রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধন

রংপুর ও পঞ্চগড় প্রতিনিধি
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

উত্তরাঞ্চলের মানুষ সৌভাগ্যবান মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, 'মাত্র ২০ বছরের মাথায় পঞ্চগড়ে চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধন করতে পারলাম। কিন্তু যারা মাথার ঘাম ঝরিয়ে চা উৎপাদন করল তারা উপযুক্ত দামে কাঁচা চা-পাতা বিক্রি করতে না পারে তাহলে এই অকশন সেন্টার মূল্যহীন।'

শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলার সরকারি মিলনায়তনে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এই নিলাম

কেন্দ্রের উদ্বোধন করের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, 'দেশের মোট চা উৎপাদনের ৬৫ ভাগই উৎপাদিত হয় সিলেট অঞ্চলে। সেখানে চায়ের নিলাম মার্কেট করতে সময় লেগেছে একশ' বছর। আমরা উত্তরাঞ্চলের মানুষ সৌভাগ্যবান যে, মাত্র ২০ বছরের মাথায় সেটি আজ করতে পারলাম।'

তিনি বলেন, 'আমি চা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ পঞ্চগড়ের ডিসিকে বলেছিলাম কেন চা চাষিরা কাঁচা চা-পাতার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। ডিসি সাহেব বললেন প্রতি কেজি ১৮ টাকা দর কারখানাগুলো মানে না। তারা ১৩-১৪ টাকার বেশি দরে পাতা কিনছে না। চা চাষিরা যদি পাতার ন্যায্যমূল্য না পায় তাহলে এক সময় চা চাষ বন্ধ হয়ে যাবে। সে কারণে অকশন সেন্টারের পাশাপাশি নির্ধারিত মূল্যে কারখানাগুলো যাতে পাতা কেনে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

চা চাষিদের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, 'কাঁচা চা-পাতার ন্যায্যমূল্য পেতে হলে সঠিকভাবে পাতা চয়ন করতে হবে। বড় আকারের ডালপালাসহ পাতা কারখানায় দিলে চায়ের মান খারাপ হয়ে যায়। অকশনে মার্কেটে চায়ের দাম কম পাওয়া যায়। এ জন্য মেশিন দিয়ে পাতা উত্তোলন করতে হবে। এতে করে সঠিকভাবে চা পাতা চয়ন করা যাবে। তবে একেকটি মেশিনের দাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে চা চাষিদের বিনামূল্যে মেশিন দেব। এসব মেশিনের দেখাদেখি অন্য চা চাষিরাও উদ্বুদ্ধ হবেন।'

দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে সমতলে চা চাষ করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এগিয়ে থাকা পঞ্চগড়বাসী নতুন এই নিলাম কেন্দ্র পেয়ে আনন্দিত। তারা 'সমতলে চায়ের ভুবন -পঞ্চগড়ে স্বাগতম' সেস্নাগানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে অতিথিদের স্বাগত জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন, পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজহারুল হক প্রধান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান, পঞ্চগড়ের সাবেক জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান শেখ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয় সরকার। বহুল কাঙ্ক্ষিত চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় চাষিরা তাদের উৎপাদিত চা পাতার ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে আশা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের জাঁতাকলে তারা চা-পাতার দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করে আসছেন।

চায়ের নিলাম কেন্দ্র ঘিরে চা শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে। গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ব্রোকার ও ওয়্যার হাউজ। ইতোমধ্যে ১০টি ব্রোকার হাউজের মধ্যে ৫টিকে এবং আটটি ওয়্যার হাউজের মধ্যে ২টিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনলাইন অ্যাপস তৈরিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।

চা সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের তৃতীয় এই চা নিলাম কেন্দ্রর চালুর মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চলের চা শিল্পের আরও উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনীতির সমৃদ্ধি ঘটবে। দীর্ঘদিন ধরে সমতলের চা চাষিদের মধ্যে তাদের উৎপাদিত চা পাতার দাম না পাওয়ায় যে হতাশা তৈরি হয়েছে তা নিরসন ঘটবে। পাশাপাশি চায়ের পরিবহণ খরচ কমে যাবে। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। ক্ষুদ্র চা চাষিরা নিলাম কেন্দ্রে চায়ের উন্মুক্ত কেনাবেচায় চায়ের কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্যও পাবেন। এতে গোটা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে কুন্ডুদের বাগানের মধ্য দিয়ে দেশে প্রথম চায়ের চাষাবাদ শুরু হয়। সে সময় সফলতা না পাওয়ায় তার ১৩ বছর পর ১৯৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। এরপর প্রায় দেড় বছর পর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। এক সময়ের পতিত অনাবাদি জমি ও অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে প্রান্তিক চাষিরা ঝুঁকে পড়েন সমতলে চা আবাদে। দুই দশকে এ জেলার প্রায় ১২ হাজার ৭৯ একর জমিতে গড়ে ওঠে ছোট বড় আট হাজারের বেশি চা বাগান। পঞ্চগড় জেলার ২৪টি কারখানায় চলতি অর্থবছরে (২০২৩ ও ২০২৪) ২ কোটি কেজি চা উৎপাদনের আশা করছে চা বোর্ড। তবে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৮০ লাখ ২৮ হাজার ৮৫০ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে