সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
আগুনে পুড়ে গৃহহীন

কুনিপাড়া বস্তিবাসীদের জন্য লঙ্গরখানা চালু

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও কুনিপাড়ার রোলিং মিল বস্তিটি আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় -যাযাদি

সোমবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে গৃহহীন হওয়া কুনিপাড়া বস্তিবাসীদের জন্য লঙ্গরখানা চালু করা হয়েছে। লঙ্গরখানা থেকে গৃহহীন বস্তিবাসীদের মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত খাবার দেওয়া হবে। তবে প্রয়োজনে খাবার দেওয়ার সময়সীমা বাড়তে পারে বলে সেখানে খাদ্য সহায়তাদানকারীরা জানান। সরকারের তরফ থেকে ও সৌদি আরবের তরফ থেকেও গৃহহীনদের নানাভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে তিন শতাধিক ঘর। এতে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন অন্তত দেড় হাজার মানুষ। তারা এখন খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন কুনিপাড়া বস্তিতে গিয়ে দেখা গেছে। আগুনে পুড়ে গৃহহীন মানুষরা রাস্তার ধারে, বিভিন্ন ভবনের সামনে, ফুটপাতসহ আশপাশের জায়গায় অবস্থান করছেন। সব হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। কুনিপাড়া ঢুকতেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার ভাগাড়ের সামনে বিশাল জটলা। উঁকি দিয়ে দেখা গেল সেখানে লঙ্গরখানায় বড় হাঁড়িতে রান্না হচ্ছে। এসব খাবার আগুনে পুড়ে গৃহহীন হওয়া বস্তিবাসীদের উদ্দেশ্যে রাতের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রতিনিধি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও আর্থিকভাবে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহায়তায় গৃহহীনদের জন্য খাবার তৈরি করা হচ্ছিল।

শুধু বস্তিতে নয়, পুড়ে যাওয়া বস্তিটির আশপাশে অন্তত ৫ জায়গায় বড় বড় হাঁড়িতে গৃহহীনদের জন্য রান্না করতে দেখা গেছে। রাঁধুনীরা জানান, আগুনে পুড়ে যাওয়া গৃহহীন বস্তিবাসীদের জন্য রাতের খাবার তৈরি করা হচ্ছে। এসব বিকালের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

কুনিপাড়া বস্তির প্রতিটি রাস্তা অত্যন্ত সরু। সরু রাস্তায় কোনোভাবেই মাঝারি ধরনের গাড়ি প্রবেশ করাও সম্ভব না। গৃহহীনরা জানান, ফায়ার সার্ভিস সময়মতো সেখানে পৌঁছালেও রাস্তা না থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টার কমতি ছিল না। কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না। ঘরগুলো এত ঘিঞ্জি যে সেখানে প্রবেশ করাই কঠিন। এজন্য ফায়ার সার্ভিসকে বস্তির বাইরে অবস্থান নিয়ে পাইপ দিয়ে পানি ছিটাতে হয়েছে। সে কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। আগুনে বস্তির অন্তত তিন শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। আর আগুনে পানি ছিটানোর কারণে আশপাশের অন্তত শতাধিক ঘরে ক্ষতি হয়েছে।

গৃহহীনদের মধ্যে মরিয়ম বেগম জানান, ঘটনার সময় তিনি গার্মেন্টস থেকে বাসায় ফিরছিলেন। মোবাইল ফোনে বস্তিতে আগুন লাগার খবর পান। সঙ্গে তিনি দ্রম্নত বাসার দিকে যান। গিয়ে দেখেন, সব আগুনে পুড়ে গেছে। তিনি থাকতেন ২৫/৫/জি খালেক ভিলা সড়কে। গলির ভেতরে তার এক রুমের বাসা। সবই পুড়ে গেছে।

মঙ্গলবার অপরাহ্নে সরেজমিন দেখা গেছে, কুনিপাড়ায় টিন, বাঁশ আর কাঠ দিয়ে তিন তলা পর্যন্ত বস্তি বানানো হয়েছে। প্রচন্ড রোদে এসব শুকনো ছিল। ফলে দ্রম্নত আগুন লেগে তা ছড়িয়ে পড়ে। ঘরের টিন পুড়ে কুন্ডুলী পাঁকিয়ে আছে। তখনও আগুনে পোড়া ধ্বংস্তূপ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল।

ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে গৃহহীনদের আর্থিকসহ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ অব্যাহত আছে। বটতলা মোড়ে সৌদি আরব সরকারের তরফ থেকে ছোট এক বস্তা করে খাবার দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বস্তায় চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন কুনিপাড়া বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ২ ঘণ্টারও অধিক সময় চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে অগ্নিকান্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাস্থলটি কুনিপাড়া বস্তি ও রোলিং মিল বস্তি নামেও পরিচিত। বস্তিতে হাজার খানেকের বেশি ঘর আছে। রিকশা, সিএনজি, অটো ও ভ্যানচালক ছাড়াও গার্মেন্টস কর্মীসহ নিম্নআয়ের মানুষের বসবাস বস্তিটিতে। বস্তিটির চারদিকে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাঝখানে বস্তিটির অবস্থান। তবে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাস লাইন ও বৈদু্যতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে