদামে ধান সংগ্রহে তেমন সাড়া মেলেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, সিরাজগঞ্জে এবার ৯ উপজেলার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ৫ হাজার ৪৩৩ মেট্রিক টন ধান ও মিলারদের কাছ থেকে ৮ হাজার ৯৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে ধান ৩৩ টাকা ও চাল ৪৭ টাকা কেজি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট খাদ্য বিভাগ গত ১৭ নভেম্বর থেকে এ ধান চাল ক্রয় অভিযান শুরু করেছে এবং আগামী বছরের ২৮ ফেব্রম্নয়ারী এ ক্রয় অভিযান শেষ হবে। তবে প্রায় দেড় মাসেও জেলার ৯টি খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহে তেমন কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

তবে চাল সংগ্রহে জেলার ৯টি উপজেলার তালিকাভুক্ত ৩৯১জন মিলারের মধ্যে ২৮৫জন এবার চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। চুক্তিবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০৯৮.৬৮০ মে.টন। এর মধ্যে মিলারদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত জেলার ৯টি উপজেলায় ৪৩৫৯.৪৫০ মে.টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। যা অর্জিত লক্ষ্যমাত্রার ৫৪ শতাংশ। এবং ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৪৩৩ মে.টন। এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩৩.৪০০ মেট্রিক টন। এ অভিযানে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজার মূল্য বেশি থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিলার বলেন, লাইসেন্স রক্ষায় খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এবং ইতোমধ্যে কিছু চালও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ সব কারণে খাদ্য গুদামগুলোতে অনেক শ্রমিক এখন প্রায় বেকার হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, সরকার ঘোষিত মূল্যের চেয়ে বাজারে ধানের মূল্য বেশি। তাই কৃষকরা এখন গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী না এবং বেশিরভাগ কৃষকই বাজারে বেশি দামে বিক্রি করার অপেক্ষায় রয়েছেন।

এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হারুনর রশীদ যায়যায়দিনকে জানান, জেলায় তালিকাভুক্ত ৩৯১টি চালকল রয়েছে। এ সব চালকলের মধ্যে ২৮৫ জন চালকল মালিক চাল সংগ্রহে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ইতিমধ্যেই ৫৪ শতাংশ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বাকি সময়ের মধ্যে পুরোপুরি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তবে এখন পর্যন্ত ধান সংগ্রহে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চেষ্টা চলছে বলেও উলেস্নখ করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে