সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

আট মাস ধরে বেতন না পেয়ে আর্থিক সংকটে চাঁদপুরের ২২৮ সিএইচসিপি

চাঁদপুর প্রতিনিধি
  ০৬ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
আট মাস ধরে বেতন না পেয়ে আর্থিক সংকটে চাঁদপুরের ২২৮ সিএইচসিপি

চাঁদপুরে আট মাস ধরে বেতন পান না ২২৮ কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। বেতন না পাওয়ায় চরম আর্থিক কষ্টে ভুগছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া এসব স্বাস্থ্য কর্মীরা।

শুধু বেতন নয়, কোথাও কোথাও নিয়মিত ওষুধ সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। আবার কোনো কোনো কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত প্রদান করা ওষুধের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী সরকারি এই প্রতিষ্ঠান থেকে কাঙ্‌িক্ষত সেবা পাচ্ছেন না প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ।

তথ্য অনুযায়ী, জেলায় নির্মাণাধীনসহ ২৪৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি ক্লিনিকে সিএইচসিপির পদ শূন্য রয়েছে। ২২৮ জন সিএইচসিপি গত বছরের জুলাই মাস থেকে বেতন পান না। দীর্ঘদিন ধরে বেতন বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। কেউ কেউ ক্লিনিকে সেবা দেওয়ার মানসিকতাও হারিয়ে ফেলেছেন, কেউ তুলনামূলক কম সেবা দিচ্ছেন।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখতে অতিদ্রম্নত বেতন চালু করার দাবি জানিয়েছেন সিএইচসিপি থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা।

পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামীণ পর্যায়ে অসহায় গরিবের চিকিৎসা, গর্ভবতী ও প্রসূতি, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা, ইপিআই, কিশোর-কিশোরী ও নববিবাহিতদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকা সিএইচসিপিদের এমন কস্ট যেন একমাস দুইমাস নয়, চলমান ৯ মাস।

চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের দাসেরগাঁও কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি তাহমিনা আক্তার বলেন, 'নিয়মিত অফিস করি, কিন্তু বেতন পাইনা-এর থেকে অপমানের আর কী আছে? আপনজনেরাও এখন টাকা ধার দিতে ভয় পান, কারণ আমাদের বেতন হয় না।'

এদিকে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নায়নগর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি জানে আলম তালুকদার বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ৮ মাস বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিরা মানবতার জীবন যাপন করছে। পবিত্র রোজার মাসে অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্ট আছে। আশা করি, মানবিক দিক বিবেচনায় ঈদের আগে আমাদের বকেয়া পরিশোধ করবে সরকার, সেটাই আমাদের একমাত্র প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে ওষুধ স্বল্পতা, নতুন করে কোন ওষুধের কীট সরবরাহ করা হয়নি উপজেলায়। এতে জনগণের সঠিক চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। সেবা বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ, কমছে রোগীর সংখ্যাও। আমাদের শাহরাস্তি উপজেলার কিছু সিসি স্বাস্থ্য শিক্ষা দিয়েই স্বাস্থ্য সেবা চালাতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নূর আলম দ্বীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিএইচসিপিদের বেতন বন্ধ আসলেই দু:খজনক একটি বিষয়। তবে অচিরেই তাদের এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, ৪র্থ এইচএনপিএসপি শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। ৫ম এইচএনপিএসপি চালু না হওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের বেতন হচ্ছেনা। তবে, এবার সেক্টর প্রোগ্রাম থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। আশা করা যাচ্ছে, মার্চ মাসেই ৫ম এইচএনপিএসপি হলে বেতন পাবে কর্মীরা, সংকট কিছুটা হলেও কেটে যাবে তাদের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে