শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে ধনীদের ভর্তুকি প্রত্যাহার চায় সিপিবি

সরকারের অর্থনৈতিক দর্শন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে হওয়ার তাগিদ হ অর্থনীতিতেও একটি গভীর গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের দাবি
যাযাদি ডেস্ক
  ৩১ মে ২০২৩, ০০:০০
জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ বিষয়ে মঙ্গলবার রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) -যাযাদি

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট কাঠামো ধনী ও ব্যবসায়ীদের 'সুবিধা দেওয়ার জন্য' তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এ জন্য আইএমএফ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণবিরোধী শর্তাবলি ও চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে ধনীদের দেওয়া ভর্তুকি প্রত্যাহারসহ দুর্নীতি- বৈষম্যমুক্ত, গণতান্ত্রিক সমাজ গড়া ও সুশাসনের লক্ষ্য সামনে রেখে বাজেট প্রণয়নের দাবি জানায় দলটি।

মঙ্গলবার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডক্টর এম এম আকাশ, সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান ও এ এন রাশেদা।

আসন্ন নতুন অর্থবছরের বাজেটে ধনীদের দেওয়া ভর্তুকি প্রত্যাহার দাবি জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ বলেন, 'বাজেটের বর্তমান কাঠামোতে গরিব মানুষের কাছ থেকে কর নিয়ে ঋণ খেলাপিদের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। বিদু্যত কেন্দ্রে ভতুর্কি দেওয়া হচ্ছে 'রাজনৈতিক সিদ্ধন্তে', এটা বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, আইএমএফ ঋণ দেওয়ার সময়ে সামগ্রিকভাবে ভর্তুকি কমাতে বলেছে। তারা নির্দিষ্ট কোনো খাত বলে দেয়নি। ঋণ খেলাপিদেরও এখন ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ঋণ ও সুদ মাফ করা হচ্ছে। এটাও ঋণখেলাপিদের জন্য সরকারের ভর্তুকি। আমাদের দাবি হচ্ছে, ধনীদের যে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে।'

এমএম আকাশ বলেন, 'এক সময় জ্বালানি খাতের বিশ্বব্যাপী দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশেও বাড়ানো হলো। এখন দাম কমলেও দেশে দাম কমানো হয়নি। আগে আলোচনা ও গণশুনানির মাধ্যমে জ্বালানির দাম বাড়ানো হতো। বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শেই সেটা করা হতো। এখন জ্বালানির দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার 'রাজনৈতিকভাবে' নির্ধারণ করছে।'

তিনি বলেন, 'বাজেটের আকার বেড়ে গেলেও তা যাচ্ছে অবকাঠামো খাত ও আমলাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য। কিন্তু স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে সেভাবে যাচ্ছে না। সরকার বলছে, এসব খাতে খরচ করতে পারছে না মন্ত্রণালয়গুলো। মেগা প্রকল্পে খরচ করতে পারলেও মৌলিক খাতের স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় খরচ করতে না পারা সরকারের একটি ব্যর্থতা বলে মনে করি।'

তিনি বলেন, 'পাচার হওয়া টাকাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স আকারে আসছে। পাচার হওয়া টাকা ফেরাতেই আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এটার সুবিধাভোগী হচ্ছে সেই ধনী শ্রেণিই।'

সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বলেন, 'আমরা একটি গভীর গণতান্ত্রিক পরিবর্তন চাই। সেটি চাই অর্থনীতিতেও। নিম্ন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, আমরা চাই তা বাড়াতে। এজন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। গত কয়েক বছর ধরেই বিনিয়োগ জিডিপির তুলনায় ২৪ শতাংশে আটকে আছে। আমরা চাই রাষ্ট্র ও সমবায়ভিত্তিক পদক্ষেপ। কিন্তু সরকার এমনভাবে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, যেখানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ যুক্ত হচ্ছে, যার সুবিধা একটি ধনী শ্রেণিই পাচ্ছে। আর আমরা চাই এমন বিনিয়োগ উদ্যোগ যেখানে-সাধারণ মানুষের অন্তর্ভুক্তি বেশি থাকবে।'

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'নিম্ন প্রবৃদ্ধি, সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ কমে যাওয়া, আয় বৈষম্য বেড়ে যাওয়া, গণতন্ত্রহীনতা ও কর্তৃত্বপারয়ণতা ও বৈদেশিক চাপের মতো চালেঞ্জগুলো এখন অর্থনীতিতে রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে 'মৌলিক অর্থনৈতিক সংস্কার' প্রয়োজন বলে মনে করে সিপিবি।'

বাজেটের কাঠামো ও দর্শন 'ধনীদের কল্যাণের জন্য' অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'বাজেটের দর্শন সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে না। সংবিধানে রাষ্ট্রীয় খাত, সমবায় খাত ও আইন দ্বারা নির্ধারিত খাতে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে। সেখানে দর্শন হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য। কিন্তু সরকার মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেও অর্থনীতির মৌলিক ধারায় সেই দর্শন মানছে না।'

সিপিবি সভাপতি শাহ আলম বলেন, 'সরকারের অর্থনৈতিক দর্শন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে হতে হবে। বর্তমানে কোনো বিরোধী দল নেই। আমরাই বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করছি সরকারের অর্থনৈতিক দর্শন বদলানোর জন্য।"

লিখিত বক্তব্যে ১৪টি দাবি জানিয়ে বলা হয়- বৈষম্য হ্রাসের জন্য প্রগতিশীল প্রত্যক্ষ করনীতি ও প্রগতিশীল ভ্যাটনীতি চালু, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, প্রয়োজন অনুযায়ী ও বাস্তবায়ন ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেগুলো দুর্নীতিহীনভাবে বণ্টন করতে হবে। আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত, জনসাধারণের জন্য রেশন ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সুনিশ্চিত, কৃষকের জন্য ন্যায্য মূল্যে উপকরণ প্রদান, ক্ষুদ্র শিল্প ও কর্মসংস্থান খাত তৈরি, জাতীয় নূ্যনতম মজুরি নিশ্চিত, আমদানি নির্ভরতা ক্রমেই কমিয়ে আনার জন্য দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটানো, পাচারের টাকা, খেলাপি ঋণ উদ্ধারের বিশেষ ভূমিকা নেওয়া, বৃহৎ প্রকল্প সম্পর্কে মূল্যায়ন করে প্রকল্প গ্রহণ, সর্বত্র স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, জলদসু্য-ভূমিদসু্য-বনদসু্যদের শাস্তি বিধান, ঋণখেলাপি ও টাকা পাচারকারীদের শাস্তি, ঘুষ-দুর্নীতির উৎপাটন, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সমবায়ী উৎপাদক, ভোক্তা বাজারব্যবস্থা চালু করার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে