বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
দুবাইয়ে ৪৫৯ জন বাংলাদেশির সম্পদ

বিএফআইইউ ও পররাষ্ট্রে তথ্য জানতে চেয়ে দুদকের চিঠি

সম্প্রতি দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশি নাগরিকের সম্পদ কেনার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
বিএফআইইউ ও পররাষ্ট্রে তথ্য জানতে চেয়ে দুদকের চিঠি

দেশ থেকে অর্থ পাচার করে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গোল্ডেন ভিসায় দুবাইয়ে সম্পদ গড়েছেন ৪৫৯ জন বাংলাদেশি। যেখানে বাংলাদেশিদের মালিকানায় ৯৭২টি সম্পদ কেনার তথ্য রয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশের এমন তথ্য-উপাত্ত জানতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলাদা চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের মানিলন্ডারিং উইংয়ের পরিচালক শাখা থেকে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

রোববার চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বিএফআইইউয়ের পরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে ওই ৫৪৯ জন বাংলাদেশির অর্থ পাচারের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য থাকলে কিংবা সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কমিশনের পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত ঠিক কতজন বাংলাদেশি গোল্ডেন ভিসা ও আবাসিক ভিসা নিয়েছে, তাদের তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চেয়েছে দুদক।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে দুদক। গত ১৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট থেকে দুবাইয়ে অবস্থানরত ৪৫৯ বাংলাদেশি নাগরিকের সম্পদ কেনার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার ও দুবাইয়ে সম্পদ কেনা সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার ও দুবাইয়ে গোন্ডেন ভিসার আওতায় সেই টাকা দিয়ে সম্পদ কেনা অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। অভিযোগ পাওয়ার পর কমিশন যাচাই-বাছাই শেষে মনে করেছে যে, অনুসন্ধান হওয়া দরকার। যেহেতু এটা অনেক বড় অভিযোগ, সে কারণে তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। ওই টিম কাজ শুরু করেছে। অনুসন্ধান কাজ শেষ হলে যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে, তার মধ্যে মামলা দায়ের করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে অনুসন্ধান কর্মকর্তারা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য নথিপত্র চাওয়া শুরু করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে দুদকসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে বিপুল পরিমাণ মূলধন স্থানান্তরিত হচ্ছে দুবাইয়ে। এ অর্থ পুনর্বিনিয়োগে ফুলে ফেঁপে উঠছে দুবাইয়ের আর্থিক, ভূ-সম্পত্তি ও আবাসনসহ (রিয়েল এস্টেট) বিভিন্ন খাত। ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৫৯ জন বাংলাদেশিদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি প্রপার্টি কেনার তথ্য রয়েছে। কাগজে-কলমে যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার। তবে প্রকৃতপক্ষে এসব সম্পত্তি কিনতে ক্রেতাদের ব্যয়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে।

অভিযোগ সূত্র বলছে, গত দুই বছরে দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের প্রপার্টি কেনার প্রবণতা ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছে বাংলাদেশিরা, যার তথ্য তারা দেশে পুরোপুরি গোপন করেছেন। এমনকি বৈশ্বিক নেতিবাচক অর্থনীতির মধ্যেও দেশটির রিয়েল এস্টেট খাতের বিদেশি প্রপার্টি ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশিরা শীর্ষে। এদিক থেকে নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, চীন ও জার্মানির মতো দেশগুলোর বাসিন্দাদের পেছনে ফেলেছেন বাংলাদেশিরা।

২০২০ সালে করোনার মধ্যেই দেশের নির্মাণ খাতের ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত একজন ব্যবসায়ী দুবাই চলে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন। দেশের ব্যবসা থেকে উপার্জিত মুনাফা প্রতিনিয়ত দুবাইয়ে স্থানান্তর করছেন তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন যেকোনোভাবে হোক বিদেশ থেকে পুঁজির প্রবাহ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে। এজন্য বিদেশি ধনীদের স্থানান্তরিত হতে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধাও দিচ্ছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশও অর্থ পাচার প্রতিরোধে কার্যকর ও শক্তিশালী কোনো ব্যবস্থা গড়তে না পারায় এখান থেকে দুবাইয়ে অর্থ পাচার বেড়েছে।

ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির হিসাব অনুযায়ী, দুবাইয়ে মোট প্রপার্টির বাজার ব্যাপ্তি ৫৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ আছে বিদেশি মালিকানায়।

সম্প্রতি দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশি নাগরিকের সম্পদ কেনার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত ১৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাসের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে দুবাইয়ে অবস্থানরত ৪৫৯ বাংলাদেশি নাগরিকের সম্পদ ক্রয়ের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে দুদক, বিএফআইইউ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে অগ্রগতি প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে