রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
জলবায়ু পরিবর্তন

খাদ্য উৎপাদন ব্যাহতের শঙ্কা

গত বছরের তুলনায় বৃষ্টিপাত নেমেছে অর্ধেকে কমবে বৃষ্টিপাত, বাড়বে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি অনুযায়ী বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ
রেজা মাহমুদ
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চলতি বছর দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম হয়েছে। এছাড়াও বেড়েছে তাপপ্রবাহের মাত্রা, যা আগামী বছর আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে জলাশয়ে পানির পরিমাণ হ্রাসসহ খরার মৌসুম আরও দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। এর ফলে মাছসহ সব ধরনের খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হবে বলে মনে করেন তারা।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টিপাত অর্ধেক হয়েছে। যা আগামী বছরেও অব্যাহত থাকতে পারে। একইভাবে বাড়তে পারে তাপপ্রবাহের তীব্রতা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যায়যায়দিনকে বলেন, বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ে তাপপ্রবাহ হয়। কিন্তু এবার এর ধরন কিছুটা ভিন্ন। কারণ এর বিস্তৃতি ও তীব্রতা অনেক বেড়েছে।

বিগত বছরের সঙ্গে চলতি বছরের আবহাওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আগে মাসে ৫ থেকে ৭ দিন কয়েকটি জেলার উপর তাপপ্রবাহ থাকলেও এবার তা বিস্তৃত হয়েছে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গাজুড়ে। অর্থাৎ একই সঙ্গে তাপপ্রবাহ দেশের প্রায় সব বিভাগেই বিরাজ করেছে। এছাড়াও বেড়েছে এর সময়কালও, দু-এক দিনের পরিবর্তে গত মে, জুন ও জুলাই মাসে গড়ে প্রায় ২০ দিনের বেশি তাপপ্রবাহ হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, এর প্রভাবে খরার মাত্রা আরও বেড়েছে। ফলে কমেছে জলাশয়ে পানির পরিমাণ। অন্যদিকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের জলাশয় পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া ডেটা পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে আগামী বছরও এ প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে দেশের বিভিন্ন জেলার ভূমির শুষ্কতা আরও বাড়বে।

এর প্রভাবে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাহত হবে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া। আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত ও তাপপ্রবাহের তীব্রতা বেশি ছিল। ফলে এসব অঞ্চলে মাছ ও ফসলের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে পানির লেভেল নিচে নেমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছের উৎপাদন। ফলে চাষিদের পানি সেচের পরিমাণ বেড়েছে তবু কমেছে উৎপাদন। যা বাড়িয়ে দিয়েছে সামগ্রিক ব্যয়।

একইভাবে যথাসময়ে ধান রোপণ করতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর আমন ধানের উৎপাদন কমার শঙ্কা রয়েছে। তবে ভিন্ন ঘটনা ঘটেছে হাওড় অঞ্চলে। প্রতি বছর বৃষ্টির কারণে এসব অঞ্চল পানিতে ডুবে থাকে। কিন্তু কম বৃষ্টিপাতের

ফলে এবার তা হয়নি। এতে এ অঞ্চলে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বেড়েছে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ফসল উৎপাদনও হ্রাস পেতে পারে। সম্প্রতি ভারত চালসহ প্রধান বেশকয়েকটি কৃষিপণ্য রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। সে দেশের গণমাধ্যমের তথ্যানুয়ায়ী বৈরী আবহাওয়া ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সাময়িকভাবে চাল, গম ও চিনি রপ্তানি বন্ধ এবং পেঁয়াজে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে আগমী মৌসুমে সংকট আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের খাদ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ আমদানি ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প চিন্তা করতে হবে।

বাংলাদেশে ধান গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর আবু সাইদ বলেন, বৃষ্টিপাত কম হলে যথা সময়ে আবাদ করা না গেলে স্বাভাবিকভাবেই ফলন কমে যায়। তবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত অনেক জাত রয়েছে যেগুলো দেরিতে চাষ করা যায়। যেমন বিআর ২২ ও বিআর ২৩-সহ বিরি ধান ৪৬ যা আবাদ করে সফলতা পেয়েছে হাওড় অঞ্চলের কৃষকরা।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ুজনিত সমস্যার কারণে পরিস্থিতি অনুযায়ী বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে আগামী বছর এ খাতে সংকট সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে