সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের টাকা লুট ভাড়া করা ডাকাত দিয়ে

ব্যবহৃত হয়েছে বেনামি মোবাইল ফোন হ আরও ৫৮ লাখ টাকা উদ্ধার
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

ভাড়া করা ডাকাত দিয়ে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের টাকা লুট করা হয়েছিল। যাতে কোনোভাবেই বিষয়টি প্রকাশ না পায়। গ্রেপ্তার এড়াতেই এমন পরিকল্পনা করে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ডাকাতির অন্যতম পরিকল্পনাকারীদের একজনসহ তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের কাছ উদ্ধার হয়েছে লুণ্ঠিত অর্থের মধ্যে আরও ৫৮ লাখ টাকা। এই নিয়ে আলোচিত এই ঘটনায় ১১ ডাকাত গ্রেপ্তার হলো। সবমিলিয়ে লুণ্ঠিত অর্থের মধ্যে ৭ কোটি টাকার বেশি উদ্ধার হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

মঙ্গলবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ এসব তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের পর থেকেই ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মানস কুমার পোদ্দারের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ডিবি পুলিশের একটি দল ঢাকার কড়াইল বস্তি ও নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানা এলাকায় অভিযান চালায়।

অভিযানে গ্রেপ্তার হয় অর্থ লুটের অন্যতম পরিকল্পনাকারী আকাশ (৩২) ও তার দুই সহযোগী হৃদয় (২১) ও মিলন মিয়া (২৯)। তাদের কাছে পাওয়া গেছে লুণ্ঠিত অর্থের মধ্যে ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা। এই নিয়ে ডাকাতির এই আলোচিত ঘটনায় ১১ ডাকাত গ্রেপ্তার হলো। উদ্ধার হয়েছে লুণ্ঠিত অর্থের মধ্যে ৭ কোটি ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

ডিবি প্রধান জানান, গত ৯ মার্চ ঢাকার তুরাগ থানাধীন ডিয়াবাড়ী এলাকা থেকে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে ১১ কোটি টাকা মাইক্রোবাসযোগে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল বলে দাবি করেছে মানিপস্ন্যান্ট লিংক লিমিটেড নামের একটি সিকিউরিটি কোম্পানি।

গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে ডিবি প্রধান ডিআইজি হারুন-অর-রশীদ জানান, ডিয়াবাড়ী এলাকায় যাওয়ার পর গাড়ির নকল চাবি দিয়ে তালা খুলে ভেতরে থাকা টাকার চারটি ট্রাংক নিয়ে যায় ডাকাতরা। অথচ ডাকাতরা কোনো ধরনের প্রতিরোধের মুখে পড়েনি। ১১ কোটি টাকা কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই বহন করার বিষয়টিও সন্দেহের। কারণ গাড়িতে থাকা সিকিউরিটি গার্ডদের তরফ থেকে ডাকাতদের কোনো ধরনের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করার তথ্য মেলেনি। যা রীতিমতো রহস্যের জন্ম দিয়েছে।

ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হলে ডিবি পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে গত ১২ মার্চ ৮ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছে পাওয়া যায় লুণ্ঠিত অর্থের মধ্যে প্রায় ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। গ্রেপ্তার আট ডাকাত রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করে।

ডিবি প্রধান বলছেন, মূলত তিন ধাপে অর্থ ডাকাতির ঘটনাটি ঘটেছে। প্রথম ধাপের দুই সদস্য মূল পরিকল্পনা সাজায়। পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম পলাতক সোহেল রানা। তিনি সিকিউরিটি কোম্পানিটিতে দীর্ঘদিন চালক হিসেবে কাজ করেছেন। টাকা কীভাবে মাইক্রোবাসে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায় তা তিনি জানেন। সোহেল রানা বিষয়টি আকাশকে জানায়। আকাশকে দায়িত্ব দেয় ডাকাতির ঘটনাটি সরেজমিন উপস্থিত থেকে ঘটাতে।

আকাশ সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে। তিনি টাকার লুটের পর কেউ যাতে গ্রেপ্তার না হয়, এজন্য সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা থেকে পেশাদার ৯ ডাকাতকে ভাড়া করে। ভাড়া করা ডাকাতদের কারো কারো নামে ২৮টি থেকে ৩০টি পর্যন্ত মামলা আছে। পরিকল্পনাকারীরা ভাড়া করা ডাকাতদের ঢাকায় এনে নতুন কাপড় ও জুতা কিনে পরিপাটি করে সাজায়।

ভাড়া করা ডাকাতদের আকাশ জানায়, হুন্ডির ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা পাচার হচ্ছে। টাকাটি ইচ্ছে করলেই লুটে নেওয়া সম্ভব। ভাড়া করা ডাকাতরা তাতে রাজি হয়। তাদেরকে জনপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার চুক্তি করা হয়। একই সঙ্গে আকাশ সিলেট ও সুনামগঞ্জ থেকে বেনামি সিমকার্ডসহ মোবাইল ফোন যোগাড় করে। এরপর তারা ডাকাতির জন্য ডিয়াবাড়ীতে উপস্থিত হয়। ডাকাতির সময় প্রশাসনের লোকজন থেকে সহায়তা করবে বলেও ভাড়া করা ডাকাতদের জানায় আকাশ।

পরিকল্পনাকারী সোহেল রানার তথ্য মতে, ডাকাতরা টাকা লুটের ঘটনাটি ঘটায়। টাকার ট্র্যাংক লুটের পর আকাশ দৌড়ে গাড়িতে উঠতে পারেনি। তাকে রেখেই অন্য ডাকাতরা পালিয়ে যায়। কাজ শেষে অপারেশনে ব্যবহৃত মোবাইলগুলো ৩০০ ফুট রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়। পরে তারা লুটে নেওয়া ট্রাংক ভেঙে লুটে নেওয়া টাকা ৩০০ ফিটের একটি নির্জন জায়গায় ব্যাগ ও বস্তায় ভরে যার যার মতো পালিয়ে যায়।

ডিবি প্রধান বলেন, ডাকাতিতে অংশ নেওয়া টাকা নিয়ে সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল চলে যায়। ডাকাতদের একজন ভাগের টাকা নিয়ে একটি গাড়ি কিনেছেন। একজন মোটা অঙ্কের টাকা আরেকজনকে ধার দিয়েছেন। তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সোহেল রানা বর্তমানে গোয়েন্দা জালের মধ্যেই আছে। যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারে। তাকে গ্রেপ্তারের পর পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মানস কুমার পোদ্দার, অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রশাসন) মোহাম্মদ নূরুল আমীন, মিরপুর জোনাল টিমের লিডার এডিসি মো. সাইফুল ইসলাম, ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের এডিসি কে এন রায় নিয়তি, সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরান হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে