রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চোর ধরার পর খুলল প্রকৌশলী হত্যার জট

দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি
যাযাদি রিপোর্ট
  ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

চোর ধরার পর প্রকৌশলী হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। গ্রেপ্তার চোর আদালতে প্রকৌশলীকে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। সামান্য একটি মোটর সাইকেল চুরির জন্য ওই প্রকৌশলীকে হত্যা করেছে বলে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে আলোচিত সেই চোর। তার বিরুদ্ধে সাড়ে তিন ডজন মামলা রয়েছে বলেও জানিয়েছে সে। অবশেষে সেই চোরের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ১১টি চোরাই গাড়ি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে যায়যায়দিনকে বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার তুরাগ থানাধীন বেডিবাঁধ এলাকা থেকে রফিকুল ইসলাম নামে এক চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার তথ্য মতে ১টি চোরাই মাইক্রোবাস, ৫টি চোরাই গাড়ি, ৫টি মোটর সাইকেল ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল জানায়, উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোনটি একজন ইঞ্জিনিয়ারের। ইঞ্জিনিয়ারকে হত্যা করে মোটর সাইকেল চুরির সময় তার মোবাইল ফোনটিও চুরি করা হয়েছিল। রফিকুলের বিরুদ্ধে ৪২টি অর্থাৎ সাড়ে তিন ডজন চুরির মামলা আছে। ইঞ্জিনিয়ার হত্যাকান্ডের সঙ্গে রফিকুল ছাড়াও ডিবির হাতে ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া রানা শেখও জড়িত।

ডিসি মশিউর রহমান বলছেন, এমন তথ্যের পর নতুন করে রানার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, চলতি বছরের ১০ ফেব্রম্নয়ারি রানা শেখকে ৯টি মোটর সাইকেলসহ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রানা রিমান্ডে থাকা রফিকুলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। রানা শেখ ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারকের কাছে ইঞ্জিনিয়ার হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রানা শেখের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৯টি মোটর সাইকেলের একটি প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিনের।

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিন মিরপুরের বাসা থেকে নিজের কালো রঙের বাজাজ ডিসকভার মোটর সাইকেল নিয়ে অফিসে যান। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ডিউটি শেষে বিকাল ৩টার দিকে মোটর সাইকেল নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন।

রাত ১১টার দিকে ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানাধীন ৬ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত নষ্ট্রাম হাসপাতাল থেকে গিয়াস উদ্দিনের বাসায় ফোন করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গিয়াস উদ্দিনকে অচেতন অবস্থায় কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে চলে গেছেন। পরে গিয়াস উদ্দিনকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রাতে গিয়াস উদ্দিন মারা যান। মৃতু্যর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা যে প্রতিবেদন দেন তাতে বলা হয় রাস্তায় বিষাক্ত কোনো কিছু পানের কারণে তার মৃতু্য হয়েছে।

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ঘটনার দিন গিয়াস উদ্দিনের মোটর সাইকেল চুরি করতে পিছু নিয়েছিল রফিকুল ও রানা। গিয়াস উদ্দিন বাড়তি রোজগারের আশায় বাসায় ফেরার সময় পাঠাও চালাতেন। কাউকে মিরপুর পর্যন্ত নিতে পারলে বেশ টাকা পেতেন। প্রায়ই তিনি এ কাজ করতেন। দুই চোর সেই সুযোগটিকেই কাজে লাগায়। তারা উত্তরা যাওয়ার কথা বলে গিয়াস উদ্দিনের মোটর সাইকেল ভাড়া করে। মোটর সাইকেলে চড়ে রফিকুল। রাস্তার এক জায়গায় কৌশলে রফিকুল গিয়াস উদ্দিনকে চা পান করায়। চায়ের সঙ্গে ৭টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে দেয়। একপর্যায়ে বেসামাল হয়ে পড়েন গিয়াস উদ্দিন। পরে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

পুলিশ কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, এমন সুযোগে রফিকুল ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিনের মোবাইল ফোন, কিছু নগদ টাকা ও মোটর সাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন রানা শেখ। তারা চোরাই জিনিস নিয়ে রাখে বংশাল এলাকায়। এসব চোরাই মোটর সাইকেল তারা মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও নড়াইলে বিক্রি করে দিত। রফিকুল কুখ্যাত সিএনজি চোর মুসলিমের শিষ্য। মুসলিমের হাত ধরে রফিকুল খাবারের সঙ্গে কৌশলে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অনেক গাড়ি চুরি করেছে। তিন দিনের রিমান্ডে থাকা রফিকুল রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিন হত্যার দায় স্বীকারসহ অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে