শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সখীপুরের সংরক্ষিত বনে আগুনে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য

সাজ্জাত লতিফ, সখীপুর (টাঙ্গাইল)
  ২০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

টাঙ্গাইলের সখীপুরে সংরক্ষিত শাল গজারি বনে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, লতাগুল্ম, কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড়। এতে বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলেছে এমন ক্ষতিকর ভয়ানক চিত্র। তবে এ বিষয়ে কোনো নজর নেই বন বিভাগের।

সরেজমিন সখীপুর বন বিভাগের কালমেঘা, কালিদাস, তক্তারচালা, নলুয়া, বহেড়াতৈল, আন্দি, কাকড়াজান, ডিবি গজারিয়া, গেছুয়া ও মরিচা এলাকার কয়েকটি সংরক্ষিত শাল গজারি বন ঘুরে আগুন দেওয়ার চিত্র দেখা গেছে।

বন বিভাগ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার হতেয়া, বহেড়াতৈল ও বাঁশতৈল (অংশ) রেঞ্জের অধীনে ১১টি বিটের সখীপুরে ২৮ হাজার ৫৯৪ দশমিক ৫২ একর বনভূমি রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ২ হাজার ২০০ একর জমিতে শাল গজারির সংরক্ষিত বন রয়েছে।

বন কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী উপজেলার ১৭৮০ একর বনভূমিতে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০ লাখ ৮০ হাজার ফলদ ও ওষুধি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে বনে আগুন দেওয়ায় ওইসব চারাও হুমকির মুখে রয়েছে।

সম্প্রতি হতেয়া রেঞ্জের কালমেঘা বিট ও বহেড়াতৈল রেঞ্জের কাকড়াজান-মরিচা বিটের সংরক্ষিত শাল গজারি বন ঘুরে দেখা গেছে- বিস্তীর্ণ এলাকা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগুনে বড় গাছগুলো অক্ষত থাকলেও নিচের ছোট ছোট বিভিন্ন প্রজাতির লতাগুল্ম ও গাছ পুড়ে গেছে। এ ছাড়া কালিদাস, নলুয়া, গেছুয়া, তক্তারচালা এলাকায় কয়েকটি বনে গিয়েও আগুন দিয়ে লতাগুল্ম ধ্বংসের এমন চিত্র দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাতা ঝরার মৌসুম এলেই স্থানীয় বাসিন্দারা ইচ্ছা করেই বনে আগুন দেয়। এতে নিচের ছোট গাছগুলো পুড়ে যাওয়ার পর তা সংগ্রহ করে রান্নার কাজে ব্যবহার করাই আগুন দেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য।

\হগেছুয়া গ্রামের বাসিন্দা ফজল মিয়া বলেন, 'চৈত্র-বৈশাখ মাসে যখন গজারি গাছের সব পাতা ঝরে পড়ে, তখন ঝোপঝাড় পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে এলাকাবাসী পাতায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে বনের ভেতরে থাকা সব লতাপাতা পুড়ে পরিষ্কার হয়ে যায়।' তিনি বলেন, 'এতে কেউ তো কখনো বাধা দেয়নি! বন বিভাগের লোকদেরও এসব এলাকায় দেখা যায়নি। প্রতি বছরই বনে এভাবে আগুন দেওয়া হয়।'

এ বিষয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন বলেন, 'বনের মধ্যে আগুন দেওয়ার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। পাশাপাশি বনের সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়, হুমকির মুখে পড়ে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আগুন দিয়ে লাকড়ি তৈরির চিরায়ত অভ্যাস বাদ দিতে হবে। এজন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে সচেতনতামূলক সভা-মাইকিং করা প্রয়োজন।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনবিভাগের বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, শুকনো মৌসুমে বনে আগুন দেওয়াটা একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে সার্বক্ষণিক তদারকি করা সম্ভব হয় না। তবে এ বছর সুফল বাগানের ফলদ ও ওষুধি গাছের চারা রক্ষায় বিভিন্ন এলাকায় পাহারাদারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয়দেরও সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে