সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সিলেটে বাড়ছে সীমান্ত হত্যা নেপথ্যে চোরাচালানের দ্বন্দ্ব

কাইয়ুম উলস্নাস, সিলেট
  ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সিলেটে বাড়ছে সীমান্ত হত্যা নেপথ্যে চোরাচালানের দ্বন্দ্ব

সিলেটে সীমান্ত হত্যা বাড়ছে। ভারতের খাসিয়ারা গাঁদা বন্দুক দিয়ে গুলি করে মারছে বাংলাদেশী নাগরিকদের। সিলেট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে বেআইনি অনুপ্রবেশকালে ঘটছে এসব হত্যার ঘটনা। অবশ্য, ঘটনার পরপরই সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিজিবি। কিন্ত গেলো বছরের ডিসেম্বর মাসেই দুটি হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ-শঙ্কা দেখা দিয়েছে সিলেটের সীমান্তে। বিএসএফ নয়, খাসিয়ার গুলিতে তাদের মৃতু্য হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, সম্প্রতি খাসিয়াদের সঙ্গে চোরাচালান নিয়ে বাংলাদেশী নাগরিকদের বিরোধ দেখা দিয়েছে।

বিজিবি সিলেটের সূত্র জানায়, গত ২৭ ডিসেম্বর দমদমিয়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ১২৬১ থেকে আনুমানিক ২০০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে সবুজ মিয়া (২২) নামের এক বাংলাদেশী নাগরিকের মৃতু্য হয়েছে। সবুজ মিয়া গোয়াইনঘাটের ভিতরগুল গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। ঘটনার দিন সবুজ মিয়ার সঙ্গে আরও কয়েকজন লোক ছিলেন। তারা ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে খাসিয়ারা ছররা গুলি করে সবুজকে। সবুজের লাশ তার বন্ধুরা উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যায় বিজিবি। সেখানে এ হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদ জানায় বিজিবি।

1

এদিকে, এর একদিন আগে গত ২৬ ডিসেম্বর মিনাটিলা বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ১২৮২/৭-এস হতে আনুমানিক ৬০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে মোঃ মারুফ মিয়া (১৬) নামের এক কিশোরকে হত্যা করে ভারতীয় খাসিয়ারা। নিহত মারুফ জৈন্তাপুর উপজেলার ঝিংগাবাড়ি গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে। মারুফ ও তার সঙ্গীরা ভারতের ভিতরে সুপারিবাগানে প্রবেশ করলে খাসিয়ারা গাঁদা বন্দুক দিয়ে এক রাউন্ড গুলি করে। মারুফকে আহত অবস্থায় তার সঙ্গীরা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় চোরাচালান পণ্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসছে চোরাকারবারিরা। ভারতীয় চিনি, গরু, কসমেটিকস ও ওষুধ ভারত থেকে দেশে আনা হচ্ছে। আর বাংলাদেশ থেকে রসুন পাচার হচ্ছে ভারতে। সম্প্রতি ভারতীয় খাসিয়াদের সুপারিবাগান ও জঙ্গলের ভিতর হয়ে চোরাচালান পণ্য বোঝাই বস্তা নিয়ে আসে সীমান্তের কিছু বাংলাদেশী নাগরিকরা। একটা বস্তা ভারত থেকে নিয়ে এলে তারা পায় ৫ শ টাকা। খাসিয়া ও বাংলাদেশী নাগরিকরা মিলেমিশে এই চোরাচালান পণ্য আনানেওয়া করছে। কিন্তু ইদানিং চোরাচালানের টাকার হিসাব নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। যেকারণে একের পর এক সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে ভারতীয় খাসিয়ারা।

সংগ্রাম পুঞ্জি সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দা সজিব উদ্দিন জানান, সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে সুপারিবাগানের ভিতর দিয়ে চোরাচালান পণ্য আনা হচ্ছে। খাসিয়ারা এই চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। অনেক সময় চোরাচালানের পাওনা টাকার বিরোধ নিয়ে খাসিয়ারা এসব হত্যার ঘটনা ঘটায়। জাফলং নয়াবস্তির তাহের মিয়া বলেন, এখনও চোরাচালান চলছে। টাকা না দিয়ে মাল নিয়ে পালাতে গিয়ে চোরাকারবারিদের সঙ্গে খাসিয়াদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

এ বিষয়ে সিলেটের ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান পিএসসি বলেন, সীমান্ত হত্যার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পতাকা বৈঠক করে প্রতিবাদলিপি এবং উক্ত ভারতীয় নাগরিককে দ্রম্নত আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে