দেশের ভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর মু্যরাল ও আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং দলটির নেতাকর্মীদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে পতিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতভর এই ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তারা। এর আগে '২৪-এর বিপস্নবী ছাত্রজনতা' শীর্ষক একটি ব্যানার থেকে 'বুলডোজার মিছিলের' কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। প্রতিবাদকারীরা 'জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো', 'ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, ফ্যাসিবাদের আস্তানা' 'দিলস্নী না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা'- এমন নানা স্স্নোগান তোলে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা।
সারাদেশ থেকে আমাদের আঞ্চলিক অফিস, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
চট্টগ্রাম বু্যরো জানিয়েছে, পতিত শেখ হাসিনার বক্তৃতা দেওয়াকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও নগরের জামাল খান এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মু্যরাল ভাঙচুর করেছে তারা।
বুধবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে নগরের জামাল খান ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের মু্যরাল ভাঙচুর করতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পুরনো একাডেমিক ভবনের সামনে একটি মু্যরাল ভাঙচুর করেছে ছাত্ররা। মেডিকেলে ভাঙচুরের পর মশাল মিছিলটি নগরের জামাল খান এলাকায় যায়। সেখানে দেয়ালে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের মু্যরালও হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা।
এ সময় তারা সাংবাদিকদের বলে, দেশকে অস্থিতিশীল করতে শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থেকে উসকানিমূলক বক্তৃতা দিচ্ছেন। দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। কোনোভাবেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেওয়া হবে না। এটির প্রতিবাদে তারা ভাঙচুর করছে।
স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজ থেকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ বিরোধী স্স্নোগান দিয়ে প্রথমে জেলা কালেক্টর ভবনের সামনে শেখ মুজিব ও ফজিলাতুন্নেছার মূ্যলারটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয় ভাঙচুর করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রজনতা। এ সময় উপস্থিত ছিল সদর থানা পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মীরা।
স্টাফ রিপোর্টার, সুনামগঞ্জ জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে শেখ মুজিবের পাঁচটি মু্যরাল ভেঙে গুডিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা। গত বুধবার দিনগত রাতে জেলা সদরের বিভিন্ন দপ্তরের সম্মুখে স্থাপিত এসব মু্যরাল ভাঙেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
রাতভর সুনামগঞ্জ পৌরসভা, ঐতিহ্য জাদুঘর, মুক্তিযোদ্ধা ভবন, জেলা পরিষদ ও সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে স্থাপিত শেখ মুজিবের মু্যরাল ভেঙে ফেলা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক ইমনদ্দোজ্জা বলে, 'শেখ মুজিবের মু্যরালগুলো ফ্যাসিবাদের প্রতীক। এগুলোকে বিগত সময়ে অতি ভক্তি দেখাতে দেখাতে স্রোষ্টার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই প্রতীকগুলো দেখে আগামীতে যাতে কেউ ফ্যাসিবাদে অনুপ্রাণিত না হয় সেজন্য আমরা এগুলো ভেঙে দিয়েছি।'
রংপুর প্রতিনিধি জানান, রংপুরে এক রাতেই বুলডোজার দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি মু্যরাল গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। এ সময় বিক্ষুব্ধরা নাম ফলকসহ মু্যরালে লেখা শেখ মুজিবের বাণী মুছে দেয়। বুধবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে তাদের অভিযান চলে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা জানিয়েছে, প্রথমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মু্যরাল ভাঙচুর করা হয়। পরে সেটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। চত্বরটিকে মুক্তমঞ্চ নামে ঘোষণা দেয় তারা।
এদিকে রাত পৌনে ১০টার দিকে নগরীর কলেজ রোড লালবাগ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জড়ো হয়ে কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তারা মূল ফটকের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের মু্যরালটি হাতুড়ি, কুড়াল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙচুর করে এবং স্স্নোগান দিতে থাকে। তাদের সঙ্গে মু্যরাল ভাঙচুরে অংশ নেন সাধারণ ছাত্র-জনতা। দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু মু্যরালটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। এর আগে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচু্যত হলে সেখানে বঙ্গবন্ধুর মু্যরালটি ভেঙে ক্ষতবিক্ষত করে শহীদ আবু সাঈদের ছবি সম্বলিত একটি ব্যানার সাঁটানো হয়েছিল। স্থানটির নামকরণ করা হয় স্বাধীনতা চত্বর।
এদিকে ভাঙচুরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব রাজিমুজ্জামান হৃদয় বলে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিব মু্যরালের কবর রচনা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুলডোজার দিয়ে ফ্যাসিবাদী মুজিব চিহ্ন মুছে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কারমাইকেল কলেজের ভাস্কর্য বেদির একটি ছবি পোস্ট করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার লিখেছে, 'স্বাধীনতার ভাস্কর্য অক্ষুন্ন রেখে ফ্যাসিবাদের কবর দেওয়া হলো।'
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ছাত্র-জনতা রংপুর মহানগরীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, ধানমন্ডি ৩২ এর বুলডোজার কর্মসূচির ঢেউ লেগেছে পাবনাতেও। বুলডোজার দিয়ে পাবনার ঈশ্বরদীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনা আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে দেওয়া হয়।
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শেখ রাসেল আবাসিক হলের নামফলকও মুছে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও ঈশ্বরদী আলহাজ্ব মোড়ে স্মৃতিস্তম্ভের পাশে নির্মিত বিদ্বেষ ছড়ানো 'ঘৃণাস্তম্ভ' ভেঙে গুড়িয়ে ফেলেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বুধবার দিবাগত রাতব্যাপী এ সব ঘটনা ঘটে।
এর আগে রাত ৯টার দিকে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে বড় পর্দায় জুলাই-আগস্টের গণঅভু্যত্থানের ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের পাবনা জেলার আহ্বায়ক বরকত উলস্নাহ ফাহাদ বলে, 'দেশের কোথাও ফ্যাসিবাদের চিহ্ন থাকবে না ইনশাআলস্নাহ।'
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, 'পাবনা জেলায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে। নিয়মিত পুলিশের টহল কার্যক্রম অব্যাহত আছে। কোথাও কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। আমরা এরকম (ভাংচুর) কোনো অভিযোগ পাইনি।'
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাতক্ষীরায় জুলাই বিপস্নবের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মু্যরাল ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে।
বুধবার রাত ৮টার দিকে জেলা শহরের সদর হাসপাতালের সামনে খুলনা রোড মোড়ে জড়ো হয়ে মুজিববাদ বিরোধী বিভিন্ন স্স্নোগান দিতে থাকে। এরপর তারা বঙ্গবন্ধুর মরাল ভাঙচুর করে।
অন্যদিকে জেলা পরিষদ চত্বর এবং সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপেস্নক্সের মু্যরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এ সময় উপস্থিত ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আরাফাত হোসেন, মুখ্য সংগঠক আল সারিহা, ইব্রাহিম খলিল, রাহাত হোসেন।
আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর আত্রাইয়ে বঙ্গবন্ধুর মু্যরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নেতৃত্বে উপজেলার আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের উত্তরে ও মুক্তিযোদ্ধা কমপেস্নক্সের সামনে নির্মিত দুইটি মু্যরাল ভেঙে ফেলা হয়।
জানা যায়, গত ২০২০-২১ সালে সরকারী অর্থায়নে মু্যরাল দুইটি নির্মাণ করা হয়। তদানীন্তন স্থানীয় এমপি ইসরাফিল আলমের সময়ে এ মু্যরালগুলো নির্মাণ হয়েছিল। এর পরবর্তী সময় থেকে বিভিন্ন দিবসগুলোতে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে ও সরকারীভাবে রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন মু্যরালটিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করত।
এদিকে বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এ র্মুযাল দু'টি ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিল আত্রাইয়ের ছাত্র জনতার নেতৃত্বে তারেক আহমেদ সম্রাট, সৌরভ, মেহেদী, জিহাদ, রিফাত প্রমুখ।
ময়মনসিংহ বু্যরো জানায়, ময়মনসিংহ নগরের সার্কিট হাউস মাঠ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মু্যরাল ভাংচুর করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাতুড়ি-শাবল নিয়ে মু্যরাল ভাংচুর করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সদস্য সচিব আলী হোসেন, জেলা কমিটির মুখপাত্র ফয়সাল ফারনিম, মহানগর কমিটির সদস্য সচিব আল নুর মো. আয়াস, মহানগর কমিটির যুগ্ম আহব্বায়ক নাফিউস রোহানসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৫-২০ জন নেতাকর্মী।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সদস্য সচিব আলী হোসেন বলে, 'পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পরেও আবার সে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এ অপতৎপরতা দেশের ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। তারই প্রতীক স্বরূপ ধানমন্ডির-৩২ নম্বরের মতো ময়মনসিংহেও স্বৈরাচারের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুরের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে ছাত্র-জনতা।'
অপরদিকে ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু হলের 'মুজিব' মু্যরাল।
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ক্যাম্পাসে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মু্যরাল ভাংচুর করেছে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে মিছিলটি কলেজের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে গিয়ে সেখানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের মু্যরাল হাতুড়ি, শাবলসহ বিভিন্ন যন্ত্রাদি দিয়ে মু্যরালটি ভাংচুর করে।
এ সময় উপস্থিত ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থী, বাইজিদুর রহমান সিয়াম, বোরহান উদ্দিন সিয়াম, মুহাইমিনুল আজবিন, আতিকুল আলম শান্ত, সুলতান নাঈম উদ্দিন প্রমুখ।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থী বাইজিদুর রহমান সিয়াম বলে, 'ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুজিববাদী কোনো স্থাপনার ঠাঁই হবে না। যত জায়গায় এসব মু্যরাল রয়েছে বা মুজিববাদের চিহ্ন রয়েছে সবগুলো উচ্ছেদ করা হবে।'
স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর জানান, মাদারীপুর শহরের পুরানবাজারে অবস্থিত আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয় বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাংচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সাড়ে ১২টার দিকে শহরের পুরান বাজার এলাকায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় এবং বড় বড় হাতুড়ি নিয়ে জেলা কার্যালয়ের দরজা, জানালা, দেয়াল ভাংচুর করে।
বিক্ষুব্ধদের দাবি, এটি স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি। তাই প্রতিবাদী জনগন স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে দিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাংচুর চালায়।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও সাবেক সাংসদ শফিকুল ইসলামের জান্নাতি প্যালেস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার বিকালে এ ভাঙচুর চালানো হয়।
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা জানায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক ও দলীয় কার্যালয় ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ সময় তারা দলীয় কার্যালয়টির স্থানে 'জুলাই স্মৃতি শিশু পার্ক' করার ঘোষণা দেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর অন্যতম প্রতিনিধি তামিম জানায়, শেখ হাসিনার ভারত থেকে বক্তব্য দেওয়ার প্রতিবাদে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নাটোর জেলা আওয়ামী কার্যালয় ভেঙে 'জুলাই স্মৃতি শিশু পার্ক' করা হবে।
পুলিশ সুপার মারুফাত হোসাইন জানান, বিষয়টি তিনি অবগত নন, খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন।
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর জানান, গণঅভু্যত্থানে সরকার পতনের পর ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার অনলাইনে ভাষণের ঘোষণা দেওয়ার প্রতিবাদে যশোরের সর্ববৃহৎ মু্যরালসহ ৭টি স্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুর করা হয়েছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে শেখ হাসিনার নামফলকও ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রসমাজের উদ্দেশে শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের ঘোষণা আসার পরপরই এর পাল্টা কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুধবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা প্রথমে যশোর পৌরসভার ভেতরে শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্য ভাংচুর করে গুড়িয়ে দেয়। এরপর মোটর সাইকেলে স্স্নোগান দিতে দিতে মুক্তিযোদ্ধা কমপেস্নক্স ভবনের শেখ মুজিবুর রহমানের মু্যরাল, বকুলতলার ভাস্কর্য, জেলা পরিষদের ভেতরে মু্যরাল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেখ হাসিনার নামফলক, মনিহার বিজয় স্তম্ভের প্রাচীরে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের দৃশ্যপট খোদাই করা ভাস্কর্য ভাংচুর করে। সেখান থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা সদর উপজেলা পরিষদের ভেতরে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুর করে গুড়িয়ে দেয়। বুধবার রাতভর পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোর শহরের বকুলতলায় সর্ববৃহৎ মু্যরালটিও স্কেভেটর দিয়ে দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া অভয়নগর, ঝিকরগাছা, কেশবপুরে উপজেলা পরিষদের ভাস্কর্য ভাঙচুর করার ঘটনাও শোনা গেছে।
যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, 'কয়েকটি স্থানে ভাংচুর হয়েছে বলে শুনেছি। কে বা কারা করেছে সেটা জানা নেই।'
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় প্রাঙ্গণে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের কয়েকটি মু্যরাল ও স্থাপনা ভাঙচুর করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এ সময় নির্মাণ শ্রমিকদের ডেকে হাতুড়ি, শাবল দিয়ে এসব ভাঙচুর করা হয়।
বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। পরে তারা নির্মাণ শ্রমিকদের খবর দেয়। তারপর শুরু হয় ভাঙচুর।
এদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলার 'বঙ্গবন্ধু কর্নার' ভাঙচুর চলে। সেখানে থাকা ছবি ও ফটোফ্রেম ভাঙচুর করা হয়। আর বঙ্গবন্ধুর মু্যরাল ভাঙচুরের বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের নেতৃত্ব দেয় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্যসচিব অ্যাডভোটেক আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলে, 'গতকাল দেখেছেন শেখ মুজিবের ৩২ নম্বরের বাড়ি ভেঙেছে জনগণ। আমরা তারই ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিবের মু্যরাল বা ছবি ভেঙে দিচ্ছি। যেখানে আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবের কোনো ছবি বা স্মৃতিচিহ্ন আছে সবগুলো ভেঙে ফেলা হবে।'
অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলে, 'শেখ মুজিবের এসব ছবি দিয়ে আওয়ামী লীগ পবিত্র বিচারাঙ্গণকে কলুষিত করেছে। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন প্রশাসন ও বিচারবিভাগকে কলঙ্কিত কাউকে করতে না পারে সেজন্য নারায়ণগঞ্জের সাধারণ আইনজীবীরা এসব ছবি অপসারণ করেছে।'