বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
সিপিডির সংলাপে বিশেষজ্ঞরা

নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পেছনে সরকারের ইচ্ছাই গুরুত্বপূর্ণ

যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পেছনে সরকারের ইচ্ছাই গুরুত্বপূর্ণ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নির্বাচন থেকে প্রমাণ হয়েছে যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পেছনে সরকারের ইচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি প্রার্থীরাও যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেটাও নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন থেকে প্রমাণিত। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হলে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের বিষয়গুলো অর্থাৎ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রার্থী সর্বোপরি সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।

শনিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, নির্বাচন বিশ্লেষক, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা এমন মতামত দিয়েছেন।

'সদ্যসমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন: জনপ্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং অভিজ্ঞতা' শীর্ষক সংলাপে মূল বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তিনবারের নির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

আইভী বলেন, 'এবারের নির্বাচন কঠিন ছিল। তিনটি মেয়র নির্বাচন করেছি। তিন নির্বাচনের ফ্লেভার তিন রকম ছিল। কোনো নির্বাচনেই ষড়যন্ত্রের বাইরে ছিলাম না। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে নির্বাচন করেছি। যদিও আমার দল আওয়ামী লীগ সরকারে ছিল, কিন্তু প্রতিবারই বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়ে সাধারণ জনগণকে আস্থায় এনে নির্বাচনে জিততে হয়েছে।'

এ সময় নারায়ণগঞ্জে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সঙ্গে নিজের দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করে আইভী বলেন, 'আমার কোনো বাহিনী নেই। অনেক বাধা এসেছে, এমনকি আমাকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে। এরপরও কখনই বাহিনী তৈরি করিনি। আমার আস্থা আমার জনগণ। আমার লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ করা। তাই সারাক্ষণ মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করেছি। আমি কখনো কারো কাছ থেকে বেনিফিট নেইনি।'

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে এবার ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এতে ভোট কম পড়েছে বলে উলেস্নখ করে আইভী বলেন, 'ইভিএমের কারণে ভোট কমেছে, এটা সত্য। এমন না যে ভোটাররা ভোট দিতে আসেননি। আমার অসংখ্য ভোটার ফেরত গেছে।'

মেয়র আরও বলেন, 'নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরে ইন্টারনাল (অভ্যন্তরীণ) কিছু সমস্যা আছে- এটা সবার জানা। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই নির্বাচন করতে হয়েছে।'

অনুষ্ঠানের সভাপতি সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের এক প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেন, স্থানীয় প্রশাসন, সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় না হওয়ায় অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ড সময়মতো করা যায় না। এমনকি আইনও প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। এজন্য তিনি একটি ব্যবস্থা সৃষ্টির দাবি করেন।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, গণতন্ত্রকে দৃঢ় করার জন্য বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন তার উজ্জ্বল উদাহরণ। তবে কয়েকটি রাজনৈতিক দল মাঠে না থেকে মাঠের বাইরে বসে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে, এতে গণতন্ত্রেও ক্ষতি হচ্ছে। এ ধরনের রাজনৈতিক দলকে মাঠে নামানোর জন্য তিনি দেশের গবেষণা সংস্থা ও সুশীল সমাজকে কথা বলার অনুরোধ করেন।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি নিরপেক্ষ থাকে এবং প্রার্থী যদি দুর্নীতিগ্রস্ত না হন তাহলে নির্বাচন যে সুষ্ঠু হয় সেটা নারায়ণগঞ্জে প্রমাণিত হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের চেয়ে সরকারের ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এটাও প্রমাণিত হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ডক্টর তোফায়েল আহমেদ বলেন, নারায়ণগঞ্জে মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। ফলে এই নির্বাচনের প্রেক্ষিত, সফলতা অন্যান্য নির্বাচনের সঙ্গে মেলানো সহজ না। এরপরও একথা সত্য যে সরকার নির্বাচনটিকে অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছে। অন্যান্য নির্বাচনে সরকারের এই মনোভাব গণতন্ত্রের জন্য জরুরি।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, প্রার্থী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনমানুষ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পছন্দ করতে হবে। টাকার বিনিময়ে ব্যাংকের মালিক, টেলিভিশনের মালিকরা মনোনয়ন পেলে তারা বিনিয়োগ তোলার জন্য যে কোনোভাবে জিততে চাইবে। তখন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান কঠিন হয়ে পড়ে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রার্থীর আচরণ, সরকারের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। নারায়ণগঞ্জে সেটি প্রমাণিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে সুষ্ঠু নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সরকারের ভূমিকা রয়েছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে যৌথভাবে ভূমিকা রাখতে হবে।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো রওনক জাহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এ ছাড়া সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, রুমিন ফারহানা বক্তব্য দেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে