সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পীরগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা

৩২ জন ডাক্তারের স্থলে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ৫ জন
পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
  ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
পীরগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ৩২ জন ডক্তারের স্থলে কর্মরত আছেন ৭ জন। এর মধ্যে মাতৃত্বকালিন ছুটিতে আছেন একজন। উচ্চতর কোর্ষ করার জন্য এরই মধ্যে চলে যাবেন আরও দুইজন ডাক্তার। থাকবেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ৪ জন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ততার কারণে চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন না। বাকি ৩ জন ডাক্তার দিয়েই চালাতে হবে ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম।

এ দিকে ১১ বছরেরও অধিক সময় ধরে এ হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এক্র-রে) থেকেও নেই। সব মিলে চিকিৎসা সেবার নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে এখানে। সেবা পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষকে। সবার জন্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে এ হাসপাতালে দ্রম্নত ডাক্তার পোস্টিং দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন উপজেলার সুশীল সমাজ। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও বলছেন, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

1

উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অফিস সূত্রে জানা যায়, পীরগঞ্জ উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসাস্থল এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স। ২০১০ সালে স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এ হাসপাতালে চিকিৎসক পদে ৩২ জন থাকার কথা থাকলেও এখন রয়েছে ৭ জন। এর মধ্যে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা একজন। বাকি ৬ জন ডাক্তার দিয়ে কোনো মতে চলছিল চিকিৎসা সেবা।

এ দিকে এক্স-রে মেশিন খারাপ থাকায় ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর এ হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এক্স-রে) আব্দুর শুকুরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়। একই সঙ্গে রাজশাহী মেডিকেলের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এক্স-রে) আব্দুর রাজ্জাককে পীরগঞ্জ হাসপাতালে বদলি দিয়ে তাকে ডেপুটেশনে আবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই কাজ করার আদেশ দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক। তখন থেকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেপুটেশনে কর্মরত আছেন আব্দুর রাজ্জাক।

২০২৩ সালে ১৬ এপ্রিল পীরগঞ্জ হাসপাতালে নতুন প্রটোকল এক্স-রে মেশিন সরবরাহ করে কর্তৃপক্ষ। মেশিনটি এক্স-রে কক্ষে সেট আপও করা হয়। কিন্তু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকায় এক্স-রে কার্যক্রম চালু হয়নি। আব্দুর রাজ্জাকের ডেপুটেশন বাতিল করে তাকে পীরগঞ্জে ফিরিয়ে দিতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হলেও তার ডেপুটেশন বাতিল করা হচ্ছে না। চালকের অভাবে নতুন মেশিনটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হলে হাসপাতালের প্যাথলোজি বিভাগে কর্মরত সাইফুল ইসলামকে দিয়েই এখন কোন মতে সচল রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে হাসপাতালে প্রায় ছয় বছর ধরে সিজার কার্যক্রম বন্ধ আছে। ফলে এলাকার গর্ভবতী নারীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। রোগীদের বিভিন্ন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিতে এক ডজনেরও বেশি দালালচক্র সক্রিয় রয়েছে হাসপাতাল চত্বরে। কম খরচে চিকিৎসা করে দেওয়ার কথা বলে হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা রয়েছে এসব দালালচক্রের মধ্যে। তবে রক্ত ও মলমূত্র পরীক্ষার কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। কিন্তু অনেকেই বিষয়টি জানে না। এ কারণে হাসপাতালে রক্ত ও মলমূত্রের পরীক্ষাও হয় সীমিত।

অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কিংবা কাটাছেঁড়া করা রোগী জরুরি বিভাগে এলে টাকা ছাড়া সেবা পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টাকা না দিলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা আউট সোর্সিং এ নিয়োগ পাওয়া ওয়ার্ডবয়রা এসব রোগীর শরীরে হাত দিতে চান না। তবে ৫০-১০০ টাকা দিলে সেবা দেন ঠিকই।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা বুলবুল আহাম্মেদ বলেন, পীরগঞ্জ হাসপাতালে কোনো চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ৩০ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে তিনি তার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরী বিভাগ ও বহির্বিভাগে খোঁজ নেন। কোনখানেই ডাক্তার নেই। পরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ফোন করেন তিনি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা একজন ডাক্তার পাঠাচ্ছেন বলে জানান। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও ডাক্তার না আসায় অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে ফিরে আসেন। হাসপাতালে এমন পরিবেশ নিত্যদিনের।

আমিনুল ইসলাম নামে একজন শিক্ষক বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কোন ডাক্তার পাচ্ছেন না রোগীরা। এ হাসপাতালে ডাক্তার পোস্টিং দেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল জব্বার বলেন, 'আমাদের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সেবা প্রদানে কোনো ধরনের গাফিলতি করা হচ্ছে না। ডাক্তার সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানানো হয়েছে। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আশা করছি একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে