সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি কোনো ছাড় দেবে না :ফখরুল

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য অনির্বাচিত, স্বঘোষিত, প্রবল প্রতাপশালী, অহংকারী প্রধানমন্ত্রীর দাম্ভিকতার বহিঃপ্রকাশ। ওই বক্তব্য দিয়ে বুঝা যায় যে, এদেশের প্রতি, মানুষের প্রতি তার কোনো দায়িত্ব নেই। নির্বাচন নিয়ে যে বক্তব্যই আসুক নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি কোনো ছাড় দেবে না।'

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং সংলাপ নাকচ হওয়ায় আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে কিনা জানতে চাইলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব দলের এ অবস্থান তুলে ধরেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর আগে আমরা সংলাপ নাকচ করে দিয়েছেন। আগামী নির্বাচন শুধু অনিশ্চিত নয়, যদি আরও খারাপ কিছু ঘটে তাহলে এর জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী হবে। বিএনপি আর ছাড় দেবে না, এদেশের মানুষের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে।'

তিনি বলেন, 'সত্যিকার অর্থে যদি সুষ্ঠু ভোট হয় তাহলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এই কারণে তারা চাচ্ছে- দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কেউ বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ করবে না, কেউ কথা বলবে না এবং নির্বাচনটা তাদের মতোই করবেন। প্রধানমন্ত্রী আশা করেন- তিনি সরকারে থাকবেন আর দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন করবে। কিন্তু বিএনপি একা তো নয়, আজকে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো বলছে যে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। এ রকম বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্তভাবে সত্যের অপলাপ করছেন। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করেন এবং তিনি প্রচন্ড রকম দাম্ভিকতায় ভুগছেন।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমার খুব কষ্ট হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন বিশাল মানুষের কন্যা শেখ হাসিনা। এটা তো সত্য কথা যে, শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের নিঃসন্দেহে ওয়ান অব দ্য গ্রেটেস্ট সান। অথচ তার মেয়ে গোটা জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিল। শেখ মুজিবুর রহমানও বাকশাল তৈরি করেছিলেন। আসলে এটা আওয়ামী লীগের রসায়ন। ওরা লুট করবে, ওরা ভোগ করবে আর সাধারণ মানুষকে পায়ের তলে পিষে মারবে।'

সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সত্যের অপলাপ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'কার সঙ্গে সংলাপ করব। তিনি তো কথাই রাখেন না। সেজন্য একবারের জন্যও সংলাপের কথা বলি নাই। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে সংলাপের ফল কি? এই প্রধানমন্ত্রী সকলের সামনে অঙ্গীকার করেছিলেন যে, নির্বাচনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। পুলিশ আর গ্রেপ্তার করবে না, পুলিশ কোনো মামলা দেবে না। তার বক্তব্যের তিন দিন পর থেকে সারাদেশে পুলিশি নির্যাতনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা সব পালিয়ে গেছে। ঘরে থাকতে পারেনি, রাস্তায়ও থাকতে পারেনি। আমার গাড়ির উপরেও আক্রমণ হয়েছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। নির্বাচনের ৭/৮ দিন আগ থেকে সেখানে নতুন নতুন নাটক তৈরি করা হয়েছে। এসবের পরও আজকে যদি শেখ হাসিনা বলেন যে, সংলাপের ফলাফল কি? রেজাল্ট তো সেটাই যেটা তিনি করেছেন।'

সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, 'কথা খুব পরিষ্কার। এত যদি সাহস থাকে আপনাদের, এতই যদি উন্নয়ন করে থাকেন, এতই যদি জনগণের ভালোবাসা থাকে তাহলে পদত্যাগ করেন এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে দায়িত্ব দেন- নির্বাচন হোক। যেই আসুক মাথা পেতে নেব।'

তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীভাবে করবে তার পথ দেখিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন। তাহলেই হয়ে যাবে।'

২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে সময়ে বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এটা মিথ্যাচার। এটা সৌজন্যমূলক নয়। কত টাকা দিয়ে কে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পায়, কত টাকা দিয়ে কে মন্ত্রিত্ব পায় এগুলো আমরাও জানি। ২০১৮ সালে মনোনয়ন দিতে বিএনপির এতটুকু সমস্যা ছিল না। তিন জন করে মনোনয়ন দিয়েছি আওয়ামী লীগের জন্য। কারণ আমরা জানতাম আওয়ামী লীগ শয়তানি করতেই থাকবে। প্রার্থীকে বেআইনি ঘোষণা করবে, ট্রাইবু্যনাল থেকে আউট করে দেবে। সেজন্য বিকল্প প্রার্থী রাখতে হয়েছে।'

সংবাদ সম্মেলন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউলস্নাহ ও সমবায় কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে