সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোজায় কালোবাজারিদের বিষয়ে সতর্ক থাকুন

মডেল মসজিদ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেন -ফোকাস বাংলা

রোজায় কালোবাজারিরা যাতে নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'রমজান মাসে অনেকে পণ্যের দাম বাড়াতে চেষ্টা করেন। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। রমজান মাস হলো কৃচ্ছতা সাধনের সময়।'

তিনি বলেন, 'মসজিদে জুমার খুতবার সময় আপনারা (ইমাম) কালোবাজারি, মজুতদারি বা খাদ্যে ভেজাল দেওয়া যে গর্হিত কাজ এ ব্যাপারে মানুষকে আরও সচেতন করবেন।'

বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বরিশালের আগৈলঝাড়া, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করার সময় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, স্বাগত বক্তব্য রাখেন ধর্ম বিষয়ক সচিব কাজী এনামুল হাসান (এনডিসি)।

শেখ হাসিনা বলেন, 'নিম্নআয়ের মানুষের জন্য আমরা বিশেষ কার্ড করে দিয়েছি, বেশি দামে চাল ক্রয় করে মাত্র ৩০ টাকা কেজি দরে আমরা তাদের দিচ্ছি। রমজান মাসকে সামনে রেখে আমরা আরও ১ কোটি মানুষের মধ্যে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করব। সাধারণ মানুষ যাতে কষ্ট না পায়; চাল, তেল, চিনি, ডাল যা যা দরকার সেগুলো যাতে ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারে সেজন্য টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূলের কার্ড দিয়ে আমরা এই সহযোগিতা করে যাচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'আমরা চাই বাংলাদেশ যেভাবে অর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেভাবে এগিয়ে যাক। সেই সঙ্গে আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা এবং ধর্ম পালন করা হোক সেজন্য এই মসজিদগুলো করে দিচ্ছি। ইসলাম সবসময় মানুষকে শিক্ষাগ্রহণ করতে বলেছে, সেই বিষয়টা আমাদের মনে রাখতে হবে।'

এ সময় শেখ হাসিনা জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজটা আরও ভালোভাবে করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তাদের কাছে দোয়া চান। তিনি বলেন, 'এদেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। আমরা বিনামূল্যে সবাইকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমরা কৃষিতে প্রচুর ভর্তুকি দিচ্ছি, আমরা শ্রমিকদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। বিদেশে যারা কাজ করতে যায় তারা যাতে জমি বিক্রি না করে ব্যাংক থেকে সহজ ঋণ নিয়ে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে শেষে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরবে- সেটা আমরা চাই না।'

ইসলামে নারীদের অধিকারের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কোনো কোনো দেশে দেখি নারীদের শিক্ষা নিতে দেবে না। ইসলাম কিন্তু সেটা বলেনি। আমাদের সবাইকে শিক্ষাগ্রহণ করতে বলেছে। একমাত্র ধর্মই নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে। সেই কথাটা সবাইকে স্মরণ রাখা দরকার বলে আমি মনে করি।'

মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'জীবন দেওয়ার মালিকও তিনি, নেওয়ার মালিকও তিনি। আমার বাবা, মা, ভাই, বোন সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। বিদেশে ছিলাম বলে আমরা দুই বোন বেঁচে গেছি। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর কতবার আমি গুলির সামনে, কখনো বোমা পাতা, কখনো গ্রেনেড হামলা, নানাভাবে আমার ওপর আক্রমণ হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আলস্নাহ রাব্বুল আলামিনই আমাকে রক্ষা করেছেন। কারণ আলস্নাহ সবসময় মানুষকে কিছু সময় দেন। কিছু কাজ দেন। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, সেই কাজগুলো সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি আমাকে রক্ষা করবেন। সেই বিশ্বাস নিয়ে আমি বাংলাদেশে এসেছিলাম, যে বাংলাদেশে আমার বাবা-মা, ভাইদের হত্যা করেছে, লাশ ফেলে রেখেছিল। কাফন-দাফনও করতে দেয়নি।'

ধর্মের নামে বিচারের অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ইসলামকে নিয়ে কেউ যেন বাড়াবাড়ি করতে না পারে সে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যারা সত্যিকারের ইসলামকে বিশ্বাস করে তাদের অন্য ধর্মের প্রতিও সহনশীল হতে হবে। আমাদের বাংলাদেশে আমরা চাই সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করুক। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। শেষ বিচার তো আলস্নাহ করবেন, বিচারের ভার আলস্নাহর।'

দেশে মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে বৃহস্পতিবার আরও ৫০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছেন।

এর আগে দুই ধাপে ১০০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। বর্তমান সরকার সারা দেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, মডেল মসজিদগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ অজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। এছাড়াও থাকবে হজে গমনেচ্ছুদের জন্য রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগের আনুষ্ঠানিকতা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামী সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং ইসলামী দাওয়াত, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র এবং মসজিদের সঙ্গে দেশি ও বিদেশি অতিথিদের বোর্ডিং সুবিধা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে