এক সময় খেজুর গুড় অনেকেই পছন্দ করতেন। শীতের এ মৌসুমে খেজুর গুড়ের পিঠা বানানো হতো গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে। তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে ভেজাল খেজুর গুড়ের কারনে বর্তমানে চাহিদাও কমেছে অনেক। খাঁটি গুড়ের দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই গুড় কেনা থেকে বিরত থাকেন।
নাটোরের গুরুদাসপুরে রং, চিনি ও বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে প্রকাশ্যেই তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়। খাঁটি বলে বিক্রি হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে। এমনকি জেলার বাহিরেও প্রতিদিন শত শত মণ খেজুরের গুড় বিক্রি করা হচ্ছে।
উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে পাওয়া যায় এ চিত্র। প্রতিকেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ২৩০-৩০০ টাকায়। অধিক মুনাফার লোভে অসাধু গাছি ও ব্যাবসায়ীরা এই কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন যাবৎ বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব গুড় খেলে হতে পারে কিডনি নষ্টসহ ক্যানসারের মত মরণব্যাধি রোগ।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের সিধুলী গ্রামে একটি খেজুর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চুলায় জ্বলছে আগুন। খেজুর রসের সঙ্গে কম দামের চিনি মিশিয়ে চুলায় ঢালা হচ্ছে। তারপর গুড়ের রং উজ্জল করার জন্য লাল, খয়েরী রং ও গুড় জমানোর জন্য দেওয়া হচ্ছে বিষাক্ত হাইড্রোজ। এ চিত্র শুধু সিধুলী নয় বরং উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই। আগে বড় বড় ব্যবসায়ীরা ভেজাল গুড় বেশি তৈরি করলেও গাছিরা অল্প গুড়ে ভেজাল দিতো না। কিন্তু অধিক মুনাফার জন্য এখন বেশিরভাগ গাছিও ভেজাল গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন।
আব্দুল জব্বার নামের এক গাছি জানালেন, খাঁটি গুড় তৈরি করলে বিক্রির সময় ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। তাই অল্প চিনি মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন তারা। তবে ৫ বছর আগেও প্রায় সব গাছিই খাটি গুড় তৈরি করতেন। সময়ের পরিবর্তন, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারনে বেশি লাভের আশায় এগুলো করছেন তারা। সবাই করে তাই তিনিও শুরু করেছে গত দুই বছর ধরে। তবে অন্যদের মত রং ও হাইড্রোজ ব্যবহার করেন না। শুধু চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। পরবর্তীতে এমন কাজ করবেনা বলেও জানান এই গাছি।
চাঁচকৈড় এলাকার গুড় ব্যবসায়ী মুনজুরুল করিম বলেন, ইটভাটায় খেজুর গাছ ব্যবহার করায় কমেছে গাছের সংখ্যা। দেখা দিয়েছে রসের সংকট। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল গুড়। গাছিরা বাজারে যে গুড় নিয়ে আসেন সেগুলোই তারা ক্রয় করে কারখানায় প্রস্তুত করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। গাছিরা ভেজাল গুড় দিলে তাদের কিছু করার নেই।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এসএম শহিদুল ইসলাম সোহেল বলেন, এ সব ভেজাল গুড় স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। এসব গুড় তৈরি বন্ধে কার্যক্ররী পদক্ষেপ প্রয়োজন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নাটোরের সহকারী পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। খোঁজ খবর নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে ভেজাল গুড় তৈরি বন্ধ করবেন।