সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রাথমিক যন্ত্রপাতি না থাকায় থমকে আছে গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম

নেই স্থানীয় জনবল নিয়োগ ১১ কর্মচারীর ৬ জন ডেপুটেশনে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্টের পথে
মো. বোরহান উদ্দিন, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম)
  ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
প্রাথমিক যন্ত্রপাতি না থাকায় থমকে আছে গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে নির্মাণাধীন তৃতীয় আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার কাম বুল স্টেশন -যাযাদি

দেশীয় রেড কাউ (আর সি সি) জাতের গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য ভালো মানের ষাঁড় হতে সিমেন উৎপাদন করে তৃণমূল পর্যায়ে খামারীদের দেশী গাভীকে প্রজনন করানোর উদ্দেশে হাটহাজারীতে স্থাপিত হয়েছে তৃতীয় আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার কাম বুল স্টেশন। এটি চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্টেশন। মূলত প্রায় বিলুপ্তির পথে দেশীয় জাত ধরে রাখতেই এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

কৃত্রিম প্রজনন ও ভ্রম্নণ স্থানান্তর (এআইইডটি) প্রকল্পের মাধ্যমে হাটহাজারী পৌরসভার পশ্চিমে সরকারি দুগ্ধ ও গবাদিজাত উন্নয়ন খামার সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ৯ একর জমির ওপর এ কার্যক্রম পরিচালনায় স্থাপিত হয়েছে বিশালাকার এ প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০২৩ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হয়। যেখানে রয়েছে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য আধুনিক কার্যালয়। রয়েছে সিমেন সংগ্রহের পর যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করার ল্যাবসহ নানা যন্ত্রপাতি। বাছাইকৃত ষাঁড় রক্ষণাবেক্ষণে নির্মাণ হয়েছে বিশাল ১০টি শেড। প্রতি শেডে থাকবে ১০টি করে ষাঁড়। সিমেন উৎপাদন বা সংগ্রহের যাবতীয় কাজ করা হবে এসব শেডে। জাতীয় প্রজনন নীতিমালা অনুসারে দেশীয় জাতের (আরসিসি) গাভীকে একই জাতের ষাঁড়ের বীজ দিয়ে প্রজনন করানো বাধ্যবাধকতা রয়েছে এ প্রকল্পে। তাই প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন সরকারি দুগ্ধ ও গবাদিজাত উন্নয়ন খামার হতে যাছাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে বাছাইকৃত রেড কাউ (আরসিসি) ষাঁড় নিয়ে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

1

সরেজমিনে জানা গেছে, দেশীয় জাতের আরসিসি জাতের গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য স্থাপন করা প্রতিষ্ঠানে প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের পর পর অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে যাছাই-বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে সরকারি দুগ্ধ ও গবাদিজাত উন্নয়ন খামার হতে ৯টি ষাঁড় নেওয়া হয়েছে। বাছাইকৃত ষাঁড়গুলো নিয়মিত পরিচর্যা করা হচ্ছে। খালি জায়গায় ষাঁড়ের পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহে চাষ করা হচ্ছে উন্নতমানের ঘাস, ভুট্টা। একটি শেডে দেখা গেছে ৯টি ষাঁড় সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। তাদের দেখভাল করছেন কয়েকজন কর্মচারী। বাকি ৯টি শেড খালি পড়ে আছে। শেডের কাছে রয়েছে খড় রাখার গুদাম।

অফিস ঘুরে দেখা আছে, সাজানো গোছানো পৃথক পৃথক কক্ষ। তবে চেয়ার খালি পড়ে আছে। ল্যাব কক্ষে বাক্সবন্দী কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।

জানা গেছে, বাক্সবন্দী অন্তত দুই কোটি টাকার যন্ত্রপাতি প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে আনা হয়েছে। তবে এ সব যন্ত্রপাতি কার্যক্রম পরিচালনার দ্বিতীয় পর্যায়ের। প্রথম পর্যায়ের যেসব যন্ত্রপাতি লাগবে তা প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার দেড় বছর পার হলেও এখনো আসেনি। ফলে যে উদ্দেশে এ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয় তা থমকে আছে। প্রাথমিক যন্ত্রপাতি বলতে ষাঁড়ের সিমেন সংগ্রহে যে সব যন্ত্রপাতি লাগবে সেগুলোকে বোঝানো হয়েছে। প্রথমে সিমেন সংগ্রহ করতে হবে। তারপর সিমেন্সের গুনগত মান পরীক্ষা, ধারণ ক্ষমতা, পরিমাণ, পেকেটজাত প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি। সিমেন সংগ্রহের যন্ত্রপাতি না থাকায় অন্যান্য কিছু থাকলেও কার্যক্রম থমকে আছে। তাই প্রকল্প পুরোদমে চালু করতে প্রাথমিক যন্ত্রপাতির বিকল্প নেই। সেসব যন্ত্রপাতি প্রেরণে ইতিমধ্যে চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর লিখিতভাবে উর্ধ্বতনকে জানিয়েছেন বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নাবিল ফারাবি। তবে কবে নাগাদ আসতে পারে তা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি তিনি।

একজন করে উপ পরিচালক, সায়েন্টিফিক অফিসার, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও অফিস সহকারীর পদ থাকলেও সবগুলি শূন্য।

ইতিমধ্যে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১১ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৫ জনকে কর্মস্থলে পাওয়া গেলেও বাকি ৬ জন রয়েছেন ডেপুটিশনে। নিয়োগের পর কর্মস্থলে উপস্থিত হলেও খুব দ্রম্নত উচ্চমহলে সুপারিশের মধ্য দিয়ে যে যার পছন্দমত কর্মস্থলে চলে যান। কারণ হিসেবে জানা যায়, যে বেতন ভাতায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় একজন ছাড়া তারা কেউ হাটহাজারী উপজেলা কিংবা চট্টগ্রাম জেলার কেউ নন। দূর জেলা থেকে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে সে বেতনে তাদের নিজের ব্যয় মিটিয়ে যাতায়াত খরচ এবং পরিবার চালানো কষ্টকর। যদি হাটহাজারী বা পার্শ্ববর্তী উপজেলা ফটিকছড়ি রাউজান এলাকা থেকে নিয়োগ দেওয়া হত তাহলে একদিকে যেমন বেকার সমস্যার সমাধান হত অন্যদিকে কর্মস্থলে প্রতিদিন উপস্থিত থাকতেন। দূর-দূরান্তের অজুহাত দেখিয়ে ডেপুটিশনে যেতে হত না।

নিয়োগ পাওয়া ১১ জন কর্মচারীর মধ্যে একজন চট্টগ্রামের কাউখালী উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তবে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হলে, ২৫-৩০ জনের জনবলের প্রয়োজন হবে। অফিস সহকারী, গাড়ি চালক, দাড়োয়ানসহ বিভিন্ন পদের লোক নিয়োগ দেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ দিকে স্থানীয়দের মূল্যায়ন না করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা বলেন, অন্য উপজেলা কিংবা জেলায় কোন প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগ দিতে স্থানীয়দের মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু হাটহাজারীতে এর ব্যতিক্রম। উপজেলায় শত শত শিক্ষিত বেকার রয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতানুযায়ী নিয়োগ দিলে বেকারের সংখ্যা কমে যাবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।

জানতে চাইলে কৃত্রিম প্রজনন প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক শাহজামান খাঁন তুহিন জানান, প্রাথমিক যন্ত্রপাতির বিষয়ে প্রকল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তারাই বলতে পারবেন। সামনে নতুন করে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। আগে স্থানীয়দের কেন বাদ দিল বা কিভাবে কি করল সেটা জানা নেই। তবে এবার অবশ্যই স্থানীয়দের প্রাধান্য দেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে