রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
ভোলা-১

পুরনো প্রার্থীতেই ভরসা আওয়ামী লীগ-বিএনপির

নুরে আলম ফয়জুলস্নাহ
  ২০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

রাক্ষসী মেঘনা আর প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ভোলা-১ (সদর) আসন। জাতীয় সংসদের ১১৫ নম্বর আসনটি স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বেশিরভাগ সময়ই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৮৪ হাজার ৮১১। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা এক লাখ ৯৭ হাজার ৪৮২, নারী ভোটারের সংখ্যা এক লাখ ৮৬ হাজার ৭২৮ এবং তৃতীয় লিঙ্গের একজন।

বিগত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করে জানা গেছে, এ আসনটি বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন এ আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। ১৯৭০ সালে প্রথম এমএলএ নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ। এরপর ১৯৭৩ সালে এ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে আসনটি চলে যায় বিএনপির দখলে। তখন পারিবারিক প্রভাবের কারণে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাজাহান। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে আসনটি চলে যায় জাতীয় পার্টির দখলে। তখন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দলের প্রভাবশালী নেতা ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জুর। ১৯৯১ সালে আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। তখন আবারও সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ। ২০০১ সালে এ আসনে চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলেও তিনি বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থর কাছে হেরে যান। এরপর থেকে ইউছুফ হোসেন হুমায়ুন ভোলায় যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ওই নির্বাচনে ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসন থেকে সংসদ সদস্য হন তোফায়েল আহমেদ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোলা-১ আসন থেকে আবার সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে সদর আসন থেকে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়নের জন্য একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও দলীয় নেতাকর্মীদের দাবি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদই একক প্রার্থী।

আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী বলছেন, তোফায়েল আহমেদ বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার পর এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। তিনি নদীভাঙনের হাত থেকে ভোলাকে রক্ষায় কাজ করেছেন। পৌর এলাকায় আংশিক বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণে কাজ করেছেন। ভোলার উন্নয়নে তার অবদান অপরিসীম।

স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ দলকে সুসংগঠিত করে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করেছেন। তিনি ভোলা সদর আসন থেকে পাঁচবার এবং ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসন থেকে দুইবারসহ মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি ভোলা সদর আসনে একক প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।

ভোলা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলাম বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সুসংগঠিত। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে সব কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য অঙ্গসহযোগী সংগঠনের সব শাখার কমিটি গঠন-পুর্নগঠন করে দলকে শক্তিশালী করার কাজ চলছে। আগামী নির্বাচনে ভোলা-১ আসন থেকে তোফায়েল আহমেদই একক প্রার্থী। এর বাইরে আর কোনো প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোলস্না জানান, আগামী নির্বাচনে তিনি দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এরপর দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই তিনি কাজ করবেন। দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

অন্যদিকে, বিগত সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মী তাকিয়ে আছে কেন্দ্রের দিকে। তারা বলছেন, দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে ভোলা-১ আসনে দলটির একক প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের ছোটভাই আলহাজ গোলাম নবী আলমগীর।

ভোলা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব রাইসুল আলম জানান, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা এলে তারা নির্বাচনে যাবেন, না হয় আন্দোলনেই থাকবেন। তবে নির্বাচনে গেলে ভোলা-১ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী আলহাজ গোলাম নবী আলমগীর। এর বাইরে আর কেউ নেই। এরপর যদি জোট থেকে অন্য কোনো প্রার্থী দেওয়া হয় তার পক্ষেই কাজ করবেন তারা।

এ ছাড়া এ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) একক প্রার্থী মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জুরের ছেলে ও দলটির চেয়ারম্যান, ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। তিনি ভোলা সদর আসনে নির্বাচন করবেন বলে দলটির নেতাকর্মী জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ভোলা জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. মোতাসিম বিলস্নাহ জানান, এখন পর্যন্ত ভোলা-১ আসনের বিজেপির একক প্রার্থী আন্দালিব রহমান পার্থ। তিনি যদি অন্য কোনো আসনে নির্বাচন করেন তখন হয়তোবা তার স্ত্রী এ আসনে নির্বাচন করতে পারেন।

এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) মাওলানা ওবায়েদ বিন মোস্তফা প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

হ আগামীকাল : ভোলা-২ আসনের বিস্তারিত

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে