নড়াইলের কালিয়া ও ফরিদপুরের সালথায় ক্যাপসিকামের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে দাম নিয়ে কৃষকের মুখে হতাশা দেখা দিয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
কালিয়া (নড়াইল) প্রতিনিধি জানান, নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় বিদেশি সবজি ক্যাপসিকামের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে পাইকারি বাজারে দাম কম হওয়ায় কৃষকের মুখে হতাশা দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাপসিকাম চাষ করে সুফলের আশা করছে কৃষক সিমান কুমার রায়। তার ফসলের মাঠে গাছে গাছে ঝুলছে ড্রিম, চয়েজ, মেশি ও সুইট বিউটি-৩ জাতের ক্যাপসিকাম। ফলন ভালো হওয়ায় তার মুখে ফুটেছে প্রশান্তির হাসি। কিন্তু পাইকারি বাজারে দাম কম হওয়ায় হতাশ তিনি।
কৃষক সিমান কুমার রায় কালিয়া পৌরসভার ছোট কালিয়ার গ্রামের শিবু পদ রায়ের ছেলে। তিনি আরও জানান, জমিতে বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম ফলাতে হবে। ক্যাপসিকাম মিষ্টি মরিচ হিসেবে পরিচিত। এমন চিন্তা থেকে এ বছরে কালিয়ায় প্রথম নিজ উদ্যোগে ডিসেম্বর মাসে বীজ থেকে ক্যাপসিকামের চারা উৎপাদন শুরু করেন।
তিনি ৪৫ শতাংশ জমিতে ৪ হাজার চারা রোপণ করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ডিএপি, এমওপি, জিংক, বোরন ও জৈব সার ব্যবহার করেন। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে দেড় বিঘা জমিতে ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আসাকরছি ৪ হাজার গাছে সাড়ে ৩ হাজার কেজি ফল পাবো। পাইকারি বাজারে দাম কম হওয়ায় বাজারজাত করতে পারছি না। যেখানে খুচরা বাজারে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে সেখানে পাইকারি বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দাম। সরকার যদি ন্যায্য মূল্যের ব্যাবস্থা করেন তাহলে আমিসহ এলাকার কৃষকরা লাভবান হবো।
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার, রুবেল হাওলাদার বলেন, কালিয়ায় নতুন নতুন ফসল কৃষকের হাতে তুলে দিতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কৃষক যদি তার পণ্যের বাজার ও ন্যায্য দাম না পায় তবে ভবিষ্যতে কৃষককে নতুন নতুন ফসলের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে আমরা বাধাগ্রস্ত হব।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ক্যাপসিকামে ভিটামিন বি, ই, কে থিয়ামিন অ্যাসিড, ফলিক অ্যাসিড, রাইবোফ্ল্যাভিন ইত্যাদি পাওয়া যায়। বড় হোটেল-রেস্তেুারাঁ ও চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলো ক্যাপসিকামের মূল ক্রেতা। এটি হচ্ছে খাবারের সাথে সালাদ। সঠিক পরিচর্যা ও সময়মত ওষুধ প্রয়োগে এ সবজি থেকে স্বল্প সময়ে ভালো লাভের সুযোগ রয়েছে। বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম উৎপাদন বাড়লে স্থানীয় কৃষকরা অনেকেই স্বাবলম্বী হবেন।
এক সময় শহরের বাসা-বাড়ির ছাদে টবের মধ্যে শখের বশে বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম চাষ করতেন অনেকেই। এখন আর ছাদে নয়, ফলন ভালো হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে জমিতে এ সবজিটি চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
পৌরসভার কৃষক রাজু আহম্মেদ বলেন, বীজ বপনের পর গাছগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। গাছ লাগানোর ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ফুল আসতে শুরু করে। ফুল আসার ২৫ দিনের মধ্যে ফল বিক্রির উপযুক্ত হয়। পাইকারি বাজারে দাম কম হওয়ায় আমি হতাশ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মলিস্নক বলেন, ক্যাপসিকাম চাষে কৃষকদের নানা ভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ চাষাবাদ বাড়াতে ও বাজারজাত করতে কাজ করছে। ক্যাপসিকামের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও চাষাবাদ বাড়ানো গেলে কৃষক লাভবান হবে। আমদানি নির্ভরতা অনেকটাই কমে আসবে।
সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের সালথায় পরীক্ষামূলক ক্যাপসিকাম চাষে সফল হয়েছেন নারী উদ্যাক্তা তানিয়া বেগম। সর্বপ্রথম এবছর ১০শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন তিনি। ফলন ভালো হওয়ায় তার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। তানিয়া বেগম উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের কুমারকান্দা এলাকার আরশাফ আলীর স্ত্রী।
স্থানীয় তরুন কৃষি উদ্যেক্তা কলেজ শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, 'আমি লাউ, পেঁপে, কুমড়া ও মরিচসহ অনেক ধরনের সবজি চাষ করে থাকি। এবছর আমাদের এলাকার একজন নারী উদ্যেক্তা তানিয়া বেগম ক্যাপসিকাম চাষ করে সফল হয়েছেন। আমিও আগামীতে ক্যাপসিকাম চাষ করব। বাজারে এর চাহিদা অনেক ভালো।'
নারী উদ্যেক্তা তানিয়া বেগম বলেন, 'এবছর শশা, পটল, লাউ ও মরিচ চাষের পাশাপাশি কৃষি অফিসের দেওয়া বীজ থেকে সর্বপ্রথম মালচিং পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছি। জমিতে ফলন ভালো হয়েছে। আগামীতে এর চাষ আরও বাড়বে। এটা লাভজনক চাষ।'
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার সুদীপ বিশ্বাস বলেন, যদুনন্দী এলাকার তানিয়া বেগম কৃষি অফিস থেকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত। তাকে কৃষি অফিস থেকে ক্যাপসিকাম চাষের জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা দেওয়া হয়। পরীক্ষামূলক এই চাষে ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এটা দেখে আগামীতে অনেকেই এই চাষ করবে।