শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে চার বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ৭৯১টি, গুম ৫৬ জন

এইচআরএফবি'র প্রতিবেদন
যাযাদি ডেস্ক
  ২২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

দেশে গত ৪ বছরে ৭৯১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। তারমধ্যে ৬৮৩টি ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। আর ৫৬ জন গুম হয়েছিলেন। তবে তাদের মধ্যে ১০ জন মুক্তি পেয়েছেন।

২০টি মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) এক পরামর্শ সভায় এসব তথ্য জানিয়েছে। সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শিরোনাম ছিল- 'ন্যাশনাল কনসালটেশন অন ড্রাফট ইউপিআর স্টেকহোল্ডার্স রিপোর্ট'। অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে ৭৯১টি। তারমধ্যে ৬৮৩টি ক্রসফায়ারে, ৪৩ জনকে গুলি করে, ৪৪ জনকে নির্যাতনে এবং ২১ জনকে পুলিশ হেফাজতে হত্যা করা হয়। তা ছাড়া একই সময়ে ৫৬ জন মানুষ গুম হয়েছিলেন। তবে তাদের মধ্যে ১০ জন মুক্তি পেয়েছেন ও ২৯ জনকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। আর ১৭ জন এখনো নিখোঁজ।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারি মাস পর্যন্ত ১০টি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এসব তথ্য সংকলন করেছে। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) বা সর্বজনীন পুনর্বীক্ষণ পদ্ধতিতে প্রণয়ন করা খসড়া প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করার লক্ষ্যে এ সভাটির আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের ৯টি মানবাধিকারের মধ্যে ৮টি রেটিফাই করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালে এসডিজিতে নন গভার্নমেন্ট অর্গানাইজেশন (এনজিও) কে সম্পৃক্ত করতে আহ্বান জানানো হয়। আমরা সেভাবে কাজ করছি। মানবাধিকার কয়েকটি বিষয়ের ওপর সীমাবদ্ধ থাকে। যেসব রাষ্ট্রের দরজায় মানুষ ঘুরে তাদেরও এসব সমস্যা রয়ে গেছে। এনজিওর লেবাসে যখন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে সেটিই প্রধান।

তিনি বলেন, ১৭৮টি সুপারিশ বাস্তবায়নে সমন্বয়ের অভাব আছে। পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় সাধারণত এসব কাজ করে থাকে। মানবাধিকারের বিষয়ে জাতিসংঘের ছয় জন কর্মকর্তাকে দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তারা নিজেদের মতো কাজ করে গেছে।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে তিনি বলেন, 'এ আইন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে হলে উচ্চস্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। তবে এটি বাতিল করা হবে না।'

গুম প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'জেনেভা ৭৮ জনের তালিকা দিয়েছিল। সেখানে ১০ জনকে পাওয়া গেছে। ২৮ জন মানুষকে এখনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বারবার অপরাধ করা ব্যক্তিগুলোকে মৃতু্যদন্ড দেওয়া ছাড়া কী করার আছে? বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দিতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কেউ অরাজকতা তৈরি করলে সেখানে ছাড় দেওয়া হবে না।'

সমাপনী বক্তব্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড কমেছে। এটি ইতিবাচক দিক।'

তিনি বলেন, 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। এজন্য আইনটি বাতিল করতে হবে। মানবাধিকার সংরক্ষণের জন্য আইনি কাঠামো দরকার।'

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সমন্বয়ক তামান্না হক রিতি। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের প্রতিনিধি উমা খান, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, এইচআরএফবির সদস্য রঞ্জন কর্মকার প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে