শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
টেকেরহাট-ঘোনাপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক

ঢিমেতালে নির্মাণকাজ ভোগান্তি এলাকাবাসীর

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
ঢিমেতালে নির্মাণকাজ ভোগান্তি এলাকাবাসীর

ঠিকাদারের গাফিলতি আর ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ কাজ চলছে ব্যাপক ঢিমেতালে। ৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আঞ্চলিক মহাসড়কের অধিকাংশ স্থানে ভেঙে ফেলে রাখায় সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। ধুলাবালিতে অন্ধকার হয়ে থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ সড়কে চলাচলরত যানবাহন চালক ও যাত্রী সাধারণ। সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে ভূমি মালিক, অবৈধ স্থাপনা মালিকদের বাধা সৃষ্টি করা ও শহর অংশে পিডিবি বৈদু্যতিক পিলার অপসারণ না করায় ?নির্মাণ কাজ দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে আগামী জুন মাসের নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়ক তৈরির আগে গোপালগঞ্জের টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া সড়কটি ছিল ঢাকা, খুলনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম যাতায়াতের জন্য যাত্রী সাধারণের একমাত্র সড়ক। তখন সড়কটি আঞ্চলিক সড়ক ছিল। এই ৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আঞ্চলিক সড়কটি এখন আঞ্চলিক মহাসড়কে রূপান্তর করে ৩৪ ফুট চওড়া করার কাজ চলছে। রাস্তার বিভিন্ন স্থান ভেঙে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় সেখানে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। নির্মাণাধীন রাস্তার কাজের ধীরগতি থাকায় খানাখন্দে আর ধুলাবালিতে সড়কে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি এখন চরমে পৌঁছেছে।

গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, ২০২০ সালের জুনে ৬১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সড়ক আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীতকরণের জন্য অনুমোদন দেয় একনেক। কিন্তু দরপত্র আহ্বানসহ নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয় এবং দুই বার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। সড়কটির বর্তমান প্রশস্থতা ধরা হয়েছে ৩৪ ফুট। ছয়টি গ্রম্নপে কাজটি শুরু হলেও ঢিলেঢালাভাবে সড়কের কাজ করছে তিন, চার, পাঁচ ও ছয় নম্বর গ্রম্নপের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া সড়কের ভেন্নাবাড়ি, চামটা, জলিরপাড় ও হরিদাসপুর এলাকায় জমির মালিকানা দাবি করে বাধার সৃষ্টি করায় ওইসব স্থানে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ডিজাইন না পাওয়ায় বন্ধ রয়েছে সড়কটির বানিয়ারচর অংশের কাজও। এসব জটিলতার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো ওইসব স্থানে কাজ বন্ধ রেখেছে। ফলে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ আর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবহণ চালক ও সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা। প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা। বিশেষ করে রোগীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।

সড়কে চলাচলকারী যান চালক মো. জিবরাঈল মীনা, আবুল কালাম মোলস্না, মো. বিলস্নাল মোলস্না জানায়, গোপালগঞ্জ থেকে টেকেরহাট যেতে যেখানে সময় লাগার কথা এক ঘণ্টা সেখানে সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এছাড়া যাত্রী ও পণ্য পরিবহণে বেগ পেতে হচ্ছে ভ্যান, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চালকদের। এই সড়কে চলাচলে প্রায়ই নষ্ট হচ্ছে তাদের যানবাহন। সঠিক সময়ে রোগী নিয়েও হাসপাতলে যাওয়া যাচ্ছে না।

সড়ক সম্প্রসারণে ব্যবহৃত জমির মালিক বোরহান উদ্দিন মিয়া, লিপি বিশ্বাস, ফুল মিয়া বলেন, আমাদের জমি রাস্তার উন্নয়ন কাজে লাগলে আমরা ছেড়ে দেব, সড়কের উন্নয় আমরাও চাই। কিন্তু আমরা চাই সরকার আমাদের জমি অধিগ্রহণ করে বা অধিগ্রহণের নিশ্চয়তা দিয়ে কাজ করুক।

সড়কটির ৩নং প্যাকেজের ঠিকাদারের প্রজেক্ট ম্যানেজার আব্দুর রউফ বলেন কাজের যথাযথ মান বজায় রেখে আমরা দ্রম্নত গতিতে কাজ করছি। গেল বর্ষায় ভারী বর্ষণের কারণে কাজের গতি ঠিক রাথা সম্ভব হয়নি। জুন ২০২৪ কাজের মেয়াদ থাকলেও আমরা আশা করছি, রাস্তার কাজ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই শেষ করতে পারব।

গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানের কাজের গতি সন্তোষজনক। ইতোমধ্যে টেকেরহাট-হরিদাশপুর-ঘোনাপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে কাজ শুরু করতে দেরি এবং বেশ কয়েকটি স্থানে ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় কাজ থেমে ছিল। তবে বর্তমানে যে গতিতে কাজ চলছে তাতে আগামী জুনের মধ্যেই রাস্তাটির কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে জানালেন এই কর্মকর্তা।

প্রকলপটির ৪, ৫, ৬নং প্যাকেজের কাজের যে গতি তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে কিনা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনগণ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে