রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

২০২২ সালে ৩৪৬ দুর্নীতি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে

বার্ষিক প্রতিবেদন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন
যাযাদি ডেস্ক
  ২২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

২০২২ সালে ৩৪৬টি দুর্নীতি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং বু্যরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ আসামির সাজা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুলস্নাহ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন, দুদক কমিশনার ডক্টর মোজাম্মেল হক খান, জহুরুল হক ও সচিব মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে কমিশনে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ জমা পড়ে। এসব অভিযোগ যাচাই শেষে ৯০১টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্যে নেওয়া হয়। অর্থাৎ দুদকে দাখিল হওয়া অভিযোগের মাত্র ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ অনুসন্ধানের জন্য নেওয়া হয়। বাকি ৯৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় আমলে নেওয়া হয়নি। তবে অনিয়ম সংগঠিত হয়েছে, কিন্তু দুদকের তফসিলভুক্ত নয়, এমন ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

২০২১ সালে দুদকে ১৪ হাজার ৭৮৯টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ৫৩৩ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য নেওয়া হয়। আর দুই হাজার ৮৮৯টি অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই সময়ে দুদকে জমা হওয়ায় অভিযোগের মধ্যে ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ অনুসন্ধানের জন্য নেওয়া হয়।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকাসহ দেশের ২৯টি বিশেষ জজ আদালতে দুদকের পক্ষে ১২০ জন আইনজীবী মামলা পরিচালনা করেন। ২০২২ সালে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের আদালতে তিন হাজার ৩২৬টি বিচারাধীন মামলা ছিল। এর মধ্যে ৪১৯টি মামলার বিচারকার্য উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত থাকায় বাকি দুই হাজার ৯১০টি মামলার বিচার কাজ চলমান ছিল।

এসব মামলার মধ্যে গেল বছর কমিশন আমলের ৩০৭টি এবং বু্যরো আমলের ৩৯টিসহ মোট ৩৪৬টি নিষ্পত্তি হয়। নিষ্পত্তিকৃত মামলার মধ্যে কমিশন আমলের ১৯৭টি এবং বু্যরো আমলের ১৪টি মামলায় আসামিদের সাজা হয়েছে। আর কমিশনের আমলের ১১০টি এবং ১৫টি মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন।

অর্থাৎ কমিশন আমলের মামলায় ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং বু্যরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে। কমিশন আমলের ৩৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং বু্যরো আমলের ৬৪ দশমিক ১০ শতাংশ মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন। প্রতিবেদন তথ্য অনুযায়ী, বু্যরো আমলের বেশিরভাগ দুর্নীতি মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে সংস্থাটি, প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরও গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচার হওয়া অর্থ নিয়ে আরও অনেকগুলো সংস্থা কাজ করে। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।

দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কি কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।

জনগণের আস্থা প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, যারা এটা বলছে, তারা কোন তথ্যের ভিত্তিতে বলেছে। আমাদের এই বার্ষিক প্রতিবেদন সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন। এখানে কোনো আবেগ নেই কিংবা অতিরঞ্জিত কিছু নেই। দুদক আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, ভেতরে ও বাহিরে এর কার্যকর ক্ষমতা অনেক বেড়েছে।

হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে