বেসরকারি মেডিকেলে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, একই আদলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করতে চায় উচ্চ শিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনেও এই সুপারিশ করেছিল ইউজিসি। বারবারই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সুপারিশ করেছে বলে জানিয়েছেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ডক্টর বিশ্বজিৎ চন্দ। তিনি বলেন, পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের সমতা আনা এবং চতুর্থ শিল্প বিপস্নবের আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী জনশক্তি গড়ে তোলার দিকে আমাদের যেতে হবে। সনদ-সর্বস্ব জনগোষ্ঠীর বোঝা জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার সময় শেষ। আগামী প্রজন্মকে চৌকষ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস আত্মহত্যার সামিল। জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা করছে ইউজিসি। তবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের সংগঠন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি শুরুতেই এই বিরোধিতা শুরু করেছে। তারা বলছেন, এতে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী পাবে না। তাদের অবস্থা একাদশে শিক্ষার্থী না পাওয়া কলেজগুলোর মতো হবে। বর্তমানে দেশে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে ১০৩টি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে সরকার অনুমোদিত উপাচার্য,উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নেই। বেশ কয়েকটির মালিকানা নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদন বহির্ভূত বিষয়-সাবজেক্ট পাঠদান করছে। ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে এক যুগেরও অধিক সময় অবৈধ ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে- এরূপ হাজারও অভিযোগ একেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে। এ অবস্থায় ছাত্র ভর্তির লাগাম টানতে চাইছে ইউজিসি। কারণ, সামর্থ্যের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করছে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক-অবকাঠামো-ল্যাব কোনো কিছুই নেই যাদের, তারা অননুমোদিত সাবজেক্ট খুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে। ইউজিসি'র ওয়েবসাইটেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির মান অনেক উন্নত এবং তাদের গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদাও ব্যাপক চাকরির বাজারে। এসব বিস্তর অভিযোগ-অনিয়ম কমাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ভর্তি পরীক্ষা চালুর পরিকল্পনা করছে ইউজিসি। এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ডক্টর বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে ভর্তি হতে হবে। এরপর তাদের পছন্দ অনুযায়ী, চয়েস ফর্ম পূরণ করতে পারবে। একেবারে অটোমেটিক সিস্টেমের মাধ্যমেই তারা ভর্তির সুযোগ পাবে। তিনি আরও বলেন, মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির যেমন পদ্ধতি আছে যে, একটি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়, এরপর অপশন অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে পাবলিক বা প্রাইভেট মেডিকেল চয়েস দিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও পাবলিক ও প্রাইভেটের পরীক্ষা একসঙ্গে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসা যায় কিনা, সে ব্যাপারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা যেতে পারে। কমিশন বলছে, মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার মতো একটি পরীক্ষা গ্রহণ করে মেধাতালিকার ভিত্তিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর একই তালিকা থেকে শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করতে হবে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সহ-সভাপতি এবং ওয়াল্ড ইউনির্ভাসিটির স্বত্বাধিকারী ও উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর আব্দুল মান্নান চৌধুরী বলেন, এ ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটতে পারে যে, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী না-ও পেতে পারে। যেমন, বর্তমানে কেন্দ্রীয়ভাবে বণ্টনের কারণে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। সেটাই কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব হবে, মানসম্মত শিক্ষা দেওয়ার। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে শিক্ষাবিদরা বলছেন, উদ্যোগটি ভালো এবং বিভিন্ন অভিযোগের সমাধান এর মাধ্যমে হতে পারে। একটি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করলে জোর মনিটরিং না থাকলে ফলপ্রসূ হবে না এই সিদ্ধান্ত। উদ্যোগ নিতে হবে ইউজিসিকে। কার্যকরে মূল ভূমিকাও তাদের।