সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

হলের বারান্দায় শখের বাগান

আসিক আদনান, রাবি
  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ফুল ভালোবাসে না- এমন মানুষ নেহাত খুবই কম। প্রকৃতির ফুলে ভরা সৌন্দর্য প্রতিটি মানুষকেই কাছে টানে। মানুষ ভালোবাসে- প্রকৃতি, গাছপালা, ফুল-ফলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এর মধ্যে কিছু মানুষ নিজ হাতে সেই সৌন্দর্যের পসরা সাজান। তেমনই একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান। গাছ ভালোবেসে রুমের সামনে হলের বারান্দায় এক শখের বাগান গড়ে তুলেছেন তিনি।

আবিদ হাসানের এই শখের বাগানে রয়েছে ৭০ প্রজাতির গাছ।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্‌শ হলের দ্বিতীয় বস্নকের তৃতীয়

তলায় গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন জাতের ফুলের এই বাগান। ২০১৯ সাল থেকে তিনি গাছ সংগ্রহ করা শুরু করেন। প্রতিদিনই তার বাগানে বেড়ে চলেছে গাছের সংখ্যা।

আবিদের বাগানে সবুজের সমারোহ দেখে চোখ জুড়িয়ে

যায় শিক্ষার্থীদের। সবুজের স্নিগ্ধতায় ছেয়ে গেছে আবিদের

সাজানো ফুলের বাগান। বারান্দার চারপাশের বেলকনিতেও ঝুলছে লতাপাতা জাতীয় গুল্ম গাছপালা।

তার বাগানে রয়েছে ৬-৭ প্রজাতির ক্যাকটাস, মাদার অব থাউজ্যান্ড, কাটা মুকুট, লজ্জাবতী, মানি পস্নান্ট, ইঞ্চি পস্নান্ট, পার্পাল হার্ট, অ্যালোভেরা, তুলশী, নয়নতারা, বট গাছ,

পাথরকুচি, রজনীগন্ধা, পুত্তুলিকা, স্পাইডার পস্নান্ট, পিংক স্পাইডার, হার্ট অব জেসুস, এরো হেড পস্নান্ট, ড্রেসিনা (সর্প গাছ), জেব্রিনা পস্নান্ট, ট্রটেল, অপরাজিতা, জবা, গাঁদা, গোলাপ, বাগানবিলাসসহ নাম না জানা অনেক গাছ।

গাছের প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে আবিদ হাসান বলেন, 'গাছ লাগানো ছোটবেলা থেকেই আমার পছন্দ। প্রতিবারের বর্ষায় আমাদের বাড়িতে আব্বু অনেক বৃক্ষরোপণ করতেন। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে থাকতাম আমি আর আমার ছোট দুই ভাই। আমাদের বাড়িতে প্রায় ২৫-৩০ রকমের দেশি-বিদেশি ফলগাছ আছে। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে যখন হলে উঠি তখন থেকেই আমার রুমের সামনে ২-৩টা গাছের টব ছিল। একটা টবে অ্যালোভেরা আরেকটাতে মাদার অব থাউজ্যান্ড ছিল। শুরুতেই রুমের সামনে গাছ পেয়ে আমার খুবই ভালো লাগে এবং সেগুলোর নিয়মিত যত্ন নেওয়া শুরু করি।'

তিনি বলেন, 'গাছ আমার একাকিত্বের সবচেয়ে বড় বন্ধু। সারাদিন ক্লাস করে যখন রুমে ফিরতাম তখন নিজেকে খুব একা মনে হতো, বাগানটা যখন হয়ে গেল তখন আর সেটা মনে হয়নি। গাছগুলোর কাছে বসে গল্পের বই আর পত্রিকা পড়তে আমার দারুণ লাগে। চোখের সামনে যখন গাছগুলো বড় হয়, বিশেষ করে ফুলগাছে যখন ফুল আসে হৃদয়ের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে যায় সেই আনন্দ।'

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ২টি গাছের যত্ন করতে গিয়ে মনে হলো আরও গাছ লাগানো যেতে পারে। তখন থেকেই রুমের সামনে গাছ লাগানোর চিন্তা করতে থাকি। কিন্তু কীভাবে গাছ সংগ্রহ করব? টব কেনা, মাটি সংগ্রহ এবং গাছ কিনতে হলেও টাকার প্রয়োজন। একদিন একজনের রুমের সামনে দেখলাম পস্নাস্টিকের পরিত্যক্ত বালতিতে গাছ লাগানো। তখন থেকেই মনে হলো আমিও শুরু করতে পারি। সব সীমাবদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে আমি আমার শখের কাজটি করতে থাকি- জানান আবিদ।

তিনি বলেন, 'বাগান করতে আমাকে বেশি সহায়তা করেছেন আমাদের হলের মালি কালাম ভাই এবং জব্বার ভাই। গাছে পরিচর্যার জন্য তারা আমাকে গোবর, সার, মাটিসহ অনেক নতুন জাতের চারাগাছ দিলেন। কিছু গাছ একাডেমিক ভবনের মালিদের কাছ থেকেও সংগ্রহ করেছি। এছাড়াও বন্ধু, ছোট-বড় ভাইরাও অনুপ্রাণিত করেছে। বর্তমানে প্রায় ৭০ প্রজাতির শতাধিক গাছ রয়েছে আমার বাগানে।'

গাছের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে আবিদ বলেন, 'খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গাছে পানি দিয়ে আমার দিন শুরু হয়। অবসরেই গাছের যত্ন নিতে পারি, এতে আমার কাজের ক্ষতি হয় না। গাছগুলোর সঙ্গে সময় কাটানোটাই আমার সবচেয়ে পছন্দের কাজ।'

তিনি সবার উদ্দেশে বলেন, 'বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা এবং অনেক প্রাণীকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করে জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে পারি। আমাদের সবার উচিত নিজে বৃক্ষরোপণ করা এবং আশপাশের সবাইকে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করা।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে