সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

মধ্যনগরে সিন্ডিকেট না থাকায় তিনগুণ রাজস্ব পেল সরকার

নিকলীতে ১৫ বছর পর গরুরহাটে ইজারা সর্বোচ্চ
মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) ও নিকলী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ০৫ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
মধ্যনগরে সিন্ডিকেট না থাকায় তিনগুণ রাজস্ব পেল সরকার

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সিন্ডিকেট না থাকায় তিনগুণ রাজস্ব বেশি পেল সরকার। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আতাত করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার প্রমাণ হয় এবছর। গত দেড়যুগ ধরে বিভিন্ন হাট-বাজার ও নৌকাঘাটের সরকারি রাজস্ব লুটপাট করেছে আওয়ামী ক্ষমতাশালী নেতারা। ক্ষমতাবলে শিডিউল ছিনিয়ে নিয়ে কম দামে হাট-বাজার হাতিয়ে নিত। তাছাড়া এবছর সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার ১৪৩২ বঙ্গাব্দের জন্য সরকারি হাট-বাজারে ইজারা পেতে কোন শক্তিশালী গ্রম্নপের বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়নি আগ্রহীদের। সিন্ডিকেট না থাকায় এ উপজেলার চারটি সরকারি হাট-বাজার ও একটি নৌকা-ঘাট থেকে প্রায় তিনগুণ বেশি রাজস্ব পেয়েছে সরকার।

জানা গেছে, উপজেলার চারটি হাট-বাজার মধ্যনগর, বংশীকুন্ডা, মহিষখলা ও ভোলাগঞ্জ, চলতি ১৪৩১ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারা দিতে গত বছরের ১৮ জানুয়ারি ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি কাঙ্‌িক্ষত দাম উলেস্নখ করা হয়, মধ্যনগর ৬৯ লাখ ২৭ হাজার ২৭৭ টাকা,মহিষখলা ৭৪ লাখ ৫৬ হাজার ১২৪ টাকা,বংশীকুন্ডা ২ লাখ ১০ হাজার ৬২২ টাকা ও ভোলাগঞ্জ ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৬ টাকা। তৎকালীন আওয়ামী লীগের এমপি রঞ্জিত সরকারের নেতৃত্বে কম টাকায় বাজার ইজারা নিতে সিন্ডিকেট তৈরি করেন। পরে বাজারের ইজারা নিতে ইচ্ছুক এমন লোকজনের শিডিউল ক্রেতাদের কাছ থেকে গোপনে হুমকি দিয়ে, শিডিউল হাতিয়ে নেন তৎকালীন এমপি রঞ্জিত সরকারের লোকজন। সরকারি কাঙ্‌িক্ষত মুল্যের চেয়ে সামান্য বেশি দাম দিয়ে মহিষখলা ও ভোলাগঞ্জ বাজার দুটি ইজারা নিলেও মধ্যনগর ও বংশীকুন্ডা বাজারের ইজারা নেয়নি সিন্ডিকেট। প্রথম থেকে তৃতীয় পর্যায়ে কেউ শিডিউল জমা না দেওয়ার অজুহাতে বাজার দুটি খাস কালেকশনে দেওয়া হয়। নামে মাত্র অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে প্রশাসনের সহায়তায় বাজার থেকে অর্থ লুটে নেন সিন্ডিকেট। এবছর উপজেলার এ চারটি বাজার থেকে গত বছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি টাকা পেয়েছে সরকার। সিন্ডিকেট না থাকা ১৪৩২ বঙ্গাব্দের জন্য মধ্যনগর বাজার সরকারি কাঙ্ক্ষিত ইজারা মূল্যে ৬৯ লাখ ২৭ হাজার ২৭৭ টাকার বিপরীতে ৯০ লাখ টাকা,মহিষখলা বাজার ৭৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫১ টাকার বিপরীতে ১কোটি ৬৬ লাখ টাকা,বংশীকুন্ডা বাজার ২ লাখ ১০ হাজার ৬২২ টাকার বিপরীতে ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা,ভোলাগঞ্জ বাজার ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭০ টাকার বিপরীতে ২৩ লাখ টাকায় নিতে আগ্রহ দেখান ইজারাদারগণ।মধ্যনগর ইউএনও উজ্জ্বল রায় বলেন, কোন সিন্ডিকেট যেন বাজারের শিডিউল কেনা এবং ড্রপ করায় বাঁধাগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। সেজন্যে আমরা উপজেলার সবকটি বাজারই কাঙ্ক্ষিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে ইজারা দিতে পেরেছি।

নিকলী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলাটি একটি হাওড় অধু্যষিত উপজেলা। সেই উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। উপজেলায় প্রায় ২ লক্ষাধিক জনগণের বসবাস। জারইতলা ইউনিয়নের আঠারোবাড়িয়া গরুরহাটটি গত সাড়ে ১৫ বছরের মধ্যে এই বছর সর্বোচ্ছ ইজেরা হয়েছে ৩ কোটি ১ লক্ষ ৫০টাকা। ৭টি ইউনিয়নের ১০ হাট-বাজারের ইজারা প্রধান করা হয় এতে শিডিউল ক্রয় করে বিভিন্ন গ্রামে ৭৪ জন ইজারা দার। গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় উপজেলা হল রুমে এটি প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জারইতলা ইউনিয়ের আঠারোবাড়িয়ার গোপিরায়ের গরুরহাট জেলার মধ্যে প্রতিবারের মতো এবার ও সর্বোচ্চ ইজারা হয়েছে। এবাজারটি ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতি বুধবার গরু, ছাগল, মহিষের হাট বসে। দেশের কয়েক জেলার পাইকাররা এই গরুর হাটে আসেন। প্রতি হাটে লক্ষ লক্ষ টাকার গরু, ছাগল, মহিষ বিক্রি হয়। কিন্তু এইবাজারে জায়গার সংকুলান করলে সরকার প্রতি এই বাজার থেকে কোটি টাকার রাজস্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই হাটটি আঠারোবাড়িয়া এলাকার ১৩ সমাজ একত্র হয়ে বাজারটিকে চালান। বাজারের আয় দিয়ে মসজিদ,গরিব ও এতিমদের সাহায্য করা হয়। গত বৃহস্পতিবার শিডিউল প্রকাশ অনুষ্ঠানে হাট বাজার ইজারা কমিটিতে নিখলী উপজেলা কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তার,উপজেলা প্রপকৌশলী সাইফুল ইসলাম, সমাজ সেবা অফিসার আসিফ ইমতিয়াজ মনির উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তার গরুহাটের সর্বোচ্চ দরদাতা আঠারোবাড়িয়া গ্রামের মৃত মুসলিম উদ্দিনের ছেলে আলী জামসেদের নাম প্রকাশ করেন। ৩ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ৮শ' টাকার মধ্যে শিডিউল জামা দেন।

জানা যায়, গত সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের আমলে অনেক কমে এই বাজারটি ইজারা দেওয়া হতো। একই সঙ্গে সরকার এই বাজার দিকে রাজস্ব কম পেয়েছেন। এই বিষয়ে সর্বোচ্চ করদাতা আলী জামসেদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় ১২ বছর আওয়ামী লীগের লোকজন এবং উপরমহলের তৎবীরে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বাজারটির ইজারা নিয়েছেন। তিনি বলেন, এই বছর কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্যে এই গরুর বাজারের সর্বোচ্চ ইজারা হয়েছে। সর্বোচ্চ ইজারা হয়েছে ঠিকই! কিন্তু যদি সরকার এই বাজারটির সম্প্রসারিত করে তবে হয়তো সামনের বছর আরও বাড়তে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে