শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা মহানগরে সবুজ এলাকা আছে সাড়ে ৮ ভাগের কম

বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের গবেষণা তথ্য
যাযাদি ডেস্ক
  ২১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

ঢাকা মহানগরে ২০ ভাগ সবুজ এলাকার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও আছে সাড়ে ৮ ভাগের কম। তার মধ্যে যেটুকু সবুজ আছে, সেটুকু এলাকাও সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ও নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এছাড়া সবুজ বা উন্মুক্ত জায়গায় বাণিজ্যিক কার্যক্রমও একটি বাধা। ফলে নগরবাসী এর সুবিধা পান না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের 'ঢাকা নগরীর সবুজ এলাকা এবং এর রাজনৈতিক অর্থনীতি' শিরোনামে এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার সকালে বুয়েটের কাউন্সিল ভবনে এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেস্ট সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল কর্মসূচির অর্থায়নে গবেষণাটি গত বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর মেয়াদে করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, রাজউক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও বিএফডি ঢাকার সবুজ জায়গা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে সবুজ জায়গা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে রাজউকের বিরোধ রয়েছে। আবার সিটি করপোরেশন অনেক ক্ষেত্রে মুনাফা করার জন্য সবুজ জায়গায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।

গবেষণার নেতৃত্ব প্রদানকারী নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আফসানা হক বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, রাজউক শহরের মধ্যে সবুজ জায়গা তৈরি করতে পারে। তৈরির পর তা সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। হস্তান্তরের জায়গায় কিছু প্রক্রিয়াগত সমস্যা আছে।

গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক আসিফ-উজ-জামান খান বলেন, সবুজ জায়গা ঘিরে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া হলে যারা বাইরে থাকছে, তারা ভাবছে, সেখানে তাদের অধিকার নেই। সবুজ জায়গা সবার জন্য করার ক্ষেত্রে এটা বাধা। আবার পার্কগুলো এমন করে করা

হচ্ছে বা এমন স্থাপনা করা হচ্ছে, যেখানে নিম্নবিত্ত শ্রেণি মনে করে, এটা তাদের জন্য নয়।

রাজউকের অভিযোগ, সরকারি সংস্থা সবুজ জায়গাকে পরিবর্তন করার সময় তার কাছ থেকে অনুমতি নেয় না। তবে চুক্তিতে ব্যত্যয় ঘটালে রাজউক সবুজ জায়গা ফেরত নিতে পারে।

যেখানে ৫ হাজার নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থা আছে সেখানে যদি ২০ হাজার লোক বসবাস করে তাহলে কীভাবে বাসযোগ্যতা বজায় থাকবে- এ প্রশ্ন রেখে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয়, সরকার পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। ঢাকার ভেতরে জনসংখ্যা কত হবে, তাদের জন্য কী কী নাগরিক সুবিধা প্রয়োজন তা চিন্তা করতে হবে।

পরিকল্পিত ঢাকা শহরের জন্য সবার দায়িত্ববোধ ও সচেতনতা জরুরি উলেস্নখ করে তিনি বলেন, সেজন্য নীতিনির্ধারক, নগর পরিকল্পনাবিদসহ সমাজের সবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশে যে কোনো পরিকল্পনা বা জননীতি বাস্তবায়ন করতে গেলে যখনই তা কারো স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় তখন সেই পরিকল্পনার বিপক্ষে তিনি অবস্থান নেন বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, এই ধরনের মানসিকতা কমিউনিটির সবার মঙ্গলের জন্য পরিহার করতে হবে।

এ সময় ডিটেইলস এরিয়া পস্ন্যান বা ড্যাপের কথা উলেস্নখ করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দায়িত্ব পালন করেছেন সর্বোচ্চ পরিশ্রম ও আন্তরিকতা দিয়ে। ড্যাপ প্রণয়নের ক্ষেত্রে বসবাসের স্থান, খোলা জায়গা, খেলার মাঠ, সবুজ ও জলজ এলাকা থেকে শুরু করে অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। ভালো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজসহ সবার এগিয়ে আসতে হবে।

ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল শহর হওয়ায় এই শহরের ওপর চাপ কমাতে হবে বলেও মনে করেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঢাকাকে পৃথিবীর আর কোনো শহরের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ নেই। প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ ঢাকায় ঢুকছে তাতে খোলা জায়গা, খেলার মাঠ বা সবুজ এলাকা রক্ষা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

এ সময় মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়ছে জানিয়ে বলেন, উন্নত বিশ্ব প্রতিশ্রম্নত আর্থিক অনুদান ছাড় না দেওয়ার কারণে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় যেতে পারছে না।

বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, যে গবেষণা করা হয়, তা যেন দেশের কাজে লাগে, তার জন্য একটা পস্ন্যাটফর্ম করা দরকার।

বুয়েটের সহ-উপাচার্য আবদুল জব্বার খান বলেন, পৃথিবীর কোথাও পার্ক বা সবুজ এলাকায় দেয়াল দেওয়া হয় না, বাংলাদেশে হয়। সবুজ যেন বাইরের মানুষও দেখতে পারে, সে জন্য বুয়েটের সবুজ এলাকার বিদ্যমান দেয়াল ভেঙে ফেলে স্বচ্ছ দেয়াল করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে