সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাট বিক্রিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের

বাজারে দাম নিম্নমুখী
গোলাম মোস্তফা, মেহেরপুর
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

মেহেরপুরের বাজারে পাটের দাম নিম্নমুখী। একদিকে অনাবৃষ্টির কারণে ফলন বিপর্যয়, অন্যদিকে পানি সংকট মোকাবিলায় পুকুর ও গর্তে শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি জমিয়ে পাট জাগ দিতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। এখন উৎপাদিত পাট বাজারে বিক্রি করে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না চাষিরা। এতে চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।

বিগত বছরগুলোতে মিলারদের পাট কিনতে দেরি হওয়ায় হতাশায় পড়েছিলেন জেলার অনেক চাষি ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা। ওই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মৌসুমের শুরুতে কম দামে পাট কিনে গুদাম ভর্তি করেন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। মৌসুমের শেষ দিকে পাটের দাম বেড়ে যায়। তখন ১৮শ' টাকা থেকে ১৯শ' টাকা দরে পাট কিনে ২ হাজার ২শ' টাকা থেকে ২ হাজার ৩শ' টাকা মণ দরে বিক্রি করে মুনাফা ঘরে তোলে মধ্যস্বত্বভোগী এসব ব্যবসায়ী। কিন্তু এ বছর পাটের অব্যাহত দরপতনে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চাষিরাও পাট চাষ করে পুঁজি হারিয়ে ফেলছেন।

এ বছর শুকনো পাট রং ভালো হলে ১ হাজার ৩শ' টাকা থেকে ১ হাজার ৫শ' টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর একই মানের পাট ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ২শ' টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পেরেছিলেন চাষিরা। ফলে এ বছর নতুন পাট বিক্রি নিয়ে চরম লোকসানের মুখে পড়া চাষিরা আমন চাষের জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এত জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ারও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় ২১ হাজার ৭শ' হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় দেড় হাজার হেক্টর বেশি। এ বছর বেশি জমিতে পাট চাষ করেও উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না তারা। পাট চাষিদের ভাষ্য, পাটের দাম আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা মণ হলে কৃষক লাভবান হতো।

সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক আরশাদ আলী জানান, পাট চাষে এবার লেবার, কীটনাশক, পাট পরিবহণ, জাগ দেওয়া ও চিকানোতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১৭-১৮ হাজার টাকা। ভালো পাট হলে প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ মণ পাট উৎপাদন হয়। এ বছর পাট হচ্ছে বিঘাপ্রতি ৭ থেকে ৮ মণ। প্রতি মণ পাট ১ হাজার ৫শ' টাকা করে বিক্রি করলে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা ঘরে আসছে। ফলে উৎপাদন খরচই উঠছে না।

মেহেরপুর থেকে পাট কিনে খুলনা জুট মিলে বিক্রয়কারী ব্যবসায়ী তানজেল হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশে অন্তত ২শ' পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান (শিপার, জুট এক্সপোর্টার) আছে। যার মধ্যে খুলনায় কমপক্ষে ১৫০ প্রতিষ্ঠান ও সারা বাংলাদেশে আরও ৫০ প্রতিষ্ঠান মিলে ২শ' বা তার কিছু বেশি প্রতিষ্ঠান পাট রপ্তানি (শিপমেন্ট) করে থাকে। আমরা লাভের আশায় পাট কিনে থাকি। মিলাররা সঠিক সময়ে পাট কিনলে ও টাকা পরিশোধ করলে কৃষকরা লাভবান হন। আমাদের টাকা মিলে আটকে গেলে লোকসান হলে আর পাট কিনতে পারি না। তখন স্থানীয় গোডাউন ব্যবসায়ীরা পাট মজুত করে সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। তবে এ বছর সব ব্যবসায়ী পুঁজি হারা অবস্থায় আছেন।'

জেলা পাট কর্মকর্তা শাহিন আলম বলেন, 'পাট মন্ত্রণালয়ের সবশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, ১৭টি কৃষিপণ্য ২০ কেজি বা তার বেশি ওজনের ব্যাগে বহন করতে হলে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসব পণ্যের মধ্যে বাজারে চাল ও আলু ছাড়া অন্য পণ্যের ক্ষেত্রে পস্নাস্টিক বস্তার ব্যবহার কমেনি। এ বিষয়ে জেলায় কোনো মনিটরিং নেই। ফলে আটা, ময়দা, চিনি, ডালসহ অনেক পণ্যের মোড়ক হিসেবে পস্নাস্টিকের বস্তা ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এ বছর আমরা পাট পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে প্রশাসনের সহায়তা নেব। সেইসঙ্গে কৃষকরা যেন পাটের ন্যায্য মূল্য পায় সে বিষয়ে সরকারের দেওয়া নির্দেশনা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করব।'

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সামছুল আলম বলেন, 'কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী বিগত বছরগুলোর তুলনায় ক্রমান্বয়ে পাটের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থকরী ফসল হিসাবে কৃষকদের পাট চাষ জরুরি। কেননা পাট বিক্রি করে যে নগদ অর্থ ঘরে আসে তাই দিয়ে চাষিরা ধান, গম, সবজিসহ নানান ধরনের ফসল ফলান। বর্তমানে পাটের দাম কমে যাওয়ায় পাট শুকিয়ে ঘরে রেখে পরবর্তীতে বিক্রি করার পরামর্শ দেন তিনি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে