শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আইইউটি'র সমাবর্তনে প্রধানমন্ত্রী

স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট সরকার

মুসলিমরা কেন পিছিয়ে পড়ল তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন এবার ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিতে সক্ষম হব
যাযাদি ডেস্ক
  ৩১ মে ২০২৩, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে মঙ্গলবার আইইউটি'র ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ তুলে দেন ওআইসি মহাসচিব ও আইইউটির চ্যান্সেলর হিসেইন ব্রাহিম ত্বহা। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি উপস্থিত ছিলেন -ফোকাস বাংলা

জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হবে। স্মার্ট বাংলাদেশে থাকবে একটি স্মার্ট সরকার, একটি স্মার্ট অর্থনীতি, একটি স্মার্ট জনসংখ্যা, একটি স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট জনশক্তি। মানুষকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা হবে; যাতে তারা চতুর্থ শিল্প বিপস্নবে অবদান রাখতে পারে। তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমরা প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করছি। সারা দেশে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার এবং হাই-টেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। মঙ্গলবার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গাজীপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন ও আদর্শকে সামনে রেখে সবসময় ইসলামের প্রচার ও প্রসারে কাজ করছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'গত সাড়ে ১৪ বছরে আমরা ইসলামের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। আমরা দেশে প্রথম একটি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। পবিত্র কোরআনের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি করেছি। শিশুদের মধ্যে বিনামূল্যে পবিত্র কুরআনুল করিম বিতরণ করা হচ্ছে। ''ইমাম-মোয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট'' গঠন করা হয়েছে। আমরা মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছি। বিভিন্ন মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। কওমি মাদ্রাসা স্বীকৃতির বিল পাস করা হয়েছে। দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে। এবতেদায়ি মাদ্রাসার মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।' শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২১ প্রণয়ন করেছি। হজের সার্বিক কার্যক্রম ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় আনা হয়েছে। ফলে হজ কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগের প্রতিকার সহজ হচ্ছে। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এরই মধ্যে ২০০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে। আমরা জাতীয় শিক্ষা নীতিতে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমকে জাতীয় শিক্ষানীতির অন্তর্ভুক্ত করেছি।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ইসলামের সোনালি যুগে বিশ্বসভ্যতা, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা ও ভূগোল শাস্ত্রের বিভিন্ন শাখায় মুসলমানদের অবদান এক গৌরবময় ঐতিহ্যের ইতিহাস গড়ে তুলেছিল। মুসলমানরা শৌর্যবীর্য, জ্ঞানবিজ্ঞান ও সাহিত্য-সংস্কৃতিতে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে। সেই গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকারী মুসলমানরা কেন পিছিয়ে পড়ল তা আমাদের বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'নিজেদের মধ্যে কলহ, একে অপরের প্রতি সৌহার্দ্য এবং শ্রদ্ধার অভাব, জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় পিছিয়ে পড়াসহ নানা কারণে আজ মুসলমানরা পিছিয়ে পড়েছে। এই সম্মান ফিরে পেতে মুসলমানদের আবার শিক্ষা-গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে এবং বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়ন করতে হবে। আজ মুসলিমদের দখলে উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে সম্পদ রয়েছে। এই সম্পদকে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজে লাগিয়ে আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।' শেখ হাসিনা বলেন, 'আধুনিক যুগে দুঃখজনকভাবে মুসলিম বিশ্বে মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী গবেষণা ও উন্নয়নে তাদের অপর্যাপ্ত অবদানকে প্রতিফলিত করে। এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে মুসলমানদের আরও প্রচেষ্টার প্রয়োজন, যাতে তারা বেশি করে অবদান রাখতে পারেন। বিশেষ করে যখন বিশ্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং অন্যান্য প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে চতুর্থ শিল্প বিপস্নবের যুগে প্রবেশ করেছে।' শেখ হাসিনা বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির গর্বিত স্বাগতিক দেশ এবং এর পরিচালনায় সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করে আসছে। ভবিষ্যতেও আমরা এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ।' শিক্ষা ও গবেষণায় বিশেষ জোর দেওয়ার কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এ ক্ষেত্রে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আমরা বৃত্তিসহ বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছি। দেশ-বিদেশের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণার জন্য তাদের সুযোগ করে দিচ্ছি। আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা, আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটাল পরিষেবা, ঘরে ঘরে বিদু্যৎ, দুর্যোগের প্রস্তুতি এবং জলবায়ু অভিযোজনসহ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক খাতে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে।' সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০০৬ সালে দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৮.৬ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.৫ শতাংশ থেকে ৬.৭ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের জিডিপির আকার ২০০৬ সালে যেখানে ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; বর্তমানে তা ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে ২০২২ সালে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে। বিগত সাড়ে ১৪ বছরে শিশু মৃতু্যর হার প্রতি হাজারে ২১ এবং মাতৃ মৃতু্যর হার প্রতি লাখে জীবিত জন্মে ১২৩-এ নেমে এসেছে।' দেশের আজকের এই সাফল্য অব্যাহত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দূরদর্শী নীতি-কৌশল গ্রহণের ফলে সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমরা উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।' শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজ তোমরা তোমাদের জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছ। অধ্যবসায়, শৃঙ্খলা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত এ সাফল্যের জন্য তোমরা গর্বিত হওয়ার যোগ্য। বিগত বছরগুলোতে শেখা জ্ঞান, সংস্কৃতি ও রীতিনীতি তোমাদের জীবনদর্শনে মিশে থাকবে এবং তা আগামী দিনগুলোতে বিশ্বায়নের যে কোনো পরিস্থিতির সঙ্গে অভিযোজনে তোমাদের সহায়তা করবে। আমি বিশ্বাস করি, এখানে তোমরা যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন তৈরি করেছ এবং এই অসাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছ- তা সামনের দিনগুলোতে তোমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তোমরা যে শিক্ষার মাধ্যমে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছ, তা দিয়ে তোমাদের সব স্বপ্ন এবং সেই সঙ্গে তোমাদের পিতামাতা ও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সফল হবে।' পয়লা জুন নতুন বাজেট দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হবে। আমাদের বাজেট ২০০৬ সালে মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা ছিল। আজকে সেই (গত অর্থবছর) বাজেট আমরা ৬ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত করেছি। যে কোনো উন্নয়নের জন্য দরকার একটি পরিকল্পনা- এমনটি উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সেটা আমাদের রয়েছে। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন থেকেই এই পরিকল্পনা করি। ২০০৭ সালে আমি যখন জেলে যাই সেই সময়টা নষ্ট করিনি। আমি লিখে রেখেছিলাম, সরকারে গেলে কী করব।' সমাবর্তনে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সফররত অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) মহাসচিব ও আইইউটির চ্যান্সেলর হিসেইন ব্রাহিম ত্বহা, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে