রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
গণসাক্ষরতার সমীক্ষা

অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী 'টিউটর-কোচিং'নির্ভর

ফেল করা ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর মায়ের নেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা
যাযাদি ডেস্ক
  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে 'এডুকেশন ওয়াচ-২০২২' শীর্ষক সমীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিথিরা -সংগৃহীত

বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের উইং এডুকেশন ওয়াচ জানিয়েছে, মাধ্যমিক স্তরের অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৮৫ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী 'প্রাইভেট টিউটর' বা 'কোচিং'-এর ওপর নির্ভর। করোনা পরবর্তী ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে 'এডুকেশন ওয়াচ-২০২২' শীর্ষক সমীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাইভেট টিউটর বা কোচিংয়ে নির্ভরতার চিত্র শহর ও গ্রামাঞ্চলসহ সব ক্লাস্টারে একইরকম দেখা গেছে। অভিভাবকদের তথ্য অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণির প্রায় ৬৪ শতাংশ এবং নবম শ্রেণির ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটরিংয়ের জন্য প্রতি মাসে ১ হাজার ১০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছে।

প্রাইভেট টিউটর ও কোচিং নির্ভরতা ছাড়াও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের

পাঠ ও পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য গাইড বইয়ের অনুসরণের চিত্রও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২২ সালে শ্রেণি পাঠ এবং পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রাথমিক ৭৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাণিজ্যিক গাইড বই অনুসরণ করেছে। গেল বছরের প্রথম ৯ মাসে গাইড বই সংগ্রহে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর গড়ে ৬৬৯ টাকা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ২ হাজার ৬৫ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে বলেও অভিভাবকরা জানিয়েছেন।

তবে এই বছর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এবং খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকার একটি ইতিবাচক চিত্র লক্ষ্য করা গেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। এ বিষয়ে স্কুলের পারফরম্যান্সের ব্যাপারে অভিভাবকরা সন্তুষ্ট ছিলেন। সমীক্ষার সব ক্লাস্টারে একই রকম চিত্র পাওয়া গেছে উলেস্নখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তবে তাদের সন্তুষ্টি থেকে অবশ্যই এটা বোঝা যায় না, স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত শিখনফল অর্জনে সহায়তা করতে সক্ষম হয়েছে। কারণ শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট কোচিং এবং বাণিজ্যিক গাইড বইয়ের ওপর অধিক নির্ভরতাও লক্ষ্য করা গেছে।

৩৪ শতাংশের মায়ের নেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা

এদিকে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মায়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সন্তানের পড়ালেখা ও পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। যেসব মা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেয়েছেন, তাদের সন্তানের চেয়ে শিক্ষা না পাওয়া মায়ের সন্তানদের ফেল করার হারও বেশি। ফেল করা শিক্ষার্থীর ৩৪ শতাংশের মায়েরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। শিক্ষিত নন- এমন মায়েদের ৮ দশমিক ২ শতাংশ সন্তান সবচেয়ে খারাপ ফল বলে বিবেচিত 'ডি' গ্রেড (৩৩-৩৯ নম্বর) পেয়েছে। অর্থাৎ খারাপ ফল করা ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থীর মায়েরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।

গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে কম ১৬ দশমিক ১ শতাংশ ফেল করা শিক্ষার্থীর মা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন। এ শ্রেণির মায়েদের সন্তানের জিপিএ-৫ পাওয়ার হারও বেশি, যা ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া জিপিএ-৪ (এ গ্রেড) পেয়েছে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।

প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করা মায়েদের সন্তানদের ফেলের হার ৯ দশমিক ৬ শতাংশ, মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করা মায়ের সন্তানদের মধ্যে ফেলের হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ১৯ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থীর মায়ের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। ২২ শতাংশ মা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছেন। সবচেয়ে বেশি ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ মা মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। আর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মা।

প্রেস ব্রিফিংয়ে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী, গবেষণা দলের পক্ষ থেকে এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ডক্টর কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউটের গবেষক ও অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহাদাৎ হোসেন, এডুকেশন ওয়াচের সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ এবং এডুকেশন ওয়াচের উপরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে